বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ কী
বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণ কী

সূর্যতাপে সাগর , মহাসাগর , নদী , খাল , বিল , পুকুর প্রভৃতি থেকে সর্বদাই জল বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায় । তাই যে-কোনাে বায়ুতেই কিছু না কিছু জলীয় বাষ্প থাকে ।
জলীয় বাষ্প হালকা বলে ওপরে উঠে যায় । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যতই ওপরে ওঠে , তার আয়তন বাড়ে , চাপ কমে ও উষ্ণতা হ্রাস পায় । এর ফলে ওই বায়ু পরিপৃক্ত হয় এবং শেষে ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা বা মেঘ সৃষ্টি করে । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পরিপৃক্ত হলে মেঘ সৃষ্টি হয় , কারণ — যেকোনাে বায়ুরই জলীয় বাষ্প ধারণ করার একটি নির্দিষ্ট ক্ষমতা আছে । উষ্ণ বায়ু অধিক জলীয় বাষ্প ধারণ করে এবং উষ্ণতা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতাও কমে যায় । অর্থাৎ নির্দিষ্ট উষ্ণতায় বায়ু নির্দিষ্ট পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে । যখন কোনাে জায়গার বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ওই নির্দিষ্ট পরিমাপের শেষ সীমায় পৌঁছােয় , তখন একে বায়ুর পরিপৃক্ত অবস্থা বলে । পরিপৃক্ত বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয় এবং বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা , কয়লার কণা প্রভৃতিকে আশ্রয় করে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়ে মেঘ , হিসাবে ভেসে বেড়ায় ।
মেঘের মধ্যে ভাসমান জলকণা সমূহ ছােটো বড়াে নানা আকারের হয় । ভাসমান অবস্থায় বড়াে কণার সঙ্গে ছােটো কণার ধাক্কা লাগলে বড়াে কণা ছােটো কণাকে গ্রাস করে ।
এইভাবে বড়াে কণাগুলি আরও বড়ো হয় এবং ভারী হয়ে নীচের দিকে পড়তে থাকে । পড়ন্ত অবস্থাতেও এগুলি ছােটো কণাকে গ্রাস করে আরও বড়াে ও ভারী হয়ে বৃষ্টির ফোঁটার আকারে মাটিতে পড়ে । সাধারণত ক্রান্তীয় অঞ্চলে এইভাবেই বেশি বৃষ্টিপাত হয় ।
বিখ্যাত আবহবিজ্ঞানী বার্জারনের মতে , নাতিশীতােষ্ণ অঞ্চলে মেঘের মধ্যে দুটি অংশ থাকে । ওপরের অংশে থাকে অতি ক্ষুদ্র বরফকণা এবং এর পাশাপাশি থাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অতি শীতল জলকণা । তবে এই জলকণাগুলির স্থায়িত্ব খুবই কম , কারণ এগুলি দ্রুত বরফকণাগুলির সঙ্গে মিলে যায় । এর ফলে বরফকণাগুলি ক্রমশ বড়াে ও ভারী হয়ে নীচের দিকে পড়ে । নীচের দিকে তাপমাত্রা যদি হিমাঙ্কের নীচে থাকে তাহলে বরফকণা থেকে তুষারপাত হয় । নীচের দিকে তাপমাত্রা বেশি থাকলে বরফকণাগুলি গলে যায় এবং এ থেকে বৃষ্টিপাত আরম্ভ হয় ।