ভূগোল

বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ

Contents

বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ

images 3
বায়ুর উষ্ণতার তারতম্যের কারণ

উষ্ণ ভূপৃষ্ঠের মাধ্যমে বায়ু প্রধানত উষ্ণ হলেও ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুর উষ্ণতায় অনেক পার্থক্য দেখা যায় । বিভিন্ন কারণে বায়ুর উষ্ণতার এই তারতম্য ঘটে । যথা— ( ১ ) অক্ষাংশ , ( ২ ) দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য , ( ৩ ) পর্বতের অবস্থান , ( ৪ ) ভূমির উচ্চতা , ( ৫ ) ভূমির ঢাল , ( ৬ ) সমুদ্র থেকে দূরত্ব , ( ৭ ) সমুদ্রস্রোত , ( ৮ ) বায়ুপ্রবাহ , ( ৯ ) মেঘের আবরণ , ( ১০ ) অরণ্য প্রভৃতি ।

অক্ষাংশ 

অক্ষাংশ অনুসারে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে সূর্যরশ্মির পতন কোণে তারতম্য ঘটে , ফলে উষ্ণতারও পার্থক্য হয় । নিরক্ষরেখা থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তীর্যকভাবে পড়ে । লম্বভাবে পতিত সূর্যরশ্মির তীর্যকভাবে পতিত সূর্যরশ্মিতে উত্তাপের পরিমাণ কম হয় , কারণ— ( i ) তীর্যক রশ্মিকে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে অধিক দূরত্ব অতিক্রম করতে হয় এবং ( ii ) তীর্যক রশ্মি বেশি জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে । 

সুতরাং নিরক্ষরেখা থেকে উত্তর ও দক্ষিণে তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকে । এজন্য অক্ষাংশের সাহায্যে ভূপৃষ্ঠকে তিনটি প্রধান তাপমন্ডলে ভাগ করা যায়- ( i ) নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 23½° , পর্যন্ত উষ্ণমন্ডল , ( ii ) 23½° থেকে 66½° , নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল এবং ( iii ) 66½° থেকে 90° পর্যন্ত হিমমন্ডল । এইভাবে অক্ষাংশের সঙ্গে বায়ুর উষ্ণতার বিশেষ সম্পর্ক লক্ষ করা যায় । 

দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য

দিন রাত্রির দৈর্ঘ্যের হ্রাস বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উষ্ণতার তারতম্য হয় । কারণ , যদি দিন বড়াে ও রাত্রি ছােটো হয় , তাহলে দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠে যে পরিমাণ তাপ সঞ্চিত হয় , রাত্রি ছােটো হওয়ায় তার সবটাই বিকীর্ণ হতে পারে না , কিছুটা সঞ্চিত থেকে যায় । কিছুদিন এক জায়গায় এরকম চললে জায়গাটি স্বাভাবিক ভাবেই উষ্ণ হয়ে যায় । আবার , দিন ছােটো এবং রাত্রি বড়াে হলে সঞ্চিত তাপের সবটাই বিকীর্ণ হয় , ফলে কিছুদিন পরেই ওই জায়গায় শীত অনুভূত হয় । 

পর্বতের অবস্থান 

উষ্ণ বা শীতল বায়ুর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনাে পর্বতশ্রেণী বিস্তৃত থাকলে বায়ুপ্রবাহ ওই পর্বতশ্রেণীতে বাধা পায় । ফলে পর্বতশ্রেণীর দু-দিকের উষ্ণতার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায় । উদাহরণ — শীতকালে শুষ্ক ও শীতল উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু মধ্য-এশিয়ার বরফাবৃত অঞ্চলের ওপর দিয়ে এসে ভারতে প্রবেশ করার মুখে হিমালয় পর্বতশ্রেণীতে বাধা পায় বলে উত্তর ভারত তীব্র শীতের হাত থেকে রক্ষা পায় । 

ভূমির উচ্চতা 

একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম । সাধারণভাবে দেখা যায় , প্রতি ১,০০০ মিটার বা কিলােমিটার উচ্চতায় প্রায় ৬.৫° সে হারে তাপমাত্রা কমে যায় । তাই একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও সমতল স্থানের তুলনায় উঁচু স্থানের তাপমাত্রা কম হয় । উদাহরণ— ( i ) শিলিগুড়ির তুলনায় উচ্চতা বেশি বলে দার্জিলিং অনেক বেশি ঠান্ডা । ( ii ) উগান্ডার রাজধানী কাম্পালা ( উচ্চতা ১,১৯২ মি ) এবং ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটো ( উচ্চতা ২,৮১৯ মি ) মােটামুটি একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও উচ্চতার পার্থক্যের জন্য কাম্পালার ( গড় তাপমাত্রা ২১ ° সে ) তুলনায় কুইটোর তাপমাত্রা ( গড়ে ১৩ ° সে ) অনেক কম । সুতরাং , বিভিন্ন স্থানের মধ্যে উচ্চতার তারতম্যের জন্য উষ্ণতার পার্থক্য হয় ।  

ভূমির ঢাল 

যেসব ভূমি নিরক্ষরেখার দিকে ঢালু , সেগুলিতে নিরক্ষরেখার বিপরীত দিকে ঢালু ভূমির তুলনায় সূর্যরশ্মি বেশি পড়ে । এজন্য নিরক্ষরেখার দিকে ঢালু তুমি বেশি উষ্ণ হয় । উদাহরণ — উত্তর গোলার্ধে হিমালয় , আল্পস প্রভৃতি পর্বতশ্রেণীর উত্তর ঢালের তুলনায় দক্ষিণ ঢালের তাপমাত্রা বেশি । আবার দক্ষিণ গােলার্ধের পর্বতশ্রেণী সমূহের উত্তর ঢাল দক্ষিণ ঢালের তুলনায় বেশি উষ্ণ ।

সমুদ্র থেকে দূরত্ব 

গ্রীষ্মকালে স্থলভাগ , যতটা উষ্ণ হয় , জলভাগ ততটা উষ্ণ হয় না বা শীতকালে স্থলভাগ যতটা শীতল হয় , জলভাগ ততটা শীতল হয় না । এজন্য সমুদ্র থেকে দূরে মহাদেশের অভ্যন্তরের জলবায়ু চরম হয় কিন্তু সমুদ্রের নিকটবর্তী স্থানে সমুদ্রের প্রভাবের জন্য উষ্ণতা কখনােই খুব বেশি বা কম হয় না । 

সমুদ্রস্রোত 

সমুদ্রে দু-ধরনের স্রোত দেখা যায় — উষ্ণ স্রোত ও শীতল স্রোত । যে-কোনাে দুটি শহর একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও একটির পাশ দিয়ে যদি উষ্ণ স্রোত এবং অপরটির পাশ দিয়ে যদি শীতল স্রোত প্রবাহিত হয় , তাহলে প্রথমটির জলবায়ু উষ্ণ এবং দ্বিতীয়টির জলবায়ু শীতল হয় । উদাহরণ —প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও গ্রেট ব্রিটেনের গ্ল‍্যাসগাে শহরের পাশ দিয়ে উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোত এবং কানাডার নৈন শহরের পাশ দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত প্রবাহিত হয় বলে শীতকালে গ্ল্যাসগাের গড় তাপমাত্রা যখন ৩.৯° সে এর নীচে নামে না তখন নৈন -এর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে -২১.৬° সে পর্যন্ত নেমে যায় । 

বায়ুপ্রবাহ 

সমুদ্রস্রোতের মতাে বায়ুপ্রবাহের জন্যও তাপমাত্রার তারতম্য ঘটে । শীতকালে সুমেরুর বাতাস উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অভ্যন্তরে বহুদূর পর্যন্ত চলে আসে । এজন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যভাগে শীতকালে তীব্র শীত পড়ে এবং তুষারপাত হয় । 

মেঘের আবরণ 

আকাশে ঘন মেঘের আবরণ একদিকে যেমন দিনের বেলা সৌরশক্তিকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছােতে বাধা দেয় , অপরদিকে রাত্রিবেলা ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপকেও মহাশূন্যে পৌঁছতে দেয় না । ফলে মেঘের আবরণ থাকলে দিনের বেলা উত্তাপ কমে , আর রাত্রিবেলা উত্তাপ বাড়ে । এই কারণে মেঘশূন‍্য রাত্রির তুলনায় মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অনেক গরম হয় । 

অরণ্য 

অরণ্যের ভেতর দিয়ে সূর্যরশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছােতে বাধা পায় বলে ঘন অরণ্যের ভেতরে বা অরণ্যের আশেপাশে বায়ুর উষ্ণতা কম হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!