ভূগোল

বায়ুমণ্ডলের উপাদান গুলি কি কি

Contents

বায়ুমণ্ডলের উপাদান গুলি কি কি

images 1
বায়ুমণ্ডলের উপাদান গুলি কি কি

বায়ুমণ্ডল নানা ধরনের উপাদান দিয়ে গঠিত । এইসব উপাদানের মধ্যে আছে ( ১ ) গ্যাসীয় উপাদান , ( ২ ) জলীয় বাষ্প এবং ( ৩ ) ধূলিকণা ।

বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় উপাদান

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে নাইট্রোজেন , শতকরা প্রায় ৭৮ ভাগ । বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় প্রধান গ্যাসীয় উপাদানটি হল অক্সিজেন , এর পরিমাণ শতকরা প্রায় ২১ ভাগ । নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন — এই দুটি গ্যাসীয় উপাদান দিয়ে বায়ুমণ্ডলের শতকরা প্রায় ৯৯ ভাগ গঠিত । বায়ুমণ্ডলের অবশিষ্ট মাত্র ১ শতাংশের মধ্যে আছে আরও অনেকগুলি গ্যাসীয় উপাদান — আর্গন ( ০.৯৩ % ) , কার্বন ডাইঅক্সাইড ( ০.০৩৩ % ) , হিলিয়াম , হাইড্রোজেন , ক্রিপটন , মিথেন , নিয়ন , ওজোন , জেনন প্রভৃতি । 

জলীয় বাষ্প 

জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে বলে জলীয় বাষ্প । এই উপাদানটি সাগর , মহাসাগর , নদনদী , হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয় , গাছপালা প্রভৃতি থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে মেশে । সাধারণ বায়ুতে যদিও জলীয় বাষ্প থাকে গড়ে ১.৪ % , তবে ঋতুভেদে বা অঞ্চলভেদে বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণে কিছু তারতম্য হয় । 

ধূলিকণা 

বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে যথেষ্ট পরিমাণে ধূলিকণা থাকে এবং অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতাে ধূলিকণাও বাতাসে ভেসে বেড়ায় । শুষ্ক মরু অঞ্চল বা সমুদ্রতীরের ধুলােবালি , কলকারখানার পােড়া কয়লার ছাই প্রভৃতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা রূপে বাতাসে ভেসে বেড়ায় ।

বায়ুমন্ডলে নাইট্রোজেন গ্যাসের গুরুত্ব

বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদান নাইট্রোজেন । তাই এর গুরুত্বও যথেষ্ট , যেমন — 

( ১ ) প্রাণীজগৎ সরাসরি এই গ্যাস ব্যবহার না করলেও কতকগুলি শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদের মূলে বসবাসকারী এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে মাটির উর্বরাশক্তি বাড়িয়ে দেয় । মানুষ শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে এই উর্বরা শক্তিকে কাজে লাগায় । 

( ২ ) বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে সার উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হয় । 

বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের গুরুত্ব

বায়ুমণ্ডলের একটি উল্লেখযােগ্য গ্যাসীয় উপাদান অক্সিজেন । 

( ১ ) মানবজীবনে এই অক্সিজেনের মূল্য অপরিসীম । আমরা প্রশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন গ্রহণ করি এবং নিশ্বাসের মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করি । সামগ্রিকভাবে বলা যায় , অক্সিজেন ছাড়া প্রাণীজগৎ বাঁচতে পারে না — জীবদেহের শক্তি ও উত্তাপ বৃদ্ধির জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য । 

( ২ ) এই অক্সিজেন বিভিন্ন শিলা গঠনকারী খনিজের সঙ্গে সহজে মিলিত হয়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ( অক্সিডেশন এর মাধ্যমে ) শিলার আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবনে সাহায্য করে । 

( ৩ ) লােহায় মরিচা ধরতে এবং অঙ্গার জ্বালাতে অক্সিজেন সাহায্য করে । 

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসের গুরুত্ব

বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ খুবই সামান্য ( ০.০৩৩ % ) হলেও এর গুরুত্ব সীমাহীন । 

( ১ ) কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়া উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পারে না । আর প্রাণীজগৎ খাদ্যের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরােক্ষভাবে উদ্ভিদের ওপর নির্ভরশীল । তাই , এটি না থাকলে পৃথিবীর উদ্ভিদ জগৎ এবং প্রাণী জগৎ উভয়ই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত । 

( ২ ) বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও এই গ্যাসটির বিশেষ ভূমিকা আছে । কারণ , কার্বন ডাই অক্সাইড তাপ শােষণ করে । 

( ৩ ) ভূপৃষ্ঠে বিভিন্ন ধরনের শিলার আবহবিকারের ক্ষেত্রেও কার্বন ডাই অক্সাইড ( কার্বোনেশানের মাধ্যমে ) সাহায্য করে । 

( ৪ ) অঙ্গার খনিজ এবং চুনজাতীয় খনিজ গঠনেও কার্বন ডাই অক্সাইড সাহায্য করে । 

বায়ুমণ্ডলের ওজোন গ্যাসের গুরুত্ব

বায়ুমণ্ডলে ওজোন গ্যাসের গুরুত্ব খুব বেশি । 

( ১ ) বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে ওজোন গ্যাসের পরিমাণ কম হলেও ভূপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা ওপরে প্রায় ২৪-৪০ কিলােমিটারের মধ্যে যে ওজোন গ্যাসের স্তর পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে , তার জন্যই সূর্য থেকে ছুটে আসা অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পৌঁছােতে পারে না । 

( ২ ) বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ওজোন গ্যাসের ভূমিকা আছে ।

বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব

বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব অপরিসীম । কারণ — 

( ১ ) বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হয় এবং ওই মেঘ থেকেই বৃষ্টিপাত হয় । 

( ২ ) জলের আর এক নাম জীবন । জলীয় বাষ্প না থাকলে পৃথিবীতে জীবনের কোনাে অস্তিত্ব থাকত না । 

( ৩ ) শিশির , কুয়াশা , শিলাবৃষ্টি , তুষার প্রভৃতি জলীয় বাষ্পের বিভিন্ন অবস্থা বা বৃষ্টিপাত কোনাে স্থানের জলবায়ু নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । বৃষ্টিবহুল অঞ্চলের জলবায়ু আর্দ্র , আবার স্বল্প বৃষ্টিপাত বা জলীয় বাষ্পের স্বল্পতা শুষ্ক মরু জলবায়ুর সৃষ্টি করে । 

বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব

বায়ুমণ্ডলের একটি উল্লেখযােগ্য উপাদান ধূলিকণা । এর গুরুত্বও যথেষ্ট । কারণ — 

( ১ ) বর্তমানে বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে , বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই জলীয় বাষ্প জলবিন্দুতে পরিণত হয় বা মেঘ ও কুয়াশার সৃষ্টি হয় । 

( ২ ) বায়ুতে ভাসমান ধূলিকণা সমূহ সূর্যরশ্মিতে সরাসরি উত্তপ্ত হয়ে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং পৃথিবীতে সৌরতাপ বণ্টনে প্রভাব বিস্তার করে । 

( ৩ ) ধূলিকণার জন্যই আকাশে এত বর্ণ বৈচিত্র্যের মেলা , এত সৌন্দর্য । সূর্যালােক বায়ুমণ্ডলে প্রতিসৃত এবং ধূলিকণায় বিচ্ছুরিত হয়ে নানা বর্ণের তরঙ্গ সৃষ্টি করে । এগুলির মধ্যে নীলাভ আলাের প্রাধান্য বেশি । তাই আকাশ এত নীল । বায়ুমণ্ডলে যদি ধূলিকণা না থাকত , সূর্যালােক বিচ্ছুরিত হত না , দিনের বেলাও আকাশ গভীর অন্ধকারে ডুবে থাকত ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!