ভূগোল

হিমবাহ কাকে বলে

Contents

হিমবাহ কাকে বলে

images 9
হিমবাহ কাকে বলে

আকাশ থেকে যে তুষারপাত হয় , সেই তুষার খুবই নরম । কিন্তু যেখানে প্রায় সারা বছরই তুষারপাত হয় সেখানে ক্রমশ জমা হওয়া তুষারের সম্মিলিত চাপে নীচের তুষার স্তর জমাট বেঁধে কঠিন বরফে পরিণত হয় । বরফের পরিমাণ যখন অনেক বেড়ে যায় , তখন তা ওপরের বরফের চাপে এবং মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকে । খুব ধীরে ধীরে গড়িয়ে আসা সেই বরফের ধারাকেই বলে হিমবাহ । এজন্য হিমবাহকে বরফের নদীও বলে । পাহাড়ের ঢাল বেয়ে হিমবাহ যখন নামতে থাকে তখন নীচের দিকে প্রচণ্ড চাপ ও ঘর্ষণের জন্য হিমবাহের তলদেশে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পায় । এর ফলে তলদেশের বরফ গলে গিয়ে অবতরণ পথকে পিচ্ছিল করে দেয় । তখন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে কঠিন বরফ যুক্ত হিমবাহের নীচের দিকে নামাও কিছুটা সহজ হয়ে যায় ।

পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ : অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্গত অ্যান্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট হিমবাহ পৃথিবীর দীর্ঘতম হিমবাহ । এটি প্রায় ৬৪ কিলােমিটার প্রশস্ত এবং সমুদ্রের দিকে বিস্তৃত অংশ যুক্ত করে প্রায় ৭০০ কিলােমিটার দীর্ঘ ।

পৃথিবীর দ্রুততম হিমবাহ : গ্রিনল্যান্ডের জ্যাকোবসাভোঁ ইসব্রে পৃথিবীর প্রধান হিমবাহগুলির মধ্যে দ্রুততম । এটি দিনে প্রায় ৬২ ফুট প্রবাহিত হয় । 

ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ : কারাকোরাম পর্বত শ্রেণীর অন্তর্গত সিয়াচেন ভারতের বৃহত্তম হিমবাহ । এই হিমবাহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬ কিলােমিটার । হিসপার ও বিয়াফো হিমবাহ দুটি একত্র করলে এগুলির মােট দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১২২ কিলােমিটার ।

হিমবাহের শ্রেণীবিভাগ 

হিমবাহকে অবস্থান অনুসারে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় — 

( ১ ) পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ , 

( ২ ) মহাদেশীয় হিমবাহ এবং 

( ৩ ) পর্বত পাদদেশীয় হিমবাহ । 

পাবর্ত্য বা উপত্যকা হিমবাহ :

যেসব হিমবাহ সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে বিভিন্ন উপত্যকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় , সেইসব হিমবাহকে বলে পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ । উদাহরণ — হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ হিমবাহ এই শ্রেণির , যেমন — কুমায়ুন হিমালয়ের ( i ) গঙ্গোত্রী হিমবাহ এবং নেপাল হিমালয়ের ( ii ) জেমু হিমবাহ । 

মহাদেশীয় হিমবাহ :

উচ্চভূমি-নিম্নভূমি নির্বিশেষে মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যখন বরফে ঢাকা থাকে , তখন তাকে বলে মহাদেশীয় হিমবাহ । উদাহরণ — বর্তমানে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় বরফে ঢাকা যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দেখা যায় , তা মহাদেশীয় হিমবাহের উদাহরণ । হাজার হাজার বছর আগে পৃথিবীর বহু এলাকাই মহাদেশীয় হিমবাহে আবৃত ছিল । সেই সময়কে বলা হয় হিম যুগ । পরবর্তীকালে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মহাদেশীয় হিমবাহের আয়তন হ্রাস পেয়ে বর্তমানে দুই মেরু অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত হয়েছে । 

পর্বত পাদদেশীয় হিমবাহ :

হিমবাহ যখন উঁচু পর্বতের ওপর থেকে নীচে , অর্থাৎ পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে , তখন তাকে বলে পর্বত পাদদেশীয় হিমবাহ । উদাহরণ — আলাস্কার মালাস্পিনা হিমবাহ ।

হিমবাহ কী কী প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে

হিমবাহ সাধারণত দুভাবে ক্ষয় করে থাকে । যথা — 

( ১ ) উৎপাটন এবং 

( ২ ) অবঘর্ষ । 

উৎপাটন : 

প্রবহমান হিমবাহের চাপে পর্বতের দেহ থেকে পাথর খুলে আসে , একে বলে উৎপাটন বা প্লাকিং । 

অবঘর্ষ : 

হিমবাহের সঙ্গে যেসব পাথরখণ্ড থাকে সেগুলির সঙ্গে সংঘর্ষে উপত্যকা বা পর্বতগাত্র ক্রমশ ক্ষয় হয়ে যায় এবং মসৃণ হয় , একে বলে অবঘর্ষ ।

One thought on “হিমবাহ কাকে বলে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!