উপভাষা কাকে বলে
উপভাষা কাকে বলে

একই ভাষা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত অঞ্চল বিশেষে উচ্চারিত মৌখিক ভাষার যে রূপ বৈচিত্র্য তা হল উপভাষা ( Dialect ) ।
বাংলা উপভাষা কয়টি ও কি কি
বাংলা উপভাষা পাঁচটি । যথা —
১. রাঢ়ী ,
২. ঝাড়খন্ডী ,
৩. বরেন্দ্রী ,
৪. কামরূপী বা রাজবংশী এবং
৫. বঙ্গালী ।
➡️ মধ্য-পশ্চিমবঙ্গ তথা রাঢ় অঞ্চলের উপভাষা হল রাঢ়ী। রাঢ় অঞ্চলের অবস্থান হল বীরভূম , বর্ধমান , পূর্ব বাঁকুড়া , মুর্শিদাবাদ , নদিয়া , কলকাতা , উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা , হাওড়া , হুগলি ও উত্তর-পূর্ব মেদিনীপুর ।
➡️ দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ , ঝাড়খণ্ড ও বিহারের কিছু অংশ নিয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপভাষা হল ঝাড়খন্ডী ।
➡️ উত্তর-মধ্য বঙ্গ তথা মালদহ , দক্ষিণ দিনাজপুর , রাজশাহি , পাবনা অঞ্চলের উপভাষা হল বরেন্দ্রী ।
➡️ উত্তর-পূর্ব বঙ্গ তথা উত্তর দিনাজপুর , জলপাইগুড়ি , কোচবিহার , রংপুর , কাছাড় ও শ্রীহট্ট অঞ্চলের উপভাষা হল কামরূপী বা রাজবংশী ।
➡️ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গ তথা ঢাকা , ময়মনসিংহ , বরিশাল , ফরিদপুর , যশােহর , খুলনা , চট্টগ্রাম ও নােয়াখালি অঞ্চলের উপভাষা হল বঙ্গালী ।
উপভাষার রূপের দুটি ভাগও স্পষ্ট — ( ১ ) মৌখিক ( Colloquial ) , ( ২ ) সাহিত্যিক ( Literary ) ।
দৈনন্দিন ভাব বিনিময়ের তাগিদে মুখে উচ্চারিত ভাষা হল মৌখিক । অপর নাম কথ্য বা কথার ভাষা । মৌখিক উপভাষায় আঞ্চলিক প্রভাব স্পষ্ট । সেজন্য উপভাষাগত রূপ , লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য , এমনকি নিজস্ব স্বাতন্ত্র মৌখিক উপভাষার ক্ষেত্রে স্পষ্টত লক্ষণীয় । উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে বাংলা সাহিত্যে ব্যাপক ভাবে প্রয়ােগ না হলেও নাটক-প্রহসনে কৌতুকের তাগিদে , গল্প-উপন্যাসে আঞ্চলিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্যাদি ফুটিয়ে তােলার প্রয়ােজনে , বিশেষত চরিত্রের সংলাপে মৌখিক উপভাষার ব্যবহার হতে দেখা যায় । এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখতে হবে , যে-কোনাে উপকথার ব্যাবহারিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেলে , সাহিত্যে বহুল প্রয়ােগ হয়ে পরিমার্জিত ও পরিশীলিত হতে থাকলে , সে উপভাষার শরীর থেকে গ্রাম্যতার স্থূলতা খসে গিয়ে তা সাহিত্য উপভাষায় উন্নীত হয় । এভাবে অনেক ভাষা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত উপভাষা সাহিত্য-গুণান্বিত হয়েছে ।