হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ
Contents
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

হিমবাহের ক্ষয়কার্য শুধুমাত্র উঁচু পর্বতের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এই ক্ষয়কার্যের ফলে উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় , যেমন —
U আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী
হিমবাহ যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় , সেখানে হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় প্রায় সমানভাবে হয় বলে সেই উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি ‘ U ’ অক্ষরের মতাে হয় । একে তাই U আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী বলে ।
করি বা সার্ক
উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের মাধ্যমে অনেক সময় উপত্যকা এমনভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় যে , দেখলে মনে হয় যেন হাতল লাগানাে ডেক চেয়ার অর্থাৎ পর্বতগাত্রের একদিক খুব খাড়া এবং মাঝখানে একটি গর্ত । একে ইংরেজিতে বলে করি এবং ফরাসিতে সার্ক । হিমবাহ গলা জল করি-তে জমে হ্রদ তৈরি হয় বলে তাকে করি হ্রদ বলে।
এরিটি
হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে অনেক সময় দুপাশে দুটি করি গঠিত হয় । করির মধ্যে হিমবাহের কিছু অংশ বা বরফ আবদ্ধ হলে যান্ত্রিক বিচূর্ণীভবনের জন্য অর্থাৎ দিনের বেলা বরফ গলে জল হয় এবং রাতে ওই জল পুনরায় জমে বরফে পরিণত হয় বলে করির আয়তন ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকে । পর্বতের দুপাশে দুটি করির আয়তন এইভাবে যদি বেড়ে যায় , তাহলে মধ্যবর্তী অংশ সংকীর্ণ খাড়া প্রাচীরের মতাে হয়ে যায় , যাকে বলে এরিটি ।
পিরামিড চূড়া
একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে পাশাপাশি তিন-চারটি ‘ করি ’ তৈরি হলে মাঝখানের চূড়াটিকে বলে পিরামিড চূড়া । গঙ্গোত্রীর কাছে নীলকণ্ঠ ও শিবলিঙ্গ শৃঙ্গ এই ধরনের পিরামিড চূড়া । আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন একটি বিখ্যাত পিরামিড চূড়া ।
ঝুলন্ত উপত্যকা
অনেক সময় পার্বত্য অঞ্চলে প্রধান হিমবাহের দু-পাশ থেকে অনেক ছােটো ছােটো হিমবাহ এসে প্রধান হিমবাহে মেশে । প্রধান হিমবাহের ক্ষয়কার্য বেশি বলে তার উপত্যকার গভীরতাও বেশি হয় । উপ হিমবাহগুলি ছােটো হয় বলে এদের ক্ষয়কারী শক্তিও কম । এজন্য উপ হিমবাহগুলির উপত্যকাও কম গভীর হয় । গভীরতার এই পার্থক্যের জন্য উপ-হিমবাহ যেখানে প্রধান হিমবাহে মেশে , সেই মিলনস্থলে দুই হিমবাহের উচ্চতার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট লক্ষ করা যায় । মনে হয় যেন উপ-হিমবাহের উপত্যকা প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর ঝুলন্ত অবস্থায় আছে । প্রধান হিমবাহ উপত্যকার ওপর এইভাবে ঝুলে থাকা উপ-হিমবাহের উপত্যকাকে বলে ঝুলন্ত উপত্যকা ।
রসে মতানে
হিমবাহের গতিপথে শিলাখণ্ড ঢিপির আকারে উঁচু হয়ে থাকলে, ক্ষয়কার্যের ফলে হিমবাহের প্রবাহের দিকে শিলাখণ্ডটি মসৃণ এবং বিপরীত দিকে এবড়ো খেবড়ো বা অসমতল হয় । এই ধরনের নাম ঢিপির নাম রসে মতানে ।
ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল
হিমবাহের গতিপথে নরম আর শক্ত পাথর পরপর থাকলে অনেক সময় শক্ত পাথর নরম পাথরকে হিমবাহের ক্ষয়কার্য থেকে কিছুটা রক্ষা করে । নরম পাথর তখন শক্ত পাথরের পিছনে লেজের মতাে উঁচু হয়ে থাকে । একে বলে ক্র্যাগ অ্যান্ড টেল ।