রাসায়নিক আবহবিকার

Contents

রাসায়নিক আবহবিকার

183425952 56a131275f9b58b7d0bceb20
রাসায়নিক আবহবিকার

বায়ুমণ্ডলের মধ্যে যে অক্সিজেন , কার্বন ডাইঅক্সাইড , জলীয় বাষ্প প্রভৃতি উপাদান থাকে , সেগুলি শিলার মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থের ওপর বিভিন্ন ভাবে বিক্রিয়া করে শিলার কাঠিন্য নষ্ট করে দেয় । এর ফলে শিলা বিয়ােজিত হয় । এই বিক্রিয়ার জন্য শিলার মূল খনিজগুলি গৌণ খনিজ কণায় পরিণত হয়ে সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় , এইভাবে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হলে তাকে বলে রাসায়নিক আবহবিকার । যেহেতু রাসায়নিক আবহবিকারে জল বা জলীয় বাষ্পের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ , তাই আর্দ্র গ্রীষ্মপ্রধান জলবায়ু অঞ্চলে , বিশেষত উষ্ণ-আর্দ্র ক্রান্তীয়মন্ডলে এই প্রকার আবহবিকারের সক্রিয়তা বেশি লক্ষ্য করা যায়

রাসায়নিক আবহবিকারের প্রক্রিয়া

প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক আবহবিকার সংগঠিত হয় । এগুলি হল — 

( ১ ) কার্বনেশন বা অঙ্গারীকরণ , 

( ২ ) অক্সিডেশন বা জারণ , 

( ৩ ) হাইড্রেশন বা জলযোজন এবং 

( ৪ ) সলিউশন বা দ্রবণ ।

কার্বোনেশন বা অঙ্গারীকরণ 

ক্যালসিয়াম কার্বোনেট বা চুনাপাথরের সঙ্গে কার্বন ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত জলের সংযােগ হলে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয় , তার জন্য ক্যালসিয়াম কার্বোনেট , ক্যালসিয়াম বাই কার্বনেট -এ পরিণত হয়ে সহজেই ক্ষয়ে যেতে থাকে । রাসায়নিক আবহবিকারের এই প্রক্রিয়াকে বলে কার্বোনেশন । 

বৃষ্টির জল পড়ার সময় বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইড তার সঙ্গে মিশে যায় । এর ফলে বৃষ্টির জলে কার্বনিক অ্যাসিড নামে এক , মৃদু অ্যাসিড সৃষ্টি হয় ( জল + কার্বন ডাইঅক্সাইড = কার্বনিক অ্যাসিড বা = H2CO3 ) । বিশুদ্ধ জলে চুনাপাথর দ্রবীভূত হয় না , কিন্তু কার্বন ডাইঅক্সাইড মিশ্রিত জলে বা কার্বনিক অ্যাসিডে তা সহজেই দ্রবীভূত হয় [ CaCO3 + H2O + CO2 = Ca(HCO3)2 ] । এইভাবে কার্বোনেশানের মাধ্যমে চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে আবহবিকার হয় । 

অক্সিডেশন বা জারণ

লােহার সঙ্গে অক্সিজেন যুক্ত হলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং এর ফলে হলদে বা বাদামি রঙের একটি নতুন যৌগ পদার্থ সৃষ্টি হয়ে অতি সহজেই লােহার ক্ষয় হয় । রাসায়নিক আবহবিকারের এই প্রক্রিয়াকে অক্সিডেশন বলে । 

লােহা যখন ‘ ফেরাস অক্সাইড ’ রূপে থাকে তখন তা খুব কঠিন , ফলে ক্ষয় হয় না । কিন্তু অক্সিডেশনের জন্য লােহা ‘ ফেরিক অক্সাইড ’ – এ পরিণত হয় এবং ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । যেসব শিলার মধ্যে লােহার ভাগ বেশি থাকে , সেই শিলাগুলি অক্সিডেশনের ফলে দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় । একই কারণে বিভিন্ন লােহার জিনিসে ‘ মরিচা ’ পড়ে ( 4FeO + 3H2O + O2 = 2Fe₂O₃ + 3H2O ) । 

হাইড্রেশন বা জলযোজন

শিলার মধ্যে থাকা কোনাে কোনাে খনিজের সঙ্গে জল যুক্ত হলে , জল রাসায়নিক বিক্রিয়া করে এবং এর ফলে খনিজের ধর্মের পরিবর্তন হয় এবং শিলা বিয়ােজিত হয় । একে বলে হাইড্রেশন । 

কতকগুলি খনিজের জল শােষণ করার ক্ষমতা বেশি । জল শােষণ করে খনিজগুলি আয়তনে প্রসারিত হয় । এর ফলে শিলার ভেতরের বাঁধন আলগা হয়ে পড়ে এবং শিলার আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন ঘটে । এইভাবেই দাক্ষিণাত্য মালভূমির ব্যাসল্ট শিলায় বিচূর্ণীভবন হয় বা হেমাটাইট ( উৎকৃষ্ট আকরিক লােহা ) লিমোনাইট ( নিকৃষ্ট আকরিক লােহা ) -এ রূপান্তরিত হয় । 

সলিউশন বা দ্রবণ

কতকগুলি খনিজ দ্রব্য , যেমন — জিপসাম , খনিজ লবণ প্রভৃতি জলের সংস্পর্শে পুরােপুরি দ্রবীভূত হয় । একে বলে সলিউশন বা দ্রবণ । এক্ষেত্রে দেখা যায় , যত বেশি পরিমাণে জলের সঙ্গে সংযােগ ঘটে শিলাটি তত তাড়াতাড়ি দ্রবীভূত হয় বা গলে যায় । আবার দেখা যায় , গ্রানাইট গঠনকারী খনিজগুলির মধ্যে ফেল্ডসপার জলে দ্রুত দ্রবীভূত হয় । তাই গ্রানাইট যখন জলের সংস্পর্শে আসে ফেল্ডসপার তখন গলে যায় , কিন্তু গ্রানাইট গঠনকারী অন্য দুই খনিজ পদার্থ , যথাক্রমে কোয়ার্টজ ও অভ্র দ্রবীভূত হয় না বলে পরস্পর মিশে একটি নরম পদার্থ সৃষ্টি করে । এইভাবে গ্রানাইট শিলায় বিচূর্ণীভবন হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!