ভূগোল

যান্ত্রিক আবহবিকার

Contents

যান্ত্রিক আবহবিকার

যান্ত্রিক আবহবিকার

উষ্ণতার তারতম্য , বৃষ্টিপাত , তুষারপাত প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে যান্ত্রিক বা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যখন ভূপৃষ্ঠের শিলা সমূহ চূর্ণবিচূর্ণ হয় , তখন তাকে বলে যান্ত্রিক আবহবিকার । যান্ত্রিক আবহবিকারের মাধ্যমে শিলা যখন চূর্ণবিচূর্ণ হয় , তখন শিলার শুধু আকৃতিগত পরিবর্তন ( Physical Change ) হয় , অর্থাৎ শিলাটি শুধু ছােটো ছােটো খণ্ডে বিভক্ত হয় ; শিলার বিভিন্ন উপাদানের মূল ধর্ম একই থাকে । সাধারণত উষ্ণ মরু জলবায়ু , শুষ্ক নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এবং তুষার অধ্যুষিত শীতল জলবায়ুতে যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রাধান্য দেখা যায় ।

যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়া

যান্ত্রিক আবহবিকারের প্রক্রিয়া গুলিকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । এগুলি হল — 

( ১ ) তাপমাত্রার পরিবর্তন জনিত , 

( ২ ) কেলাস গঠন জনিত , 

( ৩ ) বৃষ্টিপাতজনিত এবং 

( ৪ ) শিলাস্তরের চাপ হ্রাস জনিত ।

তাপমাত্রার পরিবর্তন জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার

শুষ্ক জলবায়ু অঞ্চলে , বিশেষত উষ্ণ মরু অঞ্চলে দৈনিক ও বার্ষিক উষ্ণতার প্রসার খুব বেশি বলে শিলার প্রসারণ ও সংকোচন ঘটে এবং এর ফলে তিন ভাবে শিলার আবহবিকার ঘটে ।

বাষ্পমোচন বা শল্কমোচন বা এক্সফোলিয়েশন বা গোলাকৃতি আবহবিকার : 

শিলা সমূহ বেশি তাপ পরিবহন করে না । এজন্য দিনের বেলায় সূর্যতাপে শিলার নীচের স্তরের তুলনায় ওপরের স্তর তাড়াতাড়ি গরম হয়ে যায় । প্রখর সূর্যতাপে শিলার ওপরের স্তর খুব বেশি গরম হলে আয়তনে বেড়ে যায় এবং নীচের স্তর থেকে পেঁয়াজের খােসার মতাে খুলে আসে । এইভাবে স্তরে স্তরে শিলার বাইরের অংশ খুলে গেলে ভেতরের অংশটি কিছুটা গােলাকার , মসৃণ শিলাখণ্ডে পরিণত হয় । একেই বলে বাষ্পমোচন বা শল্কমোচন বা এক্সফোলিয়েশন বা গোলাকৃতি আবহবিকার । সাধারণত যেসব শিলা এক জাতীয় খনিজে গঠিত অর্থাৎ সমপ্রকৃতির , সেগুলিতে এক্সফোলিয়েশন বেশি দেখা যায় । যেমন — গ্রানাইট শিলা গঠিত পাহাড়ে এই ধরনের আবহবিকার হয় ।

ক্ষুদ্র কণা বিশরণ : 

যেসব শিলায় বিভিন্ন ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে , সেই শিলাগুলি গরমে বা ঠান্ডায় সমানভাবে বাড়তে-কমতে পারে । এর ফলে শিলায় বিভিন্নভাবে টান পড়ে এবং শিলাটি হঠাৎ ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । একে বলে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ বা ক্ষুদ্র কণা বিস্মরণ । 

প্রস্তর বিশরণ : 

শিলার ওপরের স্তর ও নীচের স্তরের মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্যের জন্য অনেক সময় আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে ওই ফাটল বরাবর শিলাটি ভেঙে টুকরাে টুকরাে হয়ে যায় । একে বলে প্রস্তর বিশরণ । 

কেলাস গঠন জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার 

কেলাস গঠন জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার তিনটি প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় — ( i ) তুষার জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার বা তুহিন খন্ডীকরণ , ( ii ) লবণের কেলাস গঠন এবং ( iii ) স্লেকিং ( Slaking ) । 

তুষার জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার বা তুহিন খন্ডীকরণ : 

শিলার মধ্যে অনেক ফাটল থাকে । শীতল জলবায়ু অঞ্চলে বা উঁচু পর্বতের ওপর বৃষ্টির জল বা বরফ গলা জল শিলাস্তরের ওইসব ফাটলের মধ্যে ঢুকে যায় এবং ঠান্ডায় বরফে পরিণত হয় । জলের চেয়ে বরফের আয়তন বেশি বলে ফাটলের দু-পাশের দেওয়ালে প্রচণ্ড চাপ পড়ে , ফলে ফাটল বরাবর শিলাস্তরটি ভেঙে টুকরাে টুকরাে হয়ে পর্বতের পাদদেশে নুড়িক্ষেত্র সৃষ্টি করে । এইভাবে তুষারের মাধ্যমে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয় বলে একে তুহিন খন্ডীকরণ বলে ।

লবণের কেলাস গঠন : 

শুষ্ক অঞ্চলে , বিশেষত উষ্ণ মরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হয় বলে এখানকার ভূমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লবণ থাকে । স্বল্প বৃষ্টিপাতের সময় ওই লবণ ধৌত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলাস্তরে প্রবেশ করে । পরে অত্যধিক উষ্ণতার জন্য যখন খুব বেশি বাষ্পীভবন হয় , শিলাস্তরের ওই দ্রবীভূত লবণ কেলাসিত লবণে রূপান্তরিত হয় এবং শিলায় প্রবল চাপের সৃষ্টি করে । ফলে শিলায় আবহবিকার ঘটে । শুষ্ক অঞ্চলের বেলেপাথরে এইভাবে লবণের কেলাস গঠনের মাধ্যমে খুব বেশি মাত্রায় যান্ত্রিক আবহবিকার হতে দেখা যায় । 

স্লেকিং : 

অনেক সময় ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দানা দিয়ে গঠিত শিলাস্তর পর্যায়ক্রমে আর্দ্র ও শুষ্ক হওয়ার ফলে ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায় । যান্ত্রিক আবহবিকারের এই প্রক্রিয়াটিকে বলে স্লেকিং । 

বৃষ্টিপাত জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার 

( i ) যে তুষারের মাধ্যমে শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয় অর্থাৎ যান্ত্রিক আবহবিকার সংঘটিত হয় , বৃষ্টির জল সেই তুষার সৃষ্টির কাজে সাহায্য করে । ( ii ) বৃষ্টিবহুল অঞ্চলে বৃষ্টির ফোঁটাগুলি বছরের পর বছর শিলাখণ্ডকে আঘাত করতে থাকে । এর ফলে শিলাখণ্ড ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং কালক্রমে টুকরাে টুকরাে হয়ে যায় । ( iii ) অনেক সময় শিলায় ছােটো ছােটো ছিদ্র থাকে । বৃষ্টির সময় ছিদ্রগুলি জলে পূর্ণ হয়ে যায় এবং পরে সূর্যতাপে তা শুকিয়ে যায় । কিন্তু , ক্রমাগত এই আদ্রর্তা ও শুষ্কতার পরিবর্তন হলে শিলাটি ছােটো ছােটো শিলাখণ্ডে পরিণত হয় । ( iv ) শিলার মধ্যে যেসব খনিজ পদার্থ থাকে , বৃষ্টির জল পড়ার ফলে অর্থাৎ আর্দ্রতা বৃদ্ধির দরুন , সেগুলির আয়তন বৃদ্ধি পায় । শুধু খনিজের আয়তন বৃদ্ধির জন্যও শিলাটি চূর্ণবিচূর্ণ হতে পারে । 

শিলাস্তরের চাপ হ্রাস জনিত যান্ত্রিক আবহবিকার

শিলাস্তরের ওপরের বিচূর্ণীকৃত অংশগুলি ক্ষয়ীভবনের মাধ্যমে অপসারিত হলে নীচের শিলাস্তর কিছুটা প্রসারিত হয় । এর ফলে শিলাস্তরে ভূত্বকের সমান্তরাল ছােটো বড়াে নানা আয়তনের ফাটলের সৃষ্টি হয় এবং কালক্রমে ওই ফাটল বরাবর শিলাস্তর বিচ্ছিন্ন বা খণ্ডবিখণ্ড হয়ে যায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!