সমভূমি
Contents
সমভূমি

স্থলভাগের যেসব বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু এবং সামান্য ঢালু , সেই ভূভাগগুলিকে সমভূমি বলে । সমভূমির উপরিভাগে কোথাও কোথাও তরঙ্গায়িত ভাব থাকলেও বন্ধুরতা বিশেষ লক্ষ করা যায় না । উদাহরণ — গাঙ্গেয় সমভূমি । এই সমভূমিটি উত্তরপ্রদেশ , বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের এক বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ।
সমভূমির শ্রেণীবিভাগ
উৎপত্তি ও ভূমিরূপ এর তারতম্য অনুসারে সমভূমিকে নিম্নলিখিত শ্রেণীতে ভাগ করা যায় —
( ১ ) সঞ্চয়জাত সমভূমি
( ২ ) ক্ষয়জাত সমভূমি
( ৩ ) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি ।
সঞ্চয়জাত সমভূমি
উৎপত্তি ও ভূমিরূপের পার্থক্য অনুসারে সমভূমিকে যে তিনটি বিভাগে ভাগ করা যায় তাদের মধ্যে সঞ্চয়জাত সমভূমি অন্যতম । প্রধানত চারভাবে সঞ্চয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয় , যেমন —
পলি গঠিত সমভূমি :
সাধারণত নদীবাহিত পলি , বালি ইত্যাদি নদীর দু-পাশে বা মােহানার কাছে সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় , তার নাম পলি গঠিত সমভূমি । উদাহরণ — গঙ্গা সমভূমি , হোয়াংহো সমভূমি প্রভৃতি ।
প্লাবন সমভূমি :
বন্যা বা প্লাবনের সময় নদীর জলস্রোতের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে পলি , বালি ইত্যাদি আসে এবং এগুলি নদীর দু-পাশের নীচু জায়গাগুলিতে সঞ্চিত হয় । এইভাবে বছরের পর বছর সঞ্চিত হতে হতে নদীর দু-পাশের নীচু জায়গাগুলি ভরাট হয়ে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় , তার নাম প্লাবন সমভূমি । উদাহরণ — মধ্য ও নিম্নগতিতে গঙ্গা নদীর দুই তীরে এবং অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এই ধরনের অনেক প্লাবন সমভূমি দেখা যায় ।
বদ্বীপ সমভূমি :
নদীর জলের সঙ্গে বাহিত সুক্ষ্ম পলি , বালি ইত্যাদি মােহানার কাছে নদীর বুকে বা অগভীর সমুদ্রে জমা হয় । এগুলি জমে জমে ক্রমশ মােহানায় জলের ওপর নতুন নতুন ভূমি জেগে ওঠে । ভূমিগুলি দেখতে বাংলা অক্ষর মাত্রা ছাড়া ‘ ব ’ এবং গ্রিক অক্ষর ডেল্টার ( Δ ) মতাে বলে এগুলির নাম বদ্বীপ বা ডেল্টা । এরপর বদ্বীপগুলি ধীরে ধীরে আয়তনে বড়াে হয়ে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় । এইভাবে বদ্বীপের মাধ্যমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় , তার নাম বদ্বীপ সমভূমি । উদাহরণ — গঙ্গা নদীর মােহনায় বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে ।
উপকূলীয় সমভূমি :
সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে আসা পলি , বালি , কাঁকর প্রভৃতি উপকুলের অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে উপকূলীয় সমভূমির সৃষ্টি হয় । আবার , বায়ু ও নদীবাহিত পলি , বালি , কাঁকর প্রভৃতি সমুদ্রের অগভীর অংশে সঞ্চিত হয়েও এই প্রকার সমভূমির সৃষ্টি হয় । উদাহরণ— ( i ) সামুদ্রিক অবক্ষেপ থেকে সৃষ্ট — প্যালেস্টাইন সমভূমি । ( ii ) নদী , বায়ু প্রভৃতি বাহিত পদার্থ থেকে সৃষ্ট ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমির কিছু কিছু অংশ ।
ক্ষয়জাত সমভূমি
প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের ফলে দু-ভাবে সমভূমির সৃষ্টি হয় —
সমপ্রায় ভূমি :
বহুযুগ ধরে কোনাে প্রাচীন মালভূমি বা উচ্চভূমি বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ( যেমন — নদী , বায়ুপ্রবাহ , বৃষ্টিপাত প্রভৃতি ) মাধ্যমে অনবরত ক্ষয় হলে বেশ নীচু হয়ে যায় এবং তার বন্ধুরতা অনেকটা কমে যায় । এর ফলে যে ভূমিটির সৃষ্টি হয় তা অনেকটা সমভূমির মতাে । এজন্য ওই ভূমির নাম সমপ্রায় ভূমি । সমপ্রায় ভূমির মাঝে মাঝে দু-একটি কঠিন পাথরের টিলা দেখা যায় , এগুলির নাম মোনাডনক । উদাহরণ — ছােটোনাগপুর মালভূমির কোনাে কোনাে অংশ সমপ্রায় ভূমি । এখানকার পরেশনাথ , পাঞ্চেত প্রভৃতি পাহাড় মোনাডনক ।
পেডিমেন্ট :
মরু অঞ্চলে প্রবল বেগে প্রবাহিত বায়ুর ক্ষয়কার্যের ফলে পর্বতের পাদদেশে কিছুটা ঢালু সমভূমির সৃষ্টি হয় , এর নাম পেডিমেন্ট । উদাহরণ — সাহারা মরুর অন্তর্গত আটলাস পর্বতের পাদদেশে পেডিমেন্ট দেখা যায় ।
ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি
কোনাে কোনাে সমভূমি ভূ-আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয় , যেমন —
উন্নত ও অবনত সমভূমি :
ভূ-আন্দোলনের ফলে সমুদ্রের অগভীর অংশসমূহ ওপরে উঠে উন্নত সমভূমি এবং উচ্চস্থান সমূহ নীচে বসে গিয়ে অবনত সমভূমির সৃষ্টি হয় । উদাহরণ — আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো উপসাগরের তীরবর্তী উপসাগরীয় সমভূমি এবং তুরানের নিম্নভূমি যথাক্রমে উন্নত ও অবনত সমভূমির দুটি বিশিষ্ট নিদর্শন ।