মালভূমি
Contents
মালভূমি
সমুদ্রতল থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে অবস্থিত ( প্রায় ৩০০-৬০০ মি. ) , উপরিভাগ প্রায় সমতল বা কিছুটা তরঙ্গায়িত এবং চারদিকে খাড়া ঢাল যুক্ত বিস্তৃত ভূমিকে বলে মালভূমি । যেহেতু মালভূমি দেখতে অনেকটা টেবিলের মতাে অর্থাৎ এর ওপরটা প্রায় সমতল এবং চারদিকে খাড়া ঢাল থাকে , এজন্য মালভূমির আর এক নাম টেবিল ল্যান্ড । মালভূমির ওপর অনেক সময় ছােটো ছােটো পাহাড় থাকে ।
উদাহরণ — তিব্বতের মালভূমি , কানাডার লরেন্সিয়াম মালভূমি , ব্রাজিলের মালভূমি , ভারতের ছোটোনাগপুর মালভূমি , দাক্ষিণাত্যের মালভূমি প্রভৃতি মালভূমির উল্লেখযােগ্য উদাহরণ ।
মালভূমির শ্রেণিবিভাগ
উৎপত্তি অনুসারে মালভূমিকে প্রধানত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা —
( ১ ) পর্বতবেষ্টিত মালভূমি ( ভূ-আলোড়নের ফলে সৃষ্ট মালভূমি ) ,
( ২ ) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ( ক্ষয়জাত মালভূমি ) এবং
( ৩ ) লাভা গঠিত মালভূমি ( সঞ্চয়জাত মালভূমি ) ।
পর্বতবেষ্টিত মালভূমি :
ভূ-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত তৈরি হওয়ার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বতশ্রেণীর মাঝখানের জায়গাগুলি চাপের জন্য উঁচু হয়ে মালভূমি সৃষ্টি হয় । এই মালভূমির চারদিকে পর্বত থাকে বলে এর নাম পর্বতবেষ্টিত মালভূমি । উদাহরণ — তিব্বতের মালভূমি । এই মালভূমি উত্তরে কুয়েনলুন এবং দক্ষিণে কারাকোরাম , তিয়েনসান ও হিমালয় পর্বত দ্বারা বেষ্টিত । এছাড়া , তুরস্কের আনাতোলিয়া মালভূমি , ইরাকের মালভূমি প্রভৃতি এই শ্রেণির অন্তর্গত ।
ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি :
নদী , বায়ু , হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং এর উচ্চতাও হ্রাস পায় । নদনদী এবং সেগুলির শাখা প্রশাখা মালভূমিটিকে ধীরে ধীরে ছােটো ছােটো অংশে ভাগ করে ফেলে । এইভাবে কোনাে বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল সংকীর্ণ নদী উপত্যকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে বলে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি । উদাহরণ — ছোটোনাগপুর মালভূমি , কর্ণাটক মালভূমির মালনা অঞ্চল প্রভৃতি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উদাহরণ ।
লাভা গঠিত মালভূমি :
অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূত্বকের কোনাে ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে সঞ্চিত হয় এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে মালভূমি সৃষ্টি করে । এই ধরনের মালভূমিকে লাভা গঠিত মালভূমি বলে । উদাহরণ — ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশের লাভা মালভূমি এর বিশিষ্ট উদাহরণ । এর আর এক নাম ডেকান ট্র্যাপ । আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া-স্নেক মালভূমিও লাভা গঠিত মালভূমির উদাহরণ ।
অন্যান্য মালভূমি :
ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় পর্বতের পাদদেশে অনেক সময় মালভূমি তৈরি হয় , এর নাম পাদদেশীয় মালভূমি । উদাহরণ — উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশে কলোরাডো মালভূমি ।
ভূ-আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন অংশসমূহ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে মালভূমি তৈরি করে , একে বলে মহাদেশীয় মালভূমি । উদাহরণ — ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও আরবের মালভূমি ।
মালভূমির বৈশিষ্ট্য
( ১ ) মালভূমির উচ্চতা সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৬০০ মিটার হলেও কোনাে কোনাে মালভূমির উচ্চতা এর চেয়ে অনেক বেশি , যেমন — পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমি পামির ( গড় উচ্চতা ৪,৮০০ মিটারের বেশি ) এবং পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি তিব্বত ( উচ্চতা প্রায় ৪,০০০ মি ) । এগুলি উচ্চ মালভূমি । আবার নিম্ন মালভূমিও অনেক আছে , যেগুলির উচ্চতা গড়ে ৬০০ মিটারেরও কম ।
( ২ ) বিস্তৃত উচ্চভূমি ,
( ৩ ) উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত বা প্রায় সমতল এবং
( ৪ ) চারদিকের ঢাল বেশ খাড়া অর্থাৎ মালভূমি অনেকটা টেবিলের মতাে দেখতে ।
মালভূমি কিভাবে গঠিত হয়
প্রধানত তিনটি কারণে মালভূমির সৃষ্টি হয় । যথা —
ভূ-আলোড়নের ফলে :
ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন স্থলভাগ গুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে এক একটি মালভূমিরূপে অবস্থান করে । একে বলে মহাদেশীয় মালভূমি । উদাহরণ – দাক্ষিণাত্য মালভূমি , আরবের মালভূমি প্রভৃতি । এছাড়া ভূ-আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময়ও মালভূমি গঠিত হয় ।
প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহের কার্যের ফলে :
সূর্য তাপ , বায়ু প্রবাহ , নদী , হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা অন্য কোনাে উচ্চভূমিকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে মালভূমিতে পরিণত করে । উদাহরণ — ছোটোনাগপুর মালভূমি ।
লাভা সঞ্চয়ের ফলে :
ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা লাভা রূপে ভূপৃষ্ঠে সঞ্চিত হয়েও মালভূমির সৃষ্টি হয় । উদাহরণ — ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ লাভা মালভূমি ।