ভূগোল

ভঙ্গিল পর্বত

Contents

ভঙ্গিল পর্বত 

Screenshot 2021 03 02 ভঙ্গিল পর্বত ছবি Google সার্চ
ভঙ্গিল পর্বত

বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ভূত্বকের শিলাস্তরে ঢেউ এর মতাে ভাঁজ পড়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় , তাকে বলে ভঙ্গিল পর্বত । 

উদাহরণহিমালয় পর্বতমালা ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণীর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ । এছাড়াও পৃথিবীতে অনেক ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণী আছে , যেমন — ইউরোপের আল্পস , উত্তর আমেরিকার রকি , দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ প্রভৃতি । 

ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি

ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি সম্পর্কে যেসব মতবাদ প্ৰচলিত আছে , তাদের মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুটি মতবাদ । এখানে উল্লেখ করা হল —

জিওসিনক্লাইন বা মহীখাত তত্ত্ব ( Geosyncline Theory ) : 

ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি সম্পর্কে এই তত্ত্বে বলা হয়েছে যে , বর্তমানে যেসব স্থানে আমরা ভঙ্গিল পর্বত দেখি , বহুযুগ আগে ওই স্থানগুলিতে ছিল অগভীর সমুদ্র । ভূতাত্ত্বিকগণ ওই অগভীর সমুদ্রগুলিকে বলেন জিওসিনক্লাইন বা মহীখাত । 

ভূতাত্ত্বিকদের মতে যুগ যুগ ধরে পলি সঞ্চিত হওয়ার ফলে ওই অগভীর সমুদ্র বা মহীখাতের তলদেশ ক্রমশ পলিতে ভরাট হয়ে যায় এবং পলি ধীরে ধীরে পাললিক শিলায় পরিণত হয় । এইভাবে ক্রমাগত পলি ও পাললিক শিলা জমা হওয়ার ফলে তার ভারে সাগর বা মহাসাগরের তলদেশ ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে থাকে বা বসে যায় এবং এর টানে দু-পাশের ভূমি ( স্থলভাগ ) মাঝখানে অর্থাৎ মুখােমুখি সামনের দিকে আসতে শুরু করে । দু-পাশের ভূমির প্রবল পার্শ্বচাপে সাগরের পাললিক শিলাস্তর বড়াে বড়াে ভাজের আকারে উঁচু হয়ে উঠে ( মেঝেতে বিছানাে মাদুর দু-পাশ থেকে চেপে ধরলে মাদুরে যেমন ভাঁজ পড়ে ) পর্বতের সৃষ্টি করে । এইভাবে ভাঁজ পড়ে সৃষ্টি হয় বলে একে ভঙ্গিল পর্বত বলে । 

প্লেট টেকটনিক তত্ত্ব বা পাত সংস্থান তত্ত্ব ( Plate Tectonic Theory ) : 

এই তত্ত্বানুসারে ভূত্বক প্রকৃতপক্ষে কতকগুলি পাত বা প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত এবং ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত পদার্থ সমূহের ওপর ওই পাত বা প্লেটগুলি ভেসে আছে । প্রচণ্ড উষ্ণতার জন্য ভূ-অভ্যন্তরে যে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয় তার ফলে প্লেটগুলি কিছুটা চলমান অবস্থায় আছে ( তবে গতি খুব কম , বছরে হয়ত ১০-২০ মিমি বা একটু কমবেশি ) । যেহেতু সব প্লেটের গতি সমান নয় তাই ভাসতে ভাসতে একটি প্লেট যখন অন্যটির খুব কাছাকাছি চলে আসে , তখন উভয়ের সংযােগস্থলে প্রচণ্ড চাপ পড়ে । এর ফলে ওই সংযােগ রেখা বরাবর ভূমিতে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয় ।

ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্য

ভূত্বকের শিলাস্তরে ভাঁজ পড়ে সৃষ্টি হয় ভঙ্গিল পর্বত । এই পর্বতের কতকগুলি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় , যেমন — 

( ১ ) ভাঁজ পড়ে এই পর্বতের সৃষ্টি এবং এজন্য এতে বিভিন্ন ধরনের অনেক ভাঁজ থাকে । 

( ২ ) দুটি ভাঁজের মাঝখানে যে নীচু অংশ থাকে তাকে বলে অধো ভঙ্গ বা সিনক্লাইন এবং ভাঁজের ওপরের উঁচু অংশকে বলে ঊর্ধ্ব ভঙ্গ বা অ্যান্টিক্লাইন । 

( ৩ ) ভাঁজের দু-দিকের বাহু যদি সমান ভাবে হেলানাে থাকে , তাকে প্রতিসম ভাঁজ বা সিমেট্রিক্যাল ফোল্ড বলে । কিন্তু একদিকের বাহু যদি একটু বেশি খাড়া থাকে , তখন তাকে বলে অসম বা অপ্রতিসম ভাঁজ বা অ্যাসিমেট্রিক্যাল ফোল্ড

( 8 ) ভাঁজের দুই বাহু যদি পরস্পর প্রায় সমান্তরাল থেকে একটি বিশেষ কোণে হেলানাে থাকে , তবে তাকে বলে অতিরিক্ত ভাঁজ বা ওভার ফোল্ড । 

( ৫ ) দুই বাহু ক্রমশ হেলতে হেলতে যদি এমন হয় যে , একটি বাহু আর একটি বাহুর ওপর শায়িত , তবে তাকে বলে রেকাম্বেন্ট ফোল্ড । 

( ৬ ) আবার , ওপরের বাহু তলার বাহু থেকে আলাদা হয়ে যদি কিছুটা এগিয়ে যায় , তাকে বলে ওভার থ্রাস্ট। 

( ৭ ) চাপ অত্যন্ত বেশি হলে এক বাহু অন্য বাহু থেকে একেবারে আলাদা হয়ে স্থানচ্যুত হয় । একে বলে ন্যাপ

( ৮ ) ভাঁজ ছাড়াও ভঙ্গিল পর্বতে প্রবল ভূ-আলােড়নের জন্য অনেক চ্যুতি বা ফল্ট -এর সৃষ্টি হয় । হিমালয় পর্বতে এই ধরনের অনেক চ্যুতি আছে । 

( ৯ ) ভঙ্গিল পর্বত প্রধানত পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত হয় । অবশ্য পাললিক শিলাস্তরের মধ্যে কিছু কিছু আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা দেখা যায় । 

( ১০ ) সমুদ্রগর্ভ থেকে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয় বলে পর্বতের বিভিন্ন অংশে অনেক জীবাশ্ম দেখা যায় । 

( ১১ ) ভঙ্গিল পর্বতের অধিকাংশ শৃঙ্গ বা চূড়া শঙ্কু আকৃতির হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!