রূপান্তরিত শিলা
Contents
রূপান্তরিত শিলা

কোনাে কোনাে সময় প্রবল ভূ-আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট প্রচণ্ড চাপের জন্য বা উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোতের সংস্পর্শে আসার জন্য অথবা রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য আগ্নেয় ও পাললিক শিলা আগেকার চেয়ে আরও কঠিন ও কেলাসিত হয়ে নতুন আর-এক ধরনের শিলায় পরিণত হয় । পূর্বের রূপ বা অবস্থার পরিবর্তন হয় বলে এই ‘ নতুন ’ শিলাটিকে পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা বলে । যেমন — গ্রানাইট থেকে রূপান্তরিত নিস , চুনাপাথর থেকে রূপান্তরিত মার্বেল প্রভৃতি ।
রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য
( ১ ) রূপান্তরের ফলে শিলা গঠনকারী খনিজসমূহ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে যায় । ফলে পূর্বেকার শিলা আরও কঠিন হয় এবং তার ক্ষয়রােধী ক্ষমতা বেড়ে যায় ।
( ২ ) আগ্নেয় ও পাললিক শিলার তুলনায় ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ।
( ৩ ) রূপান্তরের সময় খনিজ পদার্থগুলির পুনর্বিন্যাস হয় এবং প্রায়শই একটি দিকে চলে যায় । এজন্য রূপান্তরিত শিলাস্তরে বিভিন্ন ধরনের খনিজ দ্রব্যের ভাণ্ডার খুঁজে পাওয়া যায় ।
( ৪ ) এই শিলা স্তরহীন ।
( ৫ ) এই শিলায় জীবাশ্ম থাকে না । রূপান্তরের সময় প্রচণ্ড তাপ ও চাপের প্রভাবে শিলাস্তরের জীবাশ্ম নষ্ট হয়ে যায় ।
রূপান্তরিত শিলার শ্রেণীবিভাগ
রূপান্তরিত শিলাকে দু-ভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায় —
( ১ ) শিলার উৎস অনুসারে এবং
( ২ ) রূপান্তরের প্রক্রিয়া অনুসারে ।
শিলার উৎস অনুসারে :
শিলার উৎস অনুসারে রূপান্তরিত শিলাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় —
( i ) আগ্নেয় শিলার রূপান্তর , যেমন — গ্রানাইট থেকে নিস শিলা সৃষ্টি হয় ।
( ii ) পাললিক শিলার রূপান্তর , যেমন — কাদাপাথর থেকে স্লেট গঠিত হয় ।
( iii ) রূপান্তরিত শিলার রূপান্তর , যেমন — রূপান্তরিত শিলা স্লেটের রূপান্তর ঘটলে ফিলাইট এবং আরও রূপান্তরিত হলে সিস্ট পাথর উৎপন্ন হয় ।
রূপান্তরের প্রক্রিয়া অনুসারে :
রূপান্তরের প্রক্রিয়া অনুসারে রূপান্তরিত শিলাকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যথা —
( i ) তাপের প্রভাবে উত্তপ্ত তরল ম্যাগমার সংস্পর্শে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা , যেমন — গ্রানাইট থেকে নিস ।
( ii ) চাপের প্রভাবে — ভূ-আন্দোলনের ফলে উৎপন্ন প্রবল চাপে সৃষ্ট রূপান্তরিত শিলা , যেমন — কাদাপাথর পরিবর্তিত হয়ে স্লেট গঠিত হয় ।
( iii ) তাপ ও চাপের মিলিত প্রভাবে — ভূগর্ভের বেশ গভীরে তাপ ও চাপের যুগ্ম প্রভাবে শিলা রূপান্তরিত হয় । এইভাবেই চুনাপাথর পরিবর্তিত হয়ে মার্বেল পাথর সৃষ্টি হয় ।
( iv ) রাসায়নিক বিক্রিয়ায় — ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন , ভূগর্ভস্থ জল বা গ্যাসের সঙ্গে বিক্রিয়ার মাধ্যমেও শিলা রূপান্তরিত হয় । অথবা এই রাসায়নিক বিক্রিয়া শিলার রূপান্তরে সাহায্য করে ।
রূপান্তরিত শিলা কিভাবে গঠিত হয়
প্রধানত আগ্নেয় ও পাললিক শিলার গঠনগত ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয় । শিলার এই পরিবর্তন বা রূপান্তর একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া । তবুও সাধারণভাবে দেখা যায় তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিলার রূপান্তর বেশি হয় । এগুলি হল —
( ১ ) তাপ ,
( ২ ) চাপ এবং
( ৩ ) রাসায়নিক প্রক্রিয়া ।
তাপের প্রভাবে রূপান্তর : অনেক সময় ভূগর্ভ থেকে উৎক্ষিপ্ত উত্তপ্ত গলিত পদার্থের সংস্পর্শে এসে বা ভূগর্ভের মধ্যেই অত্যধিক তাপের জন্য শিলাসমূহ রূপান্তরিত হয় । তাপের জন্য এই রূপান্তর হয় বলে এর নাম তাপ বা স্পর্শ-সংযােগ রূপান্তর । গ্রানাইট এইভাবে নিস শিলায় রূপান্তরিত হয় ।
চাপের প্রভাবে রূপান্তর : প্রবল ভূ-আলােড়ন হলে ভূত্বকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রচণ্ড চাপের সৃষ্টি হয় , ফলে শিলাস্তরের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে । অত্যধিক চাপে শিলাস্তর সমূহ ব্যাপক ভাবে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলা গঠন করে । কাদাপাথর এইভাবে স্লেট ও সিস্ট শিলায় পরিবর্তিত হয় । অনেক সময় ভূগর্ভের অনেক নীচে তাপ ও চাপের মিলিত প্রভাবেও শিলা রূপান্তরিত হয় । চুনাপাথর থেকে মার্বেল এবং বেলেপাথর থেকে কোয়ার্টজাইট এই মিলিত প্রভাবেই সৃষ্টি হয় ।
রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় রূপান্তর : অনেক সময় রাসায়নিক প্রক্রিয়াতেও শিলা রূপান্তরিত হয় । যেমন — বিভিন্ন ধরনের খনিজের সমন্বয়ে শিলা গঠিত হয় । শিলায় জল পড়লে ( বৃষ্টির জল , নদীর জল প্রভৃতি ) বা ভূগর্ভস্থ জল ও গ্যাসের সংস্পর্শে কোনাে কোনাে খনিজের রাসায়নিক পরিবর্তন হয় এবং পূর্বেকার শিলার রূপান্তর ঘটে । অবশ্য এর সঙ্গে তাপ ও চাপেরও কিছুটা প্রভাব থাকে ।