আগ্নেয় শিলা
Contents
আগ্নেয় শিলা
ভূত্বকে উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ ম্যাগমা এবং ভূপৃষ্ঠে উত্তপ্ত লাভা জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয়েছে , তাকে বলে আগ্নেয় শিলা । পৃথিবী সৃষ্টির আদি পর্যায়ে গলন্ত আগ্নেয় পদার্থসমূহ বা ম্যাগমা ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয় এবং জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলা সৃষ্টি করে । পরবর্তীকালে ভূত্বকের ছােটো-বড়াে বিভিন্ন ফাটল ও আগ্নেয়গিরির মুখ দিয়ে উত্তপ্ত তরল লাভা বেরিয়ে এসে ভূপৃষ্ঠে জমা হয় এবং কালক্রমে তা ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় ।
আগ্নেয় শিলার উদাহরণ — গ্রানাইট ও ব্যাসল্ট দুটি প্রধান আগ্নেয় শিলা ।
আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য
ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত আগ্নেয় পদার্থ সমূহ বা উত্তপ্ত তরল শিলাস্রোত জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয় বলে আগ্নেয় শিলার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় —
( ১ ) আগ্নেয় শিলার উপাদানগুলি বা খনিজের কণাগুলি পরস্পরের সঙ্গে অত্যন্ত ঘন ভাবে বিন্যস্ত থাকে ।
( ২ ) বিশৃঙ্খলভাবে বিভিন্ন আকৃতি ও আয়তনের কেলাস নিয়ে এই শিলা গঠিত হয় । তাই অনেক সময় এগুলি স্বচ্ছ কাচের মতাে বা স্ফটিকাকার হয় ।
( ৩ ) অত্যন্ত কঠিন , ভারী এবং সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না ।
( ৪ ) শিলার স্তরবিন্যাস থাকে না ।
( ৫ ) এতে কোনাে জীবাশ্মও থাকে না ।
( ৬ ) অনেক সময় অন্য কোনাে স্থানীয় শিলার মধ্যে শিরা-উপশিরার আকারে গ্রথিত থাকতেও দেখা যায় ।
( ৭ ) বিভিন্ন প্রকার ধাতব খনিজ দ্রব্য , যেমন — আকরিক লােহা , তামা , রুপা , সােনা প্রভৃতি এই শিলার মধ্যে পাওয়া যায় ।
উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলার প্রকারভেদ
উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয় —
( ১ ) নিঃসারী আগ্নেয় শিলা ও
( ২ ) উদবেধী আগ্নেয় শিলা ।
নিঃসারী আগ্নেয় শিলা :
ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত গলিত পদার্থ বা ম্যাগমা আগ্নেয়গিরি বা ভূত্বকের ফাটল দিয়ে বেরিয়ে এসে গলন্ত লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে প্রবাহিত হয় এবং বাতাস লেগে তাড়াতাড়ি ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে যে শিলার সৃষ্টি করে , তাকে বলে নিঃসারী আগ্নেয় শিলা । বাতাসের ছোঁয়ায় তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হয়ে জমাট বাঁধে বলে এই শিলার দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম বা মিহি হয় । উদাহরণ – ব্যাসল্ট , রায়োলাইট , অ্যান্ডিসাইট প্রভৃতি ।
নিঃসারী আগ্নেয় শিলার শ্রেণিবিভাগ — উৎপত্তির তারতম্য অনুসারে নিঃসারী আগ্নেয় শিলাকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- ( i ) লাভা শিলা এবং ( ii ) পাইরোক্লাস্ট শিলা ।
লাভা শিলা : যেসব নিঃসারী শিলা লাভা প্রবাহ ঠান্ডা হয়ে ও জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয় সেগুলিকে লাভা শিলা বলে । উদাহরণ — ব্যাসল্ট ।
পাইরোক্লাস্ট শিলা : আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় আগ্নেয়গিরির গায়ে এবং বিভিন্ন ছিদ্রপথে আগেকার জমে থাকা কঠিন লাভা , সিন্ডার , ভস্ম প্রভৃতি বেরিয়ে আসে । এই ছােটো ছােটো শিলাখণ্ডগুলিও নিঃসারী আগ্নেয় শিলার অন্তর্গত । এগুলিকে বলে পাইরোক্লাস্ট শিলা । উদাহরণ — টাফ ।
উদবেধী আগ্নেয় শিলা :
অনেক সময় ভূগর্ভস্থ উত্তপ্ত তরল পদার্থ বা ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছােতে পেরে ভূগর্ভের ভেতরেই দীর্ঘকাল ধরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয় । এই ধরনের শিলাকে উদবেধী আগ্নেয় শিলা বলে । উদবেধী শিলার শ্রেণিবিভাগ — উদবেধী শিলাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় — ( i ) পাতালিক আগ্নেয় শিলা এবং ( ii ) উপপাতালিক আগ্নেয় শিলা ।
পাতালিক আগ্নেয় শিলা : যখন ম্যাগমা ভূগর্ভের অনেক নীচে বহুকাল ধরে ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে কঠিন শিলায় পরিণত হয় , তখন তাকে পাতালিক আগ্নেয় শিলা বলে । এগুলি কেলাসিত হয় বলে এদের কেলাসিত শিলাও বলা হয় । ভূগর্ভের অনেক নীচে থাকে বলে খুব ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয় । এজন্য এর দানাগুলি খুব বড়াে হয় । উদাহরণ — গ্রানাইট , গ্যাব্রো , পেরিডােটাইট প্রভৃতি ।
উপপাতালিক আগ্নেয় শিলা : ভূগর্ভের খুব নীচে নয় , ভূপৃষ্ঠের প্রায় কাছাকাছি কোনাে ফাটলের মধ্যে ম্যাগমা বা উত্তপ্ত গলিত আগ্নেয় পদার্থ ঠান্ডা ও শক্ত হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় , তাকে বলে উপপাতালিক আগ্নেয় শিলা । এর দানাগুলি নিঃসারী শিলার মতাে তেমন সূক্ষ্ম হয় না , আবার পাতালিক শিলার মতাে অত বড়ােও হয় না , অর্থাৎ মাঝারি ধরনের হয় । আর এগুলি পুরাে কেলাসিত হয় না বলে এদের প্রায়-কেলাসিত শিলাও বলা হয় । উদাহরণ — ডলেরাইট , পরফাইরি প্রভৃতি ।
আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় না কেন
সাগর-মহাসাগরের তলদেশে সঞ্চিত পলিরাশি যখন ক্ৰমে ক্ৰমে পাললিক শিলায় পরিণত হয় , তখন তার মধ্যে উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহও চাপা পড়ে যায় এবং ধীরে ধীরে সেগুলি প্রস্তরীভূত হলে পাথরের মধ্যে সেইসব উদ্ভিদ ও প্রাণীর ছাপ থেকে যায় । উদ্ভিদ ও প্রাণীর ছাপযুক্ত সেই প্রস্তরকে বলে জীবাশ্ম । উত্তপ্ত শিলাস্রোত বা ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হয়ে যখন আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় , তখন তার মধ্যে কোনাে উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ চাপা পড়লেও তা নষ্ট হয়ে যায় , প্রস্তরে তার কোনাে ছাপ থাকে না । এজন্যই আগ্নেয় শিলায় জীবাশ্ম দেখা যায় না ।
আগ্নেয় শিলায় খনিজ তেল পাওয়া যায় না কেন
সাগর-মহাসাগরের তলদেশে সঞ্চিত পলিরাশি যখন ক্রমে ক্রমে পাললিক শিলায় পরিণত হয় , তখন তার মধ্যে খুব ছােটো ছােটো সামুদ্রিক প্রাণী , ব্যাকটেরিয়া , উদ্ভিদকোশ , জীবকোশ প্রভৃতি সঞ্চিত হয় । তারপর ওপরের পলিস্তরের চাপ ও নীচের তাপ এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ওই সঞ্চিত পদার্থের মধ্যে থেকে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন সরে গিয়ে হাইড্রোজেন ও কার্বনের এক রাসায়নিক যৌগ সৃষ্টি হয় , যাকে আমরা বলি খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম । উত্তপ্ত শিলাস্রোত বা ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হয়ে যখন আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি হয় , তখন তার মধ্যে প্রাণীদেহ , উদ্ভিদকোশ , ব্যাকটেরিয়া , জীবকোশ প্রভৃতি চাপা পড়লেও প্রচণ্ড উত্তাপে তা নষ্ট হয়ে যায় , হাইড্রোজেন ও কার্বনের রাসায়নিক যৌগ সৃষ্টি হওয়ার কোনাে সুযােগই থাকে না । এজন্যই আগ্নেয় শিলায় খনিজ তেল পাওয়া যায় না ।
Wonderfull