কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধ
কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধ

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনােন্মুখতার সুযােগে দক্ষিণ ভারতও অষ্টাদশ শতকে প্রায় স্বাধীন হয়ে গিয়েছিল । দাক্ষিণাত্যের মুঘল সুবাদার নিজাম-উল-মুলক ছিলেন কার্যত স্বাধীন । আবার তার অধীনস্থ আঞ্চলিক শাসকরাও প্রায় স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করতেন । দাক্ষিণাত্যের এ হেন রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতার সুযােগে ফরাসি ও ইংরেজ বণিকেরা ওই অঞ্চলে স্ব স্ব বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপনে সমর্থ হয়েছিল । দাক্ষিণাত্যে ফরাসিদের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল পণ্ডিচেরী এবং ইংরেজদের প্রধান ঘাঁটি ছিল মাদ্রাজের সেন্ট ডেভিড । স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের স্বাধীনতাকামিতা , বিচ্ছিন্নতা ও পারস্পরিক মতভেদের সুযােগ নিয়ে উভয় বণিক সম্প্রদায়ই ভারতীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে । অবশ্য তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল স্ব স্ব বাণিজ্য বিস্তার করা । যাই হােক , ক্ষমতা দখলের জন্য এই অঞ্চলে ইংরেজ ও ফরাসি বণিকেরা তিনটি বড়াে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল । এগুলিই সাধারণভাবে ‘ কর্ণাটের যুদ্ধ ’ বা ‘ কর্ণাটকের যুদ্ধ ’ নামে খ্যাত ।
ডুপ্লে ফ্রান্সে ফিরে যাবার পর ভারতের ফরাসি প্রতিপত্তি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে । ১৭৫৬ খ্রিস্টাব্দে ইউরােপে ‘ সপ্তবর্ষ ব্যাপী যুদ্ধের ’ সূচনা হলে ভারতেও ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্ব অনিবার্য হয়ে উঠে । এই সংঘাতের প্রধান কেন্দ্র বাংলাদেশ হলেও , দাক্ষিণাত্যও যুদ্ধহীন থাকল না । শুরু হল ‘ তৃতীয় কর্ণাটক-এর যুদ্ধ ‘ । এই সময় পণ্ডিচেরীতে ফরাসি গভর্নর ছিলেন কাউন্ট লালি । ভলতেয়ার -এর মতে , লালি ছিলেন সৌজন্যবােধ ও কাঠিন্যের মূর্ত প্রতীক , কিন্তু ভারতে এসে লালি কেবল কঠোরতাই দেখিয়েছিলেন । তাই তিনি এদেশে আদৌ জনপ্রিয় ছিলেন না । যাই হােক , লালি ইংরেজদের উপর অতর্কিত আঘাত হেনে সেন্ট ডেভিড দখল করেন । কিন্তু তাঞ্জোর দখল করতে গিয়ে ব্যর্থ হন । অতঃপর তিনি মাদ্রাজ দখল করে ইংরেজদের পঙ্গু করে দিতে উদ্যোগী হন । কিন্তু ইংরেজ সেনাপতি আয়ার কুটের হাতে ‘ বন্দিবাসের যুদ্ধ -এ ’ ( ১৭০৬ খ্রিঃ ) লালি সম্পূর্ণ পরাজিত হন । লালি পণ্ডিচেরীতে আশ্রয় নেন । কিন্তু ইংরেজরা পণ্ডিচেরী অবরুদ্ধ করে রাখলে লালি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন । ইতিমধ্যে বুসি হায়দ্রাবাদ থেকে সরে আসার ফলে ওই অঞ্চলেও ফরাসি কর্তৃত্ব চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল । জিঞ্জি ও মাহে ফরাসিদের হস্তচ্যুত হয় । ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ প্যারিসের চুক্তি ’ দ্বারা যুদ্ধের অবসান ঘটে । সন্ধির শর্তানুযায়ী ফরাসিরা পণ্ডিচেরী , মাহে প্রভৃতি স্থান ফিরে পেলেও তাদের ক্ষমতা বিস্তারের আর কোনাে সম্ভাবনা অবশিষ্ট ছিল না । অতঃপর ইংরেজ শক্তি ভারতে দ্রুত বিস্তারলাভ করতে থাকে ।