ইতিহাস

জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার কারণ

Contents

জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার কারণ

images 3
জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার কারণ

বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে বৃহৎ শক্তিবর্গ অনেক আশা নিয়ে জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠা করেছিল । জাতিপুঞ্জের মতাে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান যেভাবে বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধ ও সমস্যাগুলির সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে তাতে জাতিপুঞ্জের অসারতাই প্রমাণিত হয়েছে । বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা এত প্রকট হয়ে ধরা পড়েছে । যে এইরকম একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়ােজনীয়তা কী সে বিষয়েও প্রশ্ন উঠেছে ।

যুদ্ধ অবসানে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের মূল লক্ষ্য ছিল বিশ্বকে যুদ্ধ মুক্ত করা , কিন্তু এক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ অনেকাংশে ব্যর্থ । বিশ্বের বহু জায়গায় বিশেষত সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলিতে উদ্ভূত বিভিন্ন সংকটের সমাধানে জাতিপুঞ্জ কার্যত ব্যর্থই বলা চলে । আসলে যে সকল যুদ্ধের সঙ্গে বিশ্বের দুই অতি বৃহৎ শক্তি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়া প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল সেই সব ক্ষেত্রে যুদ্ধ সমস্যার সমাধানে জাতিপুঞ্জ ব্যর্থ হয়েছে ।

নিরস্ত্রীকরণে 

বিশ্বে নিরস্ত্রীকরণ সমস্যার সমাধানে জাতিপুঞ্জ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ । জাতিপুঞ্জে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণের যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল বিশ্বের বৃহৎ শক্তিবর্গ তা অমান্য করেছিল । গােপনে আমেরিকা , সােভিয়েত রাশিয়া , ফ্রান্স , ব্রিটেন , চীন পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যায় । এক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জের অসহায়তা ব্যর্থতারই নামান্তর । 

বর্ণবিদ্বেষ রােধে 

জাতিপুঞ্জে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই চালানাের অঙ্গীকার করা হলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচার এবং রােডেশিয়ায় বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে জাতিপুঞ্জ কোনাে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেনি । 

সন্ত্রাসবাদ রোধে 

বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা রক্ষার বড়াই করলেও জাতিপুঞ্জ সন্ত্রাসবাদের মূলােৎপাটনে ব্যর্থ । আল কায়দা , লস্কর-ই-তৈবা , এল.টি.টি.ই -সহ বিভিন্ন উগ্রপন্থী ও সন্ত্রাসবাদী গােষ্ঠী যে নাশকতামূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে তার অবসান ঘটাতে জাতিপুঞ্জ ব্যর্থ । 

বৃহৎ শক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের উৎখাতের জন্য যে সামরিক অভিযান চালিয়েছে তার বিরুদ্ধে বা ভিয়েতনামের যুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে জাতিপুঞ্জ নীরব থেকেছে । ইরাকের বিরুদ্ধে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আক্রমণ বা সাদ্দাম হােসেনের সরকারকে উৎখাত করে সাদ্দামের ফাঁসি দিলে এবং ইরাকে মার্কিনরা নিজের তাঁবেদার সরকার বসালেও জাতিপুঞ্জ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করা ছাড়া আর কিছুই করেনি । 

উপসংহার 

জাতিপুঞ্জের নিজস্ব অর্থনৈতিক সমস্যা রয়েছে । জাতিপুঞ্জকে দেওয়া আর্থিক অনুদানের বেশিরভাগটাই যেহেতু আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে , তাই জাতিপুঞ্জ বেশ কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন চাপের জন্য স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নিতে অপারগ । জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন দপ্তরকে দায়িত্ববান করে তােলার ক্ষেত্রেও সুচিন্তিত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । তাই জাতিপুঞ্জের বিভিন্ন দপ্তরের কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়ে গেছে , যার ফলস্বরূপ বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে জাতিপুঞ্জ ব্যর্থ হয়েছে । জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে ইউনাইটেড নেশন্স -এর রিপাের্টে উল্লেখ করা হয় , জাতিপুঞ্জের ব্যর্থতার অর্থ মানবজাতির ব্যর্থতা .. (“ The failure of the United Nations is the failure of the human community … ”)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!