ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান

ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান

index 2
ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান

প্রায় ৫০ বৎসরকাল ধরে চলা ঠান্ডা যুদ্ধের ঠিক কবে অবসান ঘটল তা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে । তবে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর সােভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির সময়কে অনেকে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানকাল বলে উল্লেখ করেছেন । কারণ এর ফলে বিশ্বরাজনীতি একমেরুকেন্দ্রিক হয়ে যায় । বিশ্বরাজনীতিতে সােভিয়েত প্রাধান্য ম্লান হয়ে পড়ে । একদিকে আমেরিকা ও অন্যদিকে চিনের সঙ্গে মৈত্রী বজায় রাখতে সে উদ্যোগী হয়ে ওঠে । 

ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের কারণ

বিভিন্ন সময়ে আয়ােজিত একাধিক সম্মেলনে গৃহীত প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে ঠান্ডা লড়াই রাজনীতির অবসান ঘটে ।

জেনেভা শীর্ষ বৈঠক : 

জেনেভায় সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচভ এবং মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান রোনাল্ড রেগন আফগানিস্তান সংকটের পর পারমাণবিক যুদ্ধকে আটকানাের ব্যাপারে সহমত হন । যা ঠান্ডা লড়াই অবসানে প্রথম সদর্থক পদক্ষেপ বলা চলে ।

আইসল্যান্ড শীর্ষ বৈঠক : 

রােনাল্ড রেগন ও মিখাইল গর্বাচভ যুদ্ধের পথ পরিহার এবং পরমাণবিক অস্ত্র প্রতিযােগিতা হ্রাসের লক্ষ্যে পুনরায় আইসল্যান্ড ( রেইকাজাভিক ) শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন ( ১৯৮৬ খ্রি. ১১ )।

ওয়াশিংটন সম্মেলন :

১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরে যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তার নাম ওয়াশিংটন সম্মেলন । এই সম্মেলনেই প্রথম সুদূর প্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষ্যে গর্বাচভ রেগনের মধ্যে INFT চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই সম্মেলনে আমেরিকা , ব্রিটেন , ফ্রান্স ও জাপান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে একে অপরের সঙ্গে সহযােগিতা করে চলবে । অধ্যাপক এরিক হবসনের  মতে —১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ওয়াশিংটন সম্মেলনেই ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃত অবসান ঘটেছিল । 

মস্কো শীর্ষ বৈঠক :

গর্বাচভ ও রেগন এই শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়ে ( ১৯৮৮ খ্রি. ২৯ মে ) INFT চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন । এই শীর্ষ বৈঠকে তাঁরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতির লক্ষ্যে যৌথ বিবৃতি দেন এবং নিরস্ত্রীকরণ প্রচেষ্টাকে সফল করার জন্য বিভিন্ন দরকারি নথিপত্র বিনিময় করেন । 

মাল্টা শীর্ষ সম্মেলন : 

নব নির্বাচিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ বুশ ( সিনিয়র ) এবং সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান গর্বাচভ রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নয়নের লক্ষ্যে মাল্টা বৈঠকে ( ১৯৮৯ খ্রি. ২ ডিসেম্বর ) মিলিত হন । মাল্টা শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জর্জ এইচ. বুশকে সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান গর্বাচভ বলেছিলেন — আমরা আর আপনাদের শত্রু বলে মনে করি না । তাই অনেকে এই মাল্টা সম্মেলনকেই ঠান্ডা লড়াইয়ের বাস্তবিক অবসান হিসেবে গণ্য করে থাকেন । 

হেলসিঙ্কি শীর্ষ বৈঠক :

মাল্টা শীর্ষ বৈঠকের পর পুনরায় গর্বাচভ ও বুশ রাসায়নিক অস্ত্র বিনষ্টের লক্ষ্যে ওয়াশিংটন শিখর সম্মেলনে ( ১৯৯০ খ্রি. ৩০ মে ) মিলিত হন । এই বছরেই গর্বাচভ ও বুশ উপসাগরীয় সংকট ( ইরাক কর্তৃক কুয়েত দখল ) মােচনের লক্ষ্যে হেলসিঙ্কি শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হন ও উপসাগরীয় যুদ্ধ সংকটের অবসানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাবগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য সচেষ্ট হন । 

প্যারিস শীর্ষ সম্মেলন :

কেউ কেউ ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের প্যারিস সম্মেলনে গৃহীত প্যারিস চার্টারকে ঠান্ডা লড়াইয়ের সমাপ্তি বলে মনে করেন । কারণ ওই সম্মেলনকে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বুশ নিজেই ঠান্ডা লড়াইয়ের সমাপ্তি বলে অভিহিত করেছিলেন । 

মন্তব্য 

১৯৮৯-৯১ খ্রি. মধ্যবর্তী সময়েই ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটেছে বলে মনে করেন বেশিরভাগ ঐতিহাসিক । প্রকৃত অর্থে সােভিয়েত ইউনিয়নের আনুষ্ঠানিক অবলুপ্তির ( ২৬ ডিসেম্বর ১৯৯১ খ্রি. ) সঙ্গে সঙ্গেই বিশ্বে ঠান্ডা লড়াইয়ের আনুষ্ঠানিক অবসান হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

x
error: Content is protected !!