গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতি
Contents
গ্লাসনস্ত ও পেরেস্ত্রইকা নীতি

সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ( ১৯৮৬ খ্রি. ২৬ ফেব্রুয়ারি ) সােভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান মিখাইল গর্বাচভ তাঁর নতুন নীতি ( New policy ) ‘ গ্লাসনস্ত ’ ( Glasnost ) ও ‘ পেরেস্ত্রইকা ’ ( perostroika ) -র প্রস্তাব পেশ করেন । এর দ্বারা গর্বাচভ কমিউনিস্ট শাসনকে স্বৈরতন্ত্রের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক ও মানবিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন । গ্লাসনস্ত শব্দটির অর্থ হল মুক্ত চিন্তা বা স্বচ্ছতা ( openness or transparency ) এবং পেরেস্ত্রইকার অর্থ হল পুনর্গঠন ( reconstruction ) ।
গ্লাসনস্ত নীতি
গ্লাসনস্ত অর্থাৎ মুক্ত চিন্তা প্রবর্তন করে গর্বাচভ চেয়েছিলেন ,
1. রাজনৈতিক , সামাজিক , অর্থনৈতিক — সমস্ত ক্ষেত্রেই স্বাধীন ও মুক্ত আলােচনা । অর্থাৎ ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর এতদিন যেসব বাধা ছিল তার অপসারণ ।
2. কমিউনিস্ট দলের একনায়কত্বের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদের ভােটাধিকার ও সমস্ত রাষ্ট্রীয় পদেই নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ।
3. সােভিয়েত রাষ্ট্রে অ-কমিউনিস্ট দল গঠনের অধিকার ।
4. কমিউনিস্ট পার্টিকে গণতান্ত্রিক কাঠামাের ভিত্তিতে পরিচালনা । দলে বিতর্ককে গুরুত্ব দেওয়া ; কোনাে ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠের মত চাপিয়ে না দেওয়া ।
পেরেস্ত্রইকা নীতি
গর্বাচভের পেরেস্ত্রইকার অর্থাৎ অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের মূল কথা ছিল—
1. পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা রচিত হবে ।
2. ‘ কম্যান্ড অর্থনীতি’র বদলে বাজার অর্থনীতি চালু করা । অর্থাৎ সরকারি ও বেসরকারি উভয় উৎপাদন ব্যবস্থারই সহাবস্থান ।
3. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য উন্নত পশ্চিমি রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানাের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তােলা ।
মূল্যায়ন
মরচে পড়া সােভিয়েত অর্থনীতিকে গতিশীল করে তােলার জন্যই গর্বাচভ ‘ পেরেস্ত্রইকা’র পথ বেছে নেন । কাজেই বলা যেতে পারে , ‘ গ্লাসনস্ত ’ ও ‘ পেরেস্ত্রইকা’র মধ্য দিয়ে কেবল প্রাতিষ্ঠানিক পরিবর্তনই নয় , রাষ্ট্রের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সার্বিক মূল্যবােধের পরিবর্তন ঘটিয়ে গর্বাচভ সােভিয়েত ইউনিয়নকে পশ্চিমি দেশগুলির মতােই উন্নত পর্যায়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন । রুশ লেখক আনাতােলি বুতেনকো-র মতে — সমালােচনা আত্মসমালােচনার সূত্রে গ্লাসনস্ত সমাজতান্ত্রিক নীতিকে আরও কার্যকর করে তুলতে সক্ষম ।