সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নীতি
Contents
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নীতি
জাতিপুঞ্জের সনদের প্রস্তাবনা সহ অন্য ধারাগুলিতে এর নীতিগুলি বর্ণিত হয়েছে । জাতিপুঞ্জের সনদের 2 নং ধারায় বলা আছে যে, এই বিশ্ব প্রতিষ্ঠানটি ও তার সব সদস্য রাষ্ট্র কয়েকটি নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হবে। জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যগুলিকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে এই সমস্ত নীতি সংযোজিত হয়েছে।

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের 2 নং ধারায় সদস্য রাষ্ট্রগুলির অবশ্য পালনীয় সাতটি মৌলিক নীতির উল্লেখ আছে। এই সাতটি নীতি হলো —
সাম্য নীতির ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের 2(1) নং ধারা অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির সার্বভৌমত্ব সাম্যের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। এই নীতি অনুযায়ী সাধারণ সভার প্রতিটি সদস্যরাই একটি করে ভোট প্রদানের ক্ষমতা লাভ করে।
দায়িত্ব পালন
সনদের 2(2) নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র তাদের সদস্যগত অধিকার ও সুযোগ সুবিধাগুলি সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সনদে ঘোষিত দায়িত্বগুলি পালন করবে এবং বিধিগুলি মেনে চলবে।
শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে বিবাদের মীমাংসা
সনদের 2(3) নং ধারা অনুসারে, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রই শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে এমনভাবে আন্তর্জাতিক বিবাদের মীমাংসার চেষ্টা চালাবে যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচার বিঘ্নিত না হয়।
সংযম বজায় রাখা
সনদের 2(4) নং ধারা অনুসারে, জাতিপুঞ্জের সকল সদস্য অন্য কোন রাষ্ট্রের রাজনৈতিক বা স্বাধীনতা বা ভৌগোলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে বা জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধে গিয়ে ভীতি প্রদর্শন বা বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকবে।
সাহায্যের অঙ্গীকার
সনদের 2(5) নং ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রই জাতিপুঞ্জকে তার প্রয়োজন মতো বিভিন্ন ব্যাপারে সাহায্য করবে। কিন্তু রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক শাস্তি প্রদানকারী রাষ্ট্রকে কোনরকম সাহায্য দান করা থেকে বিরত থাকবে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রগুলি।
বিশ্ব শান্তি রক্ষা
সদস্য নয় এমন রাষ্ট্রগুলিও যাতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রয়োজনে জাতিপুঞ্জের সনদের নীতিগুলি মেনে চলে, তার জন্য সনদের 2(6) নং ধারা অনুসারে, সকল সদস্য রাষ্ট্র চেষ্টা চালাবে।
রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা
সনদের 2(7) নং ধারা অনুযায়ী, জাতিপুঞ্জ কোন রাষ্ট্রেরই অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে সনদের সপ্তম অধ্যায় অনুযায়ী কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে জাতিপুঞ্জ হস্তক্ষেপের অধিকারী।
মন্তব্য
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সনদের 2 নং ধারায় উল্লিখিত নীতিগুলি সব সময় সঠিকভাবে পালন করা হয়নি। যেমন, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যদের ভেটো-প্রয়োগ ক্ষমতা সার্বভৌমত্বের সাম্যের নীতির বিরোধী। আবার রাষ্ট্রসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলি সমবায় সনদের নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য সনদের নীতিগুলিকে উপেক্ষা করেছে। তাই বিশিষ্ট আইনবিদ ওপেনহাইম বলেছেন, একথা বলা যায় না যে, সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির মধ্যে বিশ্বজনীনতা সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হয়েছে।