সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠার পটভূমি
Contents
সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠার পটভূমি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয় সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা ইউনাইটেড নেশনস অর্গানাইজেশন বা U.N.O । জাতিপুঞ্জের প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিল আমেরিকা, সোভিয়েত রাশিয়া, ইংল্যান্ড এই তিন বৃহৎ রাষ্ট্রশক্তি সহ বিশ্বের বহু দেশ।
লন্ডন ঘোষণা পত্র
1941 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে লন্ডনে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, কানাডার প্রতিনিধিরা বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও বিশ্ববাসীর নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে এক সম্মেলনে মিলিত হয়ে এক আন্তর্জাতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখেন।
আটলান্টিক সনদ
1948 খ্রিস্টাব্দের 9 আগস্ট মার্কিন রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আমেরিকার নিউ ফাউন্ডল্যান্ড দ্বীপের কাছে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রিন্স অব ওয়েলস নামক যুদ্ধজাহাজে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য আটলান্টিক সনদ নামক এক ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর করেন। এই সনদের মূল বক্তব্য ছিল বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষা, যা পরবর্তীকালে জাতিপুঞ্জের সনদেও স্থান পায়।
ওয়াশিংটন সম্মেলন
1942 খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন শহরে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের 26 টি দেশের প্রতিনিধিরা এক সম্মেলনে মিলিত হন। এই সম্মেলনে আটলান্টিক সনদের শর্তগুলি গৃহীত হয় ও ইউনাইটেড নেশনস গড়ে তোলার প্রস্তাব রাখা হয়।
মস্কো সম্মেলন
1943 খ্রিস্টাব্দের 30 অক্টোবর সোভিয়েত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটভ, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ইডেন, হল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কর্ডেল হাল আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার লক্ষ্যে মস্কোতে এক সম্মেলনে মিলিত হন। এই সম্মেলনে এক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের কথা আলোচিত হয়।
তেহরান ঘোষণা
1943 খ্রিস্টাব্দের 1 ডিসেম্বর ইরানের তেহরান শহরে রুজভেল্ট, চার্চিল ও স্ট্যালিন বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের লক্ষ্যে ঘোষণাপত্র জারি করেন। এটিই তেহরান ঘোষণা নামে পরিচিত।
ডাম্বারটন ওকস সম্মেলন
1944 খ্রিস্টাব্দের আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে আমেরিকার ওয়াশিংটন শহরের কাছে ডাম্বারটন ওকস অঞ্চলে সোভিয়েত প্রতিনিধি গ্রোমিকোরোলিয়া, মার্কিন প্রতিনিধি স্টেটিনিয়াম, ব্রিটিশ প্রতিনিধি আলেকজান্ডার ক্যাডোগান, চীনের প্রতিনিধি ড. ওয়েলিংটন কু এক সম্মেলনে মিলিত হন। এই সম্মেলনে জাতিপুঞ্জের অধীনস্ত বিভিন্ন বিভাগের রুপরেখা তৈরি ও ভেটো প্রদানের ক্ষমতা স্থির হয়।
ইয়াল্টা সম্মেলন
1945 খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার নিকটে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে রুজভেল্ট , চার্চিল ও স্ট্যালিন এক সম্মেলনে মিলিত হন। এই সম্মেলনে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির নাম নির্ধারিত হয়। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে শামিল রাষ্ট্রগুলিকে পরবর্তী সানফ্রান্সিসকো সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে।
সানফ্রান্সিসকো সম্মেলন
1945 খ্রীষ্টাব্দের 25 এপ্রিল থেকে 26 জুন পর্যন্ত আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে একটি সম্মেলন বসে। বিশ্বের 50 টি দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হয়ে জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন। 50 টি প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাষ্ট্র ও হলান্ড সর্বমোট 51 টি দেশ সর্বসম্মতিক্রমে জাতিপুঞ্জের সনদে স্বাক্ষর করে। প্রতিষ্ঠা দিবস 24 অক্টোবর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার কাজ শুরু করে। ঐতিহাসিক ল্যাংসামের মতে , “অংশগ্রহণকারী 50 টি দেশ এবং প্রারম্ভিক 51 টি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রের মিলিত ফলশ্রুতি ছিল জাতিপুঞ্জের সনদ ।” (“Fifty Nations participated, and fifty one became original signatories of the resulting United Nations Charter”)।