ইয়ম কিপুর যুদ্ধ
Contents
ইয়ম কিপুর যুদ্ধ

‘ ইয়ম কিপুর যুদ্ধ ‘ নামকরণের কারণ
‘ ইয়ম কিপুর ’ – এর অর্থ হল ইহুদিদের প্রায়শ্চিত্তের দিন । এই দিনটিতে ইহুদিরা উপবাস ও প্রার্থনার মাধ্যমে শান্তি কামনা করে । এই দিনটিতে অর্থাৎ ৬ অক্টোবরে ইহুদিরা বাৎসরিক উৎসব পালন করে । কিন্তু ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে , এই বিশেষ দিনটিতে ( ৬ অক্টোবর ) মিশর ও সিরিয়ার মিলিত বাহিনী ইজরায়েল অধিকৃত সিনাই উপত্যকা অঞ্চলের ওপর সামরিক অভিযান শুরু করে । ইজরায়েলি সৈন্যরা এই সামরিক অভিযানের প্রতিরােধ করতে গেলে শুরু হয় চতুর্থ আরব ইসরাইল যুদ্ধ যা , ‘ ইয়ম কিপুর যুদ্ধ ‘ নামে পরিচিত ।
ইয়ম কিপুর যুদ্ধ এর প্রেক্ষাপট
১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের তৃতীয় আরব ইসরায়েল যুদ্ধ এর মাত্র ছয় বছর পরেই শুরু হয়েছিল চতুর্থ আরব ইসরায়েল যুদ্ধ বা ইয়ম কিপুর যুদ্ধ ( yom kippur war ) বা ‘ রামাদান যুদ্ধ ’ ( Ramadan War ) । এই যুদ্ধের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায় বেশ কিছু কারণ এই যুদ্ধের জন্য দায়ী ছিল ।
আরবদের প্রতিশোধ মূলক মনোভাব :
আরবরা প্রতিশােধ নেওয়ার জন্য পুনরায় যুদ্ধে লিপ্ত হতে উদগ্রীব ছিল । তৃতীয় আরব ইসরায়েল যুদ্ধের সময়কার ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলগুলি উদ্ধারের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলি সচেষ্ট হয়ে উঠলে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয় ।
ইসরায়েলের জঙ্গি আক্রমণ :
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অস্ত্র সাহায্য নিয়ে ইসরায়েল জর্ডন ও ইরাকের ওপর বােমাবর্ষণ করলে মধ্যপ্রাচ্যে পুনরায় সংকট দেখা দেয় । ইসরায়েলের এই পালটা জঙ্গি আক্রমণের মােকাবিলায় আরব দেশগুলি একজোট হলে আরব যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি হয় ।
দুই রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিচারিতা :
মিশরের প্রেসিডেন্ট গামাল আব্দুল নাসের এর মৃত্যুর পর নতুন রাষ্ট্রপতি হন মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত । তিনি একদিকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে মিশরীয় সেনাবাহিনীকে নতুনভাবে সাজিয়ে তােলেন , অপরদিকে অধিকৃত আরব ভূখণ্ড ফিরে পাওয়ার জন্য আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সঙ্গে এক রাজনৈতিক বােঝাপড়ার উদ্যোগ নেন । আবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ার প্রথমে শান্তির কথা বলেও পরে শান্তির উদ্যোগ থেকে সরে আসেন । তিনি বলেন— “ যতদিন না ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হচ্ছে ততদিন ইসরায়েল তার দখলিকৃত অঞ্চল থেকে একটুও সরে আসবে না । ”
প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ :
প্যালেস্টাইনের সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপ দিনের পর দিন তীব্র রূপ নিতে থাকে । পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন ( PELP ) নামক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি খুনজখম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজ শুরু করে । এ ছাড়াও ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর নামক উগ্রপন্থী সংস্থাটি মিউনিখ অলিম্পিকে যােগদানকারী ( ১৯৭২ খ্রি. ) ১১ জন ইসরায়েলি ক্রীড়াবিদকে হত্যা করে ।
ইয়ম কিপুর যুদ্ধ সূচনা
ইয়ম কিপুর উৎসবের দিনে যুদ্ধের সূচনা ঘটে । আরবরা সােভিয়েতের কাছ থেকে পাওয়া ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের কিছু বিমান ধ্বংস করে । অন্যদিকে ইসরায়েল আমেরিকার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা মিশর ও সিরিয়ার মিলিত আক্রমণকে প্রতিহত করে । অবশেষে রাষ্ট্রসংঘের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও সােভিয়েত উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি ঘােষিত হয় ( ১৯৭৩ খ্রি. ২৪ অক্টোবর ) ।
ইয়ম কিপুর যুদ্ধ এর ফলাফল
ইয়ম কিপুর যুদ্ধের ফলে —
1. প্যালেস্টাইনের অধিকৃত অঞ্চলগুলি ইসরায়েল নিজের দখলে রাখল ।
2. জাতিপুঞ্জের প্রচেষ্টায় ইসরায়েল সুয়েজ খাল সংলগ্ন অঞ্চল হতে নিজের সেনাবাহিনী ফিরিয়ে নিলে মিশর সুয়েজ খালের ওপর নিজের কর্তৃত্ব ফিরে পায় । সুয়েজ খাল ধরে জাতিপুঞ্জের সেনাবাহিনী মােতায়েন রাখা হয় ।
3. মার্কিন রাষ্ট্রপতি জিমি কার্টারের উদ্যোগে মিশরের রাষ্ট্রপ্রধান আনোয়ার সাদাত ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আরব ইসরায়েল শান্তি চুক্তি ( ১৯৭৭ খ্রি . ) স্বাক্ষরিত হয় ।