ইতিহাস

তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ

Contents

তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ

১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ চিনের কোয়াংসি প্রদেশে হুং শিউ চুয়ানের নেতৃত্বে তাইপিং বিদ্রোহের সূচনা ঘটে । তাইপিং বিদ্রোহ ছিল আধুনিক চিনের প্রথম গণতান্ত্রিক সংগ্রাম । তাইপিং বিদ্রোহের অগ্রগতি দেখে মনে হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহ মাঞ্চু বংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে চিনে ধর্মরাষ্ট্র ( Theoracy ) প্রতিষ্ঠা করবে । কিন্তু তা হয়নি , এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় । তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি হল —

নৈতিক অবক্ষয় 

তাইপিং নেতৃবৃন্দ তাদের ঘােষিত আদর্শ থেকে সরে গিয়ে বিলাস ব্যসনে নিমজ্জিত হলে বিদ্রোহের প্রাণশক্তি বিনষ্ট হয় । নৈতিক অবক্ষয় এই আন্দোলনের ব্যর্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ । তাইপিং নেতৃবৃন্দ ব্যক্তিগত সম্পত্তি নাশ , একবিবাহ প্রথা , নারী-পুরুষ সাম্য এসব নীতিগত আদর্শের কথা বললেও ব্যক্তিগত জীবনে তা মানেননি ।

উপদলীয় সংঘাত 

তাইপিং অনুগামীদের মধ্যে বিভিন্ন পরস্পর বিরােধী উপদলের সৃষ্টি হয় এবং পারস্পরিক বিদ্বেষ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এই আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয় । হুং শিউ চুয়ান , ইয়াং শিউ চিং প্রমুখের অন্তর্দ্বন্দ্ব এক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য । 

সামরিক শক্তি প্রয়োগ

তাইপিং বিদ্রোহ যাতে গণবিদ্রোহের রূপ না নিতে পারে সে কারণে সরকার পক্ষ নিশ্চেষ্ট না থেকে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হয় । সেং কুয়াে ফ্যানের নেতৃত্বে আঞ্চলিক স্বদেশরক্ষী সেনাদলগুলিকে উন্নত সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তােলার পাশাপাশি আধুনিক অস্ত্রশিক্ষায় পারদর্শী করে তােলা হয় । এই দক্ষ ও সুসংগঠিত সেনাবাহিনী সহজেই তাইপিং বিদ্রোহ দমন করে । 

যোগাযোগের অভাব

তাইপিং আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য মাঞ্চু বিরােধী আন্দোলনের কোনাে যােগাযােগ না থাকায় সরকারের পক্ষে এই আন্দোলন দমন করার সুবিধা হয় । 

আদর্শগত বিরোধ 

নেতৃবর্গের মধ্যে আদর্শগত বিরােধও এই আন্দোলনকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয় । তাইপিং বিদ্রোহীদের মাঞ্চু বিরােধী নীতি একদিকে যেমন বহু চিনাবাসীর সমর্থন লাভ করেছিল , অপরদিকে তেমন তাদের কনফুসীয় নীতির বিরােধিতা পণ্ডিত থেকে কৃষক সকলের আস্থা হারিয়েছিল । হুং নিজেকে জিশুর কনিষ্ঠ ভ্রাতা বলে প্রচার চালানােয় বিদ্রোহীদের সহানুভূতি হারান । তাই ইমানুয়েল স্যু  বলেছেন , তাইপিংদের ধর্মীয় আদর্শ চিনা এবং পশ্চিমি উভয়কে সমানভাবে দূরে ঠেলে দিয়েছিল । 

আন্দোলন পরিকল্পনায় ত্রুটি 

তাইপিংদের সামরিক দুর্বলতা ও আন্দোলনের পরিকল্পনাগত ত্রুটি তাদের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় । 

কৌশলগত দুর্বলতা 

তাইপিং বিদ্রোহীদের উচিত ছিল নানকিং দখলের পর আরও উত্তরে সরে গিয়ে পিকিং এবং মাঞ্চু রাজদরবারের দখল নেওয়া । ইয়াং সি নদীর দু-তীরের মাঞ্চু সেনাশিবির ধ্বংসেও তারা ব্যর্থ হয় । এইসব কৌশলগত দুর্বলতা শেষ পর্যন্ত তাইপিং বিদ্রোহকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে । তাইপিং সরকার বিদেশিদের কিছু সুবিধাদানের পরিবর্তে তাদের সাহায্য লাভ করতে সম্মত ছিল না । অথচ সেই বিদেশিদের বিশেষ করে ব্রিটেনের সাহায্য নিয়েই মাঞ্চু সরকার যে কৌশল অবলম্বন করে , তা-ই শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয় ।

One thought on “তাইপিং বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ

  • Miraj Mustafa

    অসাধারণ লিখেছেন, আপনার লেখা পড়ে আমি একটা নোট লিখেছি। আমি তেমন লিখতে পারিনা। আমি যেখানে এই নোটটি লিখেছি, সেটা আপনাদের কাছে শেয়ার করলাম। এই সাইটে যেকোনো ব্যক্তি প্রশ্ন ও উত্তর দিতে পারে। এখানে কোনো বাধাধরা নিয়ম নেই। আপনার জ্ঞান বিতরণের স্থান।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!