ইতিহাস

বেষ্টনী নীতি কী

Contents

বেষ্টনী নীতি কী 

index 12
জর্জ কেন্নান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রাশিয়াতে নিয়ােজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন জর্জ কেন্নান । এক টেলিগ্রামে ( ৮ হাজার শব্দ বিশিষ্ট ) তিনি সোভিয়েত রাষ্ট্রপ্রধান স্ট্যালিনের যুদ্ধ পরবর্তী রুশ সম্প্রসারণ নীতি সম্পর্কে নিজের মনােভাব ব্যক্ত করেন । পরবর্তী সময়ে কেন্নান ‘Memoris‘ , ( 1925-50 ) ও ‘American Diplomacy’ ( 1900-58 ) এই দুই গ্রন্থে কেন্নান সোভিয়েত সম্প্রসারনের চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তাঁর বেস্টনী নীতির প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করেন । 

সোভিয়েত সাম্যবাদের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে মার্কিন বিদেশনীতির উপদেষ্টা জর্জ কেন্নান ( George Kennan ) সোভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে যে পদ্ধতি উল্লেখ করেন , তা বেষ্টনী নীতি বা ‘ Policy of Containment ‘ নামে পরিচিত । ট্রুম্যান নীতি ঘােষণার পর ‘ Foreign Affairs ‘ পত্রিকা ( চতুর্থ সংখ্যা ) তে ‘ Mr. X ‘ ছদ্মনামে এক প্রবন্ধে জর্জ কেন্নান ‘ Containment ‘ ( বেষ্টনী ) শব্দের উল্লেখ করেন ও এই নীতির ব্যাখ্যা করেন ( ১৯৪৭ খ্রি. জুলাই ) ।

কেন্নান  বলেন , সোভিয়েত রাশিয়া এই মুহূর্তে একটি রণক্লান্ত ও বিধ্বস্ত দেশ । রুশ জনগণও এ সময় ভয়ংকরভাবে দুর্দশাগ্রস্ত । এই অবস্থায় সোভিয়েত রাশিয়া নিশ্চয়ই কোনাে যুদ্ধে নামার ঝুঁকি নেবে না । কাজেই সোভিয়েত রাশিয়ার দিক থেকে সে সময় কোনাে আগ্রাসনের আশঙ্কা থাকতে পারে না । সুতরাং রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনাে যুদ্ধে না গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে যে অঞ্চলে সোভিয়েত প্রভাব আছে , সেই অঞ্চলের মধ্যেই তাকে সীমাবদ্ধ করে রাখা । 

বেষ্টনী নীতির লক্ষ্য 

সাম্যবাদের প্রসার রোধ :

কেন্নানের বেষ্টনী নীতির লক্ষ্য ছিল বিশ্বে সোভিয়েত সাম্যবাদের প্রসার রােধ । কেন্নান মনে করতেন রাশিয়া এক বর্বর রাষ্ট্র , ইউরােপ-আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শান্তি নষ্ট করাই তার প্রধান লক্ষ্য । তাই কেন্নান চেয়েছিলেন তাঁর বেষ্টনী নীতির প্রয়ােগের মাধ্যমে সাম্যবাদের প্রসার আটকাতে ।  

আণবিক অস্ত্রের ভীতি : 

মার্কিনিদের আণবিক বােমা তৈরির ( ১৯৪৫ খ্রি. ) তিন-চার বছরের মধ্যেই সোভিয়েত রাশিয়াও আণবিক বােমা বানিয়ে ফেলায় আমেরিকা ভীত হয়ে পড়ে । এই ভীতি থেকেই কেন্নান সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের প্রসার রুখতে তার বিখ্যাত ‘ বেষ্টনী নীতি’র প্রচার করেন । 

মার্কিন সরকার কর্তৃক কেন্নানের নীতি গ্রহণ 

কেন্নান শেষ পর্যন্ত মার্কিন সরকারকে এটা বােঝাতে পেরেছিলেন যে , সমাজতন্ত্রের পীঠস্থান সোভিয়েত রাশিয়া কোনােমতেই দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রজোটের বন্ধু সেজে থাকবে না । অনুকুল বা প্রতিকূল পরিবেশে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সুযােগ পেলেই রাশিয়া পুঁজিবাদী রাষ্ট্রজোটের ওপর আঘাত হানবে । এই সত্য কেন্নান মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও তাঁর সরকারকে বােঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন । তাই মার্কিন সরকার তাঁর এই নীতি গ্রহণ করেছিল ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!