ন্যাটো কেন গঠিত হয়
Contents
ন্যাটো কেন গঠিত হয়

বার্লিন সংকটের পর রাশিয়া যাতে ভবিষ্যতে আর কোনাে সংকট সৃষ্টি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে পশ্চিমি জোটবদ্ধ দেশগুলি এক সামরিক শক্তি জোট গঠনের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে । এই তাগিদ থেকেই জন্ম হয় ন্যাটোর । ন্যাটো গঠনের কারণ প্রসঙ্গে ক্রলি বলেছেন — ন্যাটোয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণের কারণ হল আমেরিকার প্রবল সাম্যবাদ বিদ্বেষ ( ‘ The reason for the participation of the United States in NATO is a deep antipathy of the American for communism ‘ ) ।
পটভূমি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত ইউনিয়নের পারস্পরিক সন্দেহ , অবিশ্বাস এই চুক্তির পটভূমি রচনা করে ।
মার্শাল পরিকল্পনা :
পূর্ব ইউরােপ ও বাল্টিক অঞ্চলে রুশ আগ্রাসন আটকানাের লক্ষ্যে মার্কিন বিদেশমন্ত্রী জর্জ মার্শাল , তাঁর বিখ্যাত মার্শাল পরিকল্পনা ঘােষণা করেন ( ১৯৪৭ খ্রি. জুন ) ।
রাজনৈতিক ঐক্য :
অর্থনৈতিক ঐক্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যে আমেরিকার উৎসাহে একে একে ডেনমার্ক চুক্তি ( ১৯৪৭ খ্রি. মার্চ ) , ব্রাসেলস চুক্তি ( ১৯৪৮ খ্রি. ১৭ মার্চ ) স্বাক্ষরিত হয় ।
বার্লিন অবরোধ :
সােভিয়েত রাশিয়া বার্লিন সংকট সৃষ্টি করে বার্লিন অবরােধে অনমনীয় মনােভাব দেখালে মার্কিন নেতৃত্বে পশ্চিমি জোট এক সামরিক শক্তিজোট গঠন করার প্রয়ােজন অনুভব করে ।
ন্যাটো গঠন
বিশ্বে সােভিয়েত আগ্রাসন প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে আর্থার ব্রান্ডেনবার্গ আমেরিকার সেনেটে ‘ ব্রান্ডেনবার্গ রেজোলিউশন ’ পেশ করলে ( ১৯৪৮ খ্রি. ১১ জুন ) তা অনুমােদিত হয় । স্থির হয় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজ স্বার্থরক্ষার জন্য আমেরিকার বাইরে অবস্থিত রাষ্ট্রগুলির ( নন-আমেরিকান পাওয়ার ) সঙ্গে যৌথ সামরিক চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে । এরই ফলশ্রুতি হিসেবে ৪ এপ্রিল , ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে জন্ম নেয় ন্যাটো অর্থাৎ উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা ( North Atlantic Treaty Organisation ) ।
উদ্দেশ্য
পশ্চিম ইউরােপ ও আটলান্টিক দেশগুলির এই জোটের অর্থাৎ ন্যাটো / উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল —
1. আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা ।
2. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলির শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করা ।
3. সদস্য দেশগুলির ওপর কোনাে বহিঃশক্তির ( সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট ) আক্রমণ একজোট হয়ে প্রতিরােধ করা ।
4. স্বাক্ষরকারী দেশগুলি রাষ্ট্রসংঘের সনদ অনুসারে নিজেদের কর্তব্য ঠিক করবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার কাজে জাতিপুঞ্জকে সাহায্য করবে ।
ন্যাটো স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র
ব্রাসেলস প্যাক্ট ( ১৯৪৮ খ্রি. ) – এ স্বাক্ষরকারী ৫ টি দেশ অর্থাৎ ব্রিটেন , ফ্রান্স , বেলজিয়াম , নেদারল্যান্ডস্ ও লুক্সেমবার্গ – এর সঙ্গে আমেরিকা , কানাডা , ডেনমার্ক , আইসল্যান্ড , ইতালি , পাের্তুগাল , স্পেন ও নরওয়ে এই ন্যাটো চুক্তি স্বাক্ষর করে । পরে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে তুরস্ক এবং আরও পরে পশ্চিম জার্মানিও এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে । অর্থাৎ , ‘ ন্যাটো ’ হল পশ্চিম ইউরােপ ও আটলান্টিক দেশগুলির একটি সামরিক জোট । ন্যাটো চুক্তিতে বলা হয় , কুড়ি বছরের মেয়াদ থাকবে এই চুক্তির । কুড়ি বছর পরে এর কোনাে সদস্য রাষ্ট্র এক বছরের নােটিশ দিয়ে এর সদস্যপদ ছেড়ে দিতে পারবে ।
উপসংহার
ন্যাটো চুক্তির দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সােভিয়েত সাম্যবাদের অগ্রগতি অনেকটাই রােধ করতে পেরেছিল । এই চুক্তির পর ঠান্ডা লড়াইয়ের পাল্লা মার্কিন জোটের দিকে অনেকটাই ঝুকেছিল । অধ্যাপক হাটম্যান ন্যাটো চুক্তিকে শান্তির সময়ে স্বাক্ষরিত সুদূরপ্রসারী এবং জটিল চুক্তি বলে উল্লেখ করেছেন ।