ইতিহাস

ইয়াল্টা সম্মেলন কি

Contents

ইয়াল্টা সম্মেলন কি

index 7
ইয়াল্টা সম্মেলন

১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে কৃষ্ণসাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় । ইয়াল্টা নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যােগ দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট , ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আর সোভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক স্ট্যালিন । 

ইয়াল্টা সম্মেলনের আলোচ্য বিষয়

ইয়াল্টা সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ছিল ―

1. জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা । 

2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরােপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন করা । 

3. বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা ।

4. সােভিয়েত রাশিয়ার দাবিমতো নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়ােগের ক্ষমতা নিয়ে আলােচনা করা । 

5. দূরপ্রাচ্যের যুদ্ধে সােভিয়েত রাশিয়ার যােগদানের গুরুত্ব পর্যালােচনা করা । 

6. পােল্যান্ডের সীমানা ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রশ্নের সমাধান করা । 

ইয়াল্টা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত 

ইয়াল্টা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো ছিল — 

জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ : 

1. স্থির হয় নাৎসিবাদের কবল থেকে জার্মানবাসীকে মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে । 

2. জার্মানির রাজধানী বার্লিনকে তিন ভাগ করে পশ্চিমাংশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্বাঞ্চল সােভিয়েত রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা হয় । ইংল্যান্ড ও আমেরিকার ভাগ থেকে ফ্রান্সকে কিছুটা অংশ দেওয়া হবে ঠিক হয় ।

3. স্থির হয় নবগঠিত জার্মানির শাসনতান্ত্রিক আইনকানুন আন্তর্জাতিক আইনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে । 

4. সিদ্ধান্ত হয় জার্মানির অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে মিত্রপক্ষ । 

5. যুদ্ধে জার্মানি মিত্রপক্ষের যে ক্ষয়ক্ষতি করেছিল তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির কাছে থেকে আপাতত ২০ মিলিয়ন ডলার আদায় করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । 

জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি :

ইয়াল্টা সম্মেলনে সম্মিলিত জাতিসংঘ গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয় । বলা হয় — 

1. রাষ্ট্রসংঘের সংবিধান রচনার জন্য আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে মিত্রপক্ষের সকল দেশ এপ্রিল মাসে মিলিত হবে । 

2. রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি ভেটো প্রয়ােগের ক্ষমতা পাবে । 

3. নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ অছি পরিষদের রাষ্ট্রগুলির ব্যাপারে আলােচনা করতে পারবে ।

পোল্যান্ড নীতি :

এই সম্মেলনে পােল্যান্ডের ব্যাপারে বেশ কিছু নীতি নেওয়া হয় — 

1. ঠিক হয় দু-টুকরাে পােল্যান্ডকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়া হবে । 

2. পােল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সীমানা অক্ষুন্ন রাখার জন্য জার্মানির উত্তর-পশ্চিম দিকের ভূখণ্ড পাবে পােল্যান্ড । ইয়াল্টা সম্মেলনের পরে পােল্যান্ড সহ পূর্ব ইউরােপের বেশ কয়েকটি দেশে কমিউনিস্ট শাসনের প্রতিষ্ঠা ও রুশ প্রাধান্যের বিস্তার ঘটে । 

সোভিয়েত রাশিয়ার প্রাপ্তি :

দূরপ্রাচ্যের রণাঙ্গনে সোভিয়েত রাশিয়া জাপানের বিরুদ্ধে ইঙ্গ-আমেরিকান জোটের হয়ে যােগ দিয়েছিল । এর পুরস্কার রূপে রাশিয়া পেয়েছিল —

1. দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়ার রেলপথ ব্যবহারের অধিকার ; 

2. কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ , শাখালিনের দক্ষিণাংশ এবং তার নিকটবর্তী উপদ্বীপ ; 

3. দাইরেনের বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে ঘােষণা করা হয় , সেখানে রাশিয়াকে বিশেষ সুযােগ সুবিধা ও অধিকার প্রদান করা হয় ;

4. পাের্ট আর্থারকে নৌ-ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ৯১ বছরের লিজের অধিকার প্রদান করা হয় । 

উপসংহার 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যে ইয়াল্টা সম্মেলন শান্তির সম্ভাবনাকে অনেকটাই আভাসিত করেছিল । ইয়াল্টা সম্মেলনের সাফল্য সম্পূর্ণরূপেই সােভিয়েত রাশিয়ার সহযােগিতার ওপর নির্ভরশীল ছিল , তাই এই সম্মেলনে রাশিয়াকে একটু বিশেষ সুযােগসুবিধা দেওয়া হয়েছিল । ফরেস্ট পগ ( Forrest Pogue ) -এর মতে ইয়াল্টাতে পশ্চিমি শক্তিবর্গ সােভিয়েত রাশিয়াকে যে সকল সুযােগসুবিধা দিয়েছিল , মূলত সেগুলি ছিল সােভিয়েত রাশিয়ার সামরিক প্রাধান্যের বাস্তবসম্মত স্বীকৃতি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!