ইতিহাস

ঠান্ডা লড়াই এর বৈশিষ্ট্য

Contents

ঠান্ডা লড়াই এর বৈশিষ্ট্য

index 5
ঠান্ডা লড়াই এর বৈশিষ্ট্য

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকার নেতৃত্বে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্র জোট ও সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র জোটে গােটা বিশ্ব বিভক্ত হয়ে পড়ে । এই দ্বিমেরুকরণ ( bipolarism ) রাজনীতি ঠান্ডা লড়াই ( cold war ) নামে পরিচিত । ঐতিহাসিকেরা ঠান্ডা লড়াইকে নানাভাবে ব্যাখ্যা করেছেন । অনেকের মতে ঠান্ডা লড়াই ছিল পূর্ব ও পশ্চিম ভাবধারার সংঘাত । এম. এস. রাজন -এর মতে — ঠান্ডা লড়াই ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব , আদর্শের সংঘাত , জীবনধারার বিরোধ থেকে উদ্ভূত ( ‘ The cold war was the combined results of a power struggle , of a conflict of ideologies and of a clash of ways of life ‘ ) ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ‘ ঠান্ডা লড়াই ’ । ঠান্ডা লড়াইয়ের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল — 

কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে মহাশক্তিধর ( Super Power ) রাষ্ট্র রূপে আবির্ভাব ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়ার । তাই ঠান্ডা লড়াই বলতে বােঝায় মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও সােভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে সারা বিশ্বে নিজ নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে । 

বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্ব 

উভয় রাষ্ট্রই বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ওপর নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ও তাদের সাহায্য ও সহযােগিতা লাভ করতে তৎপর ছিল । বিভিন্ন দেশের সমর্থন লাভের দ্বন্দ্বকে ঘিরে উদ্ভব ঘটে দ্বিপক্ষীয় রাজনীতি ( Bipolar Politics ) -র । 

মতাদর্শগত বিভেদ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অছিলায় এবং সােভিয়েত রাশিয়া সাম্রাজ্যবাদ বিরােধিতা ও সাম্যবাদের পক্ষে পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয় । এর পরিণতি হিসেবে ঠান্ডা লড়াই বহুলাংশে রাজনৈতিক মতবাদের লড়াই -এ পরিণত হয় । 

সামরিক বল বৃদ্ধি 

কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াইকে কেন্দ্র করে দুই শক্তিজোট ভিতরে ভিতরে জোর সামরিক প্রস্তুতি শুরু করে । প্রবল থেকে প্রবলতর শক্তিসম্পন্ন মারণাস্ত্র তৈরি ও সেগুলির পরীক্ষার নামে যুদ্ধ মহড়া শুরু হয় দুই শিবিরে । এইভাবে উভয় পক্ষই প্রবল সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে । বিশ্বে আতঙ্কজনক বাতাবরণ গড়ে ওঠে , যা ঠান্ডা লড়াই নামে অভিহিত হয় ।

জটিল ও উত্তেজক ব্যবস্থা 

ঠান্ডা যুদ্ধের রেশ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়লেও তা থেকে কোনাে যুদ্ধ বাধেনি । ঠান্ডা যুদ্ধের পরিণামে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কেবল জটিলতা ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল মাত্র । 

আঞ্চলিক সীমাবদ্ধতা 

দু-পক্ষেরই অনুগত কোনাে রাষ্ট্র কোনাে অঞ্চলে যুদ্ধরত হলে ওই যুদ্ধকে ওই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ রাখতে উভয়েই তৎপর হয়ে ওঠে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!