মার্শাল পরিকল্পনা

Contents

মার্শাল পরিকল্পনা

index 4
মার্শাল পরিকল্পনা কি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্যকে সফল করতে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন । ওই পরিকল্পনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত সমগ্র ইউরােপেই আর্থিক পুনরুজ্জীবনের কথা বলা হয় । এটিই মার্শাল এইড বা মার্শাল প্ল্যান বা মার্শাল পরিকল্পনা নামে খ্যাত , এর অফিসিয়াল নাম ছিল European Recovery Program বা ERP । মার্শাল  তাঁর ভাষণে বলেন — যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য , ক্ষুধা , বেকারত্ব সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকট মােচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অর্থ সাহায্য দেবে ।  

মার্শাল পরিকল্পনার পটভূমি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল । এইসব দেশ আমেরিকার কাছ থেকে অর্থসাহায্য না পেলে স্বাভাবিকভাবেই সােভিয়েত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে , তখন আর এইসব দেশকে সাম্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে না — আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সত্যের পটভূমিকায় তাঁর ‘মার্শাল পরিকল্পনা’র নীতি গ্রহণ করেন । 

মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য

মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য গুলি ছিল — 

সােভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরোপ গঠন : 

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সােভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা । 

আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি : 

অর্থসাহায্য দিয়ে পশ্চিম ইউরােপের বিভিন্ন দেশগুলির অর্থনীতি মজবুত করে এক আন্তর্জাতিক বাজার গড়ে তােলা । 

মার্কিন রাষ্ট্র জোটের শক্তি বৃদ্ধি : 

অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলিকে মার্কিন নীতির প্রতি আস্থাশীল করে তুলে মার্কিন রাষ্ট্র জোটের শক্তি বাড়ানাে । 

মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা : 

অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিদেশনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মার্কিন আধিপত্য কায়েম করা । 

মার্শাল পরিকল্পনার প্রয়োগ

১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে পশ্চিম জার্মানিসহ পশ্চিম ইউরােপের ১৭ টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল । এইসব দেশ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল OEEC ( Organisation of European Economic Cooperation ) বা ‘ ইউরোপীয় আর্থিক সহায়তা গোষ্ঠী ’ । মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল পশ্চিম জার্মানি , বেলজিয়াম , ফ্রান্স , অস্ট্রিয়া , লুক্সেমবুর্গ , ডেনমার্ক , গ্রিস , আইসল্যান্ড , আয়াল্যান্ড , ইতালি , নেদারল্যান্ড , নরওয়ে , পাের্তুগাল , সুইডেন , সুইজারল্যান্ড , ইংল্যান্ড ও তুরস্ক । 

মার্শাল পরিকল্পনার গুরুত্ব বা ফলাফল

মার্শাল পরিকল্পনার ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী —

ইউরোপীয় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনে :

মার্শাল পরিকল্পনাকে কাজে লাগিয়ে ইউরােপের অর্থনীতি অনেকটাই চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল । মার্কিন কংগ্রেস চার বছরের ( ১৯৪৮-৫১ খ্রি. ) মেয়াদে ১,২০০ কোটি ডলার মঞ্জুর করেছিল । মার্শাল পরিকল্পনা রূপায়ণের ফলে ইউরােপের মােট শিল্পের উৎপাদন বেড়েছিল শতকরা ২৫ ভাগ এবং কৃষিতে উৎপাদন বেড়েছিল শতকরা ১০ ভাগ । 

ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা : 

গণতান্ত্রিক দেশগুলি সােভিয়েত সাম্যবাদ ছেড়ে মার্কিন পুঁজিবাদের দিকে বেশি ঝুকে পড়ায় সােভিয়েত রাশিয়া ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এই দুই বিরােধী গােষ্ঠীর মধ্যে ঠান্ডা লড়াইয়ের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল । 

মন্তব্য 

মার্শাল পরিকল্পনা ছিল আসলে ট্রুম্যান নীতিরই বৃহত্তর সংস্করণ । ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্য রূপায়ণের জন্যই প্রকৃত অর্থে মার্শাল পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছিল । অর্থাৎ ট্রুম্যান নীতির আর্থিক সম্প্রসারণের সার্থক প্রয়ােগ ঘটানাে হয় মার্শাল পরিকল্পনার দ্বারা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!