ট্রুম্যান নীতি কি
Contents
ট্রুম্যান নীতি কি

সােভিয়েত রাশিয়ার সাম্যবাদী আদর্শের বিস্তার রােধ করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান যে , নীতি ঘােষণা করেন ( ১৯৪৭ খ্রি. ১২ মার্চ ) তা ট্রুম্যান নীতি বা ট্রুম্যান ডকট্রিন নামে পরিচিত ।
১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে ট্রুম্যান বলেন — এখন থেকে পৃথিবীর যে-কোনাে জায়গার স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরােধ করার চেষ্টা করে , সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি । এই ঘােষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত । বলা বাহুল্য ট্রুম্যান ‘ সশস্ত্র সংখ্যালঘু ‘ বলতে সাম্যবাদী বিদ্রোহীদের এবং ‘ বাইরের শক্তি ’ বলতে সােভিয়েত রাশিয়াকে বুঝিয়েছিলেন ।
ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার পটভূমি
চার্চিলের ফালটন বক্তৃতা :
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিসৌরি প্রদেশের ফালটন শহরে এক বক্তৃতায় পূর্ব ইউরােপের রুশ প্রভাব বৃদ্ধির বিপদ সম্পর্কে এক ভাষণ দেন । এই ভাষণে তিনি সাম্যবাদের প্রসার রােধ করার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান জানান ।
কেনানের বেষ্টনী নীতি :
মার্কিন বিদেশনীতির উপদেষ্টা জর্জ. এফ. কেন্নান সােভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে এক প্রবন্ধ লিখে জানান , যুদ্ধে বিধ্বস্ত সােভিয়েত রাশিয়ার দিক থেকে কোনাে আগ্রাসনের আশঙ্কা নেই । রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনাে যুদ্ধে না গিয়ে আমেরিকার উচিত হবে যে অঞ্চলে সােভিয়েত প্রভাব রয়েছে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা । কেন্নানের এই নীতি টুম্যান নীতি ঘােষণায় উদ্বুদ্ধ করে ।
ট্রুম্যান নীতি এর উদ্দেশ্য
ট্রুম্যান নীতি ঘােষণার আসল কয়েকটি লক্ষ্য ছিল —
রাজনৈতিক :
যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ইউরােপে ক্রমবর্ধমান সােভিয়েত বা সাম্যবাদী প্রভাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরােধমূলক রণকৌশল গ্রহণ ।
অর্থনৈতিক :
ট্রুম্যান নীতি ঘােষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল অর্থ সাহায্যের নামে অন্যান্য দেশকে অস্ত্র ও শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রি করে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানাে ।
ট্রুম্যান নীতি এর গুরুত্ব
তুরস্ক কে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা :
ট্রুম্যান নীতি ঘােষণার পর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে সােভিয়েত প্রভাবমুক্ত করার জন্য কয়েকশত মিলিয়ন ডলার অর্থ সাহায্যের কথা ঘােষণা করে । ফলে তুরস্ক তার স্বাধীন অস্তিত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয় ।
গ্রিসে কমিউনিস্ট তৎপরতা প্রশমন :
রাশিয়ায় সাম্যবাদ থেকে দূরে থাকার পুরস্কাররূপে আমেরিকা গ্রিসের রাজতন্ত্রী সরকারকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার অর্থ মঞ্জুর করে । গ্রিসে কমিউনিস্ট তৎপরতা প্রশমিত হয় ।
ইরানের সঙ্গে চুক্তি :
ইরানকে সােভিয়েত প্রভাবমুক্ত করার জন্য আমেরিকা ইরানের সঙ্গে এক চুক্তি করে । এতে আসলে ইরানের তেলের খনিগুলি দখলের লক্ষ্যে আমেরিকা তাকে সামরিক ও বেসামরিক সাহায্য দেবে বলে ।
ঠান্ডা লড়াইয়ের সূচনা :
ট্রুম্যান নীতির ঘােষণা বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক ঠান্ডা লড়াই এর পরিবেশ তৈরি করে । এই ঘােষণার পর সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের সঙ্গে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোটের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় ।