ভারতের সংবিধান সভা কিভাবে গঠিত হয়
Contents
ভারতের সংবিধান সভা কিভাবে গঠিত হয়

স্বাধীনতা লাভের বহু আগে থেকেই ভারতবাসীর দাবি ছিল তারা গণপরিষদ বা সংবিধান সভা গঠন করে নিজেদের সংবিধান নিজেরাই রচনা করবে । কিন্তু পরাধীন ভারতে তা সম্ভব না হলেও স্বাধীন ভারতে মন্ত্রীমিশনের প্রস্তাব মেনে গণপরিষদ গঠিত হয় ।
বিভিন্ন সম্মেলনের দাবি মেনে
১৯৩৬ খ্রি. কংগ্রেস সম্মেলনে গণপরিষদ গঠনের পক্ষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় । এর তিন বছর পরে ১৯৩৯ খ্রি. রামগড় কংগ্রেস সম্মেলনে কংগ্রেস কার্যকরী সমিতি গণপরিষদ গঠনের পক্ষে জোরালাে অভিমত ব্যক্ত করে । অবশেষে ১৯৪০ খ্রি. ব্রিটিশ সরকার গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে ভারতের সংবিধান রচনার বিষয়টি নীতিগত ভাবে মেনে নেয় ।
কুপল্যান্ড পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন চার্চিল মন্ত্রীসভার সদস্য স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ভারতে আসেন । ক্রিপস ভারতবাসীর কাছে তাঁর বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেন । প্রস্তাবে বলা হয় — ব্রিটিশ সরকার ও গণপরিষদের মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে । কিন্তু মুসলিম লীগ পৃথক গণপরিষদ গঠনের দাবি জানায় । পাশাপাশি জাতীয় কংগ্রেসও ক্লিপস প্রস্তাবকে অগ্রাহ্য করে । এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ কূপল্যান্ডকে ভারতে পাঠায় । কূপল্যান্ড ঐকমত্যের ভিত্তিতে কংগ্রেস ও লীগের কাছে ক্ষুদ্র আকারের গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব রাখেন । এই প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিবর্তে ঐকমত্যের ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠনের উল্লেখ থাকায় কুপল্যান্ড পরিকল্পনাও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় ।
মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাব মেনে
মন্ত্রী মিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী চারটি মূল নীতির ভিত্তিতে গণপরিষদ গঠিত হয় । এই চারটি নীতি ছিল —
1. ব্রিটিশ শাসিত প্রদেশ ও দেশীয় রাজ্যগুলি তাদের মােট জনসংখ্যার নির্দিষ্ট অনুপাত অনুযায়ী গণপরিষদে আসন লাভ করবে । প্রতিটি প্রদেশ ১০ লক্ষ জন পিছু একজন করে প্রতিনিধি গণপরিষদে পাঠাতে পারবে ।
2. গণপরিষদের সকল আসন সাধারণ শ্রেণি ( অ-শিখ , অ-মুসলমান ) , শিখ ও মুসলমান — এই তিন সম্প্রদায়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে ভাগ করে দেওয়া হবে ।
3. প্রাদেশিক আইন সভাগুলিতে — প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের সদস্যবৃন্দ একক হস্তান্তরযােগ্য সমানুপাতিক ভােটাধিকার প্রয়ােগ করে নিজ নিজ প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে ।
4. দেশীয় রাজ্যগুলি থেকে ৯৩ জন প্রতিনিধি পাঠানাে যাবে ।
নির্বাচনের মাধ্যমে
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে জুলাই মাসে গণপরিষদ গঠন করার জন্য এক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । চিফ কমিশনার শাসিত ৪ টি আসন সমেত ব্রিটিশ-ভারত থেকে মােট ২৯৬ জন প্রতিনিধি নির্ধারণের জন্য এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এই নির্বাচনে দলগত বিচারে কংগ্রেস শতকরা ৬৯ ভাগ আসন লাভের মাধ্যমে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে । অর্থাৎ ২৯২ টি প্রাদেশিক আসনের মধ্যে কংগ্রেস পায় ২০৮ টি ।
উপসংহার
সংবিধান রচনার লক্ষ্যে গঠিত খসড়া কমিটি ( ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট ) গণপরিষদের কাছে খসড়া সংবিধান পেশ করে । দীর্ঘ আলাপ-আলােচনার পর রচিত হয় ভারতীয় সংবিধান ।