ইতিহাস

জোট নিরপেক্ষ নীতি এবং এর বৈশিষ্ট্য

Contents

জোট নিরপেক্ষ নীতি এবং এর বৈশিষ্ট্য 

images 2
জোট নিরপেক্ষ নীতি

জোট নিরপেক্ষ নীতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট , অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয় । এই দুই জোটের কোনােটিতেই যােগ না দিয়ে , স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোট নিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত ।

জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

নিরপেক্ষতা : 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশ্বের দুই প্রধান শক্তিগােষ্ঠী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট ও সােভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের বাইরে থেকে ভারত নিরপেক্ষতা নীতি অবলম্বন করে চলে । 

শান্তির নীতি : 

ভারতের জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণরূপে শান্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত । ভারত বিশ্বাস করে যে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যার সমাধান সম্ভব । তাই দেখা যায় কোরিয়া , ইন্দোচিন , মধ্যপ্রাচ্যে ভারত শান্তির পথ ধরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সচেষ্ট হয়েছে । 

স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি : 

উপযুক্ত সামরিক শক্তির অভাব থাকলেও ভারত স্বাধীনভাবেই তার পররাষ্ট্রনীতি প্রয়ােগ করতে সদাসচেষ্ট । অন্য কোনাে রাষ্ট্রকে অনুসরণ করে বা অপরের পরামর্শ মেনে ভারত তার পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করতে চায় না । 

বর্ণবৈষম্যের বিরােধিতা : 

ভারত বর্ণবৈষম্য ও জাতিগত বিদ্বেষের বিরােধী । তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ভারতকে প্রতিবাদ জানাতে বা কমনওয়েলথ ও জাতিপুঞ্জে বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে ভারতকে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে দেখা যায় । 

ঔপনিবেশিকতাবাদ এর বিরোধিতা :

দক্ষিণ আফ্রিকা , ভিয়েতনাম , নামিবিয়া , অ্যাঙ্গেলা , মােজাম্বিক এবং কঙ্গোর ঔপনিবেশিকতা বিরােধী মুক্তিযুদ্ধে ভারত সক্রিয় সমর্থন জানিয়েছে । 

সর্বাত্মক নিরস্ত্রীকরণ : 

ভারতের জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল , সর্বাত্মক নিরস্ত্রীকরণের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন । ভারত আণবিক বােমা তৈরির ক্ষমতা রাখলেও তা যুদ্ধের কাজে ব্যবহার করতে চায় না । 

উপসংহার 

ভারত জোটনিরপেক্ষ নীতির সফল প্রয়ােগ ঘটিয়ে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে শান্তি , সৌহার্দ্য , সম্প্রীতি ও পারস্পরিক আস্থার পরিবেশ গড়ে তুলতে সচেষ্ট । জওহরলাল  ভারতের জোটনিরপেক্ষতার স্বরূপ প্রসঙ্গে বলেন — ভারত বিশ্বাস করে যে , প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ বন্ধুত্বসুলভ আচরণ এবং বিশ্বের সকল দেশের সহযােগিতার মাধ্যমে প্রকৃত শান্তি অর্জন করা সম্ভবপর হবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!