বান্দুং সম্মেলন কি
Contents
বান্দুং সম্মেলন কি

১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪ টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ , উপনিবেশবাদ , বর্ণবৈষম্য প্রথার বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করে । এরপর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯ টি দেশের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন ( ১৯৫৫ খ্রি. ১৮ ২৬ এপ্রিল ) যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত ।
বান্দুং সম্মেলনের উদ্দেশ্য
বান্দুং সম্মেলন ছিল সােভিয়েত মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব মুক্ত দেশগুলির স্বাধীন সত্তা ঘােষণার প্রথম যৌথ প্রয়াস । তাই বলা হয় , বান্দুং সম্মেলন থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয় । উল্লেখ্য যে , পশ্চিমি জোটভুক্ত ৬ টি দেশ — পাকিস্তান , ইরাক , ইরান , তুরস্ক , ফিলিপিনস্ ও থাইল্যান্ড এই সম্মেলনে যােগদান করে ।
বান্দুং সম্মেলনের উদ্যোক্তা
এই সম্মেলনটির মূল উদ্যোক্তা ছিল ইন্দোনেশিয়া , বার্মা , পাকিস্তান , সিলন ( শ্রীলঙ্কা ) , ভারত । এই সম্মেলনের কার্যনির্বাহক ছিলেন রাসেল আব্দুলগানি ( ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ) । এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা ও মধ্যমণি ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলি শস্ত্রো মিদযােযো ।
দশশীল নীতি
বান্দুং সম্মেলনে জওহরলাল নেহরুর পঞ্চশীল নীতি দশশীল নীতিতে পরিণত হয় । বলা হয় , এখানে গৃহীত ওই দশটি নীতিই বিশ্বে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল । ওই দশটি নীতি হল —
1. রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা জ্ঞাপন ;
2. অপরকে আক্রমণ নয় , আগ্রাসনের ভীতি প্রদর্শনও নয় ;
3. অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ নয় ;
4. সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযােগিতা প্রদান ;
5. গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান — আপস , সালিশি , আলাপ আলােচনা বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্ত বিরােধের মীমাংসা ;
6. মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ;
7. সমস্ত বর্ণ ও জাতির সমান অধিকারের স্বীকৃতি ;
8. সমস্ত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন ;
9. কোনাে বৃহৎ শক্তির সামরিক স্বার্থরক্ষা করা থেকে বিরত হওয়া ;
10. ন্যায়নীতি ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন ।
বান্দুং সম্মেলনের সাফল্য
বান্দুং সম্মেলনের সাফল্য প্রসঙ্গে বলা যায় —
1. এই সম্মেলনে যােগদানকারী ২৯ টি দেশ পরস্পরের সাথে পরিচিত হবার সুযােগ পায় ।
2. এই সম্মেলনে আফ্রো-এশীয় দেশগুলি নিজেদের মতগুলি একে অপরকে জানানাের , বােঝানাের সুযােগ পায় ।
3. এই সম্মেলনে জওহরলালের গৌরবজনক ভূমিকা , মিশরের গামাল আবদেল নাসেরের ভূমিকা এবং ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নোর ইতিবাচক ভূমিকার ফলে জাতীয় নেতারূপে তাঁদের মর্যাদা বাড়ে ।
4. এই সম্মেলনে যােগদানকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলি জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্য নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায় ।
5. এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশগুলি একে অপরকে সহযােগিতা করার সুযােগ পায় ।
বান্দুং সম্মেলনের ব্যর্থতা
বান্দুং সম্মেলনে সাফল্যের পাশাপাশি কয়েকটি ব্যর্থতাও দেখা যায় —
1. বিশ্ব শান্তি নিয়ে এই সম্মেলনে আলােচনা হলেও এ ব্যাপারে কোনাে নতুন পথের সন্ধান মেলেনি ।
2. বিশ্ব রাজনীতির সমস্যাগুলির কোনাে স্থায়ী সমাধান হয়নি ।
3. এই সম্মেলন থেকে কোনাে আন্তর্জাতিক স্থায়ী সংগঠন প্রতিষ্ঠার আভাস মেলেনি ।
উপসংহার
বান্দুং সম্মেলন জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় করতে ব্যর্থ হয় । কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যেভাবে বান্দুং এর ১০ টি নীতি ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল তা প্রশংসনীয় । সর্বোপরি এই সম্মেলন থেকেই কম্বােডিয়া , শ্রীলঙ্কা , জর্ডন , লিবিয়া , নেপাল ও জাপানসহ বিভিন্ন দেশের জাতিপুঞ্জে সদস্যপদ লাভের দাবিকে সমর্থন করা হয়েছিল ।