ডি ডে কি
Contents
ডি ডে কি
১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৬ জুন মিত্রশক্তির পক্ষে পশ্চিম ইউরােপে অবস্থিত ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার দিনটিকে ‘ ডি-ডে ’ ( Day of deliverance ) বা নিষ্কৃতি দিবস বলা হয় । সােভিয়েত রাশিয়ায় জার্মান আক্রমণের পর জোসেফ স্টালিন মিত্রপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে পূর্ব ইউরােপ থেকে পশ্চিম ইউরােপে যুদ্ধের রণাঙ্গন সরিয়ে নিতে বলেন । কিন্তু মিত্রশক্তি তাতে সাড়া দেয়নি । তাদের যুক্তি ছিল ইতালি ও আফ্রিকার যুদ্ধের অবসান ঘটার পূর্ব পর্যন্ত এরূপ কিছু করা সম্ভব নয় ।

আসলে মিত্রপক্ষ চেয়েছিল হিটলারের আক্রমণের মাধ্যমে আগে সােভিয়েত রাশিয়ায় সাম্যবাদ ধ্বংস হােক । কিন্তু পরবর্তী পরিস্থিতিতে রুশ সেনাবাহিনী গেরিলা আক্রমণের দ্বারা জার্মান বাহিনীকে পিছু হঠতে বাধ্য করলে বিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল স্টালিনের পূর্ব মত মানতে বাধ্য হন এবং দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার সিধান্ত নেন ।
ডি ডে ঘটনা
তেহরান বৈঠক — রুজভেল্টের প্রস্তাব :
ইউরােপের পশ্চিম দিকে দ্বিতীয় রণাঙ্গন খােলার জন্য আলােচনার লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল , রুশ রাষ্ট্রপ্রধান জোসেফ স্টালিন এবং আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্ক ডি রুজভেল্ট তেহরান বৈঠকে মিলিত হন ( ১৯৪৩ খ্রি. নভেম্বর ) । এই বৈঠকে চার্চিল প্রস্তাব রাখেন ইতালিতে মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনীর অবতরণ ঘটানাে হােক । রুজভেল্ট পালটা প্রস্তাব রেখে জানান উত্তর ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনীর অবতরণ ঘটানাে উচিত । বৈঠকে রুজভেল্টের প্রস্তাব গৃহীত হয় ।
মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনীর অবতরণ :
তেহরান বৈঠকে ঠিক হয়েছিল প্রথমে ৩৬ ডিভিশন ও পরে ১০ ডিভিশন সেনা নর্মান্ডিতে অবতরণ করবে । এই সেনাবাহিনীর মধ্যে থাকবে ১০ হাজার বিমান এবং ৭,৫০০ টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন । মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনীতে মার্কিন , ডাচ , ব্রিটিশ , ফরাসি , পােল , নরওয়েজীও , কানাডিয়ান ও গ্রিক প্রভৃতি সৈন্যের সমাবেশ ঘটেছিল । সেনা অবতরণের আগের দিন অর্থাৎ ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন সন্ধ্যায় মিত্রবাহিনীর প্রায় হাজার খানেক জঙ্গিবিমান ফ্রান্সের উপকূলবর্তী জার্মান প্রতিরক্ষা ঘাঁটিগুলির ওপর প্রবল বােমাবর্ষণ করে । এইভাবে ওই অঞ্চলের সমস্ত যােগাযােগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় । এরপর ৬ জুন ভােরে সূর্যোদয়ের আগে মার্কিন সেনাপতি আইজেন হাওয়ারের নেতৃত্বে ইংল্যান্ড থেকে চার হাজারেরও বেশি জাহাজে ১,৫৬,০০০ মিত্রসেনা নর্মান্ডি উপকূলের ৬০ মাইলব্যাপী অঞ্চলে পাঁচটি স্থানে অবতরণ করে । সেই সঙ্গে তাদের নিরাপত্তার জন্য আকাশে এগারাে হাজার যুদ্ধবিমান নিয়ােগ করা হয় । ঐতিহাসিক স্নাইডারের মতে — ইউরােপে সেনা অবতরণ উপলক্ষ্যে এত বিপুল সংখ্যক নৌবহর এর আগে দেখা যায়নি ।
প্যারিস দখল :
পাঁচদিন ধরে একটানা যুদ্ধ চলার পর জার্মান সেনাপ্রধান রােমেল পিছু হঠতে বাধ্য হন । জার্মান সেনাবাহিনী প্রবল পরাক্রমে লড়াই করেও মিত্রবাহিনীর অগ্রগতি রােধ করতে পারেনি । মিত্রসেনা একের পর এক ফরাসি ভূখণ্ড শত্রু কবল মুক্ত করতে থাকে । ফলে অচিরেই মার্সাই , নিস , লায়নস্ প্রভৃতি স্থান শত্রুমুক্ত হয় । দেখতে দেখতে মিত্রবাহিনী ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট রাজধানী প্যারিস দখল করে ।
জার্মানিতে প্রবেশ :
ফ্রান্সকে মুক্ত করার পর মিত্রপক্ষের সেনাবাহিনী একে একে বেলজিয়াম , লুক্সেমবার্গে প্রবেশ করে ও ব্রুসেলস , অ্যান্টওয়ার্পকে জার্মানদের কবল থেকে মুক্ত করে । নিষ্কৃতি দিবসের প্রায় ৯৭ দিন পর ( ১১ সেপ্টেম্বর ) মিত্রশক্তি বাহিনী জার্মানিতে প্রবেশ করে ও জার্মানির পতনকে অবশ্যম্ভাবী করে তােলে ।