অক্সিন এর বৈশিষ্ট্য উৎস ও কাজ
Contents
অক্সিন এর বৈশিষ্ট্য উৎস ও কাজ

উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গের অগ্রস্থ ভাজক কলা থেকে উৎপন্ন ইন্ডােল বর্গভুক্ত যে জৈব অম্ল মূলত নিম্নাভিমুখে পরিবাহিত হয়ে উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে , তাকে অক্সিন বলে ।
অক্সিন এর প্রকারভেদ ( types of auxin )
রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণে দেখা যায় অক্সিন তিন প্রকার ー
( i ) অক্সিন a বা অক্সেনােট্রায়ােলিক অ্যাসিড ( C18H32O5 ) ,
( ii ) অক্সিন b বা অক্সেনাে লােনিক অ্যাসিড ( C18H30O5 ) ,
( iii ) হেটেরো অক্সিন বা ইনডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড ( C10H9O2N ) ।
অক্সিনের বৈশিষ্ট্য
( i ) অক্সিন বৃদ্ধি সহায়ক নাইট্রোজেন যুক্ত বা নাইট্রোজেন বিহীন জৈব অ্যাসিড ।
( ii ) অক্সিন বর্ধনশীল অঙ্গের অগ্রস্থ ভাজককলা থেকে উৎপন্ন হয় ।
( iii ) অক্সিন উৎপত্তি স্থল থেকে সর্বদা নিম্নমুখে পরিবাহিত হওয়ায় এর পরিবহনকে একমুখী এবং হরমােনটিকে মেরু পরিবাহী বলা হয় ।
( iv ) আলাের উৎসের বিপরীত দিকে অক্সিন কার্যকরী হয় ।
( v ) অক্সিন জলে দ্রবণীয় হওয়ায় ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পরিবাহিত হয় ।
( vi ) অক্সিন মূলের থেকে কাণ্ডে অপেক্ষাকৃত বেশি ঘনত্বে কার্যকরী হয় ।
অক্সিন এর উৎস
উন্নত শ্রেণির উদ্ভিদের বর্ধনশীল অঙ্গের অগ্রস্থ ভাজক কলা থেকে অক্সিন উৎপন্ন হয় ।
অক্সিনের কাজ
কোশ বিভাজন :
অক্সিন সাইটোকাইনিনের উপস্থিতিতে DNA র পরিমাণ বৃদ্ধির দ্বারা নিউক্লিয়াসের বিভাজনে পরােক্ষভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোশ বিভাজনের হার বৃদ্ধি করে ।
কোশের আয়তন বৃদ্ধি :
সেলুলেজ নামক উৎসেচকের কার্যকারিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অক্সিন কোশপ্রাচীরের নমনীয়তা বৃদ্ধি করে কোশের আয়তন বাড়াতে সাহায্য করে ।
অগ্রমুকুলের প্রাধান্য :
অক্সিন কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি বন্ধ করে অগ্ৰমুকুলের বৃদ্ধি বাড়িয়ে দেয় , ফলে কাণ্ডের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পায় ।
কোশ দীর্ঘকরণ :
অন্যান্য শর্ত নিরপেক্ষ থাকলে কোশ দীর্ঘকরণ এবং অক্সিনের পরিমাণের সম্পর্ক সমানুপাতিক অর্থাৎ বর্ধনশীল অংশের কোশ অক্সিনের প্রভাবে দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায় ।
ক্যাম্বিয়ামের সক্রিয়তা :
স্বল্প মাত্রায় অক্সিন সাইটোকাইনিনের উপস্থিতিতে ক্যাম্বিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে গৌণ বৃদ্ধি ঘটায় ।
জাইলেমের বিকাশ :
অক্সিন জাইলেম কোশের কোশপ্রাচীরে স্থূলীভবন ঘটিয়ে জাইলেমের বিকাশে সাহায্য করে ।
মূলের বৃদ্ধি এবং অস্থানিক মূল উৎপাদন :
স্বল্প মাত্রার অক্সিন প্রয়ােগে মূলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় । কাণ্ডের কাটা অংশে উপযুক্ত ঘনত্বের অক্সিন দ্রবণ প্রয়ােগ করলে সেই স্থান থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয় ।
ক্যালাস গঠন :
ক্ষতস্থানে অক্সিন প্রয়ােগ করলে মজ্জা , বহিমজ্জা অঞ্চলের স্থায়ী কোশ অক্সিনের প্রভাবে বিভাজিত হয়ে একই ধরনের কোশসৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতস্থানে ক্যালাস গঠন করে ।
উদ্ভিদের গৌণবৃদ্ধি :
উদ্ভিদের গৌণভাজক কলার কোশগুলি অক্সিনের প্রভাবে বিভাজিত হয়ে উদ্ভিদের গৌণবৃদ্ধি ঘটায় ।
ফল গঠন :
অক্সিনের পরিমাণ নিষেকের পর ডিম্বাশয়ে বৃদ্ধি পায় , এর প্রভাবে ডিম্বাশয় ফলে এবং ডিম্বক বীজে পরিণত হয় ।
ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ :
অক্সিন ফটোট্রপিক এবং জিওট্রপিক চলনকে নিয়ন্ত্রণ করে । অক্সিনের ঘনত্ব আলাের উৎসের বিপরীত দিকে এবং অভিকর্ষের দিকে বেশি হওয়ায় ওই অংশের কোশগুলির বিভাজন ক্ষমতার হার বৃদ্ধি পায় একই সঙ্গে কোশগুলির দৈর্ঘ্য এবং আয়তন বৃদ্ধি পায় ফলে কাণ্ড আলাের দিকে এবং অভিকর্ষের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায় । আবার মূলের কোশগুলি অক্সিনের স্বল্প ঘনত্বে বেশি ক্রিয়াশীল হওয়ায় মূল আলাের বিপরীত দিকে এবং অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পায় ।
পাতা ও ফলের অকাল পতন রােধ :
নির্দিষ্ট ঘনত্বের অক্সিন পাতা ও ফলের বৃন্তের কোশগুলির সজীবতা রক্ষা করে ওই সকল অঙ্গের অকাল পতন রােধ করে ।
অঙ্গ পরিস্ফুরণ :
জিব্বারেলিনস্ – এর উপস্থিতিতে অক্সিন উদ্ভিদের মুকুল , পুস্প ইত্যাদির পরিস্ফুরনকে প্রভাবিত করে ।