ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ
Contents
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ

ভারতবাসীর স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে সর্বশেষ গণ আন্দোলন ছিল ভারত ছাড়াে বা আগস্ট আন্দোলন । গান্ধীজী ব্রিটিশকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন — পূর্ণ স্বাধীনতা অপেক্ষা কম কোনাে কিছুতেই আমি সন্তুষ্ট হব না । … আমরা করব অথবা মরব — করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে । এই আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথকে সুগম করলেও শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয় । এই ব্যর্থতার পিছনে ছিল বহুবিধ কারণের সমন্বয় ।
উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব
ভারত ছাড়াে আন্দোলন সম্পূর্ণরূপে গান্ধীজীর নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল ছিল । কিন্তু আন্দোলন শুরু হওয়ার আগেই গান্ধীজীসহ কংগ্রেসের সব শীর্ষনেতাকে কারারুদ্ধ করা হয় । গান্ধীজীর অবর্তমানে সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মতাে নেতার অনুপস্থিতিতে এই আন্দোলন ব্যর্থ হয় । গান্ধীজী বলেছিলেন — প্রতিটি কংগ্রেস কর্মী হবেন তাঁর নিজের নেতা এবং তাঁর মাতৃভূমির কাছে দানস্বরূপ ( ‘ Every Congressman is his own leader and a servant of the whole nation ‘ ) |
কমিউনিস্ট সহ অন্যান্য দলের বিরোধিতা
ভারতের কমিউনিস্ট দল পরােক্ষ ভাবে ভারত ছাড়াে আন্দোলনের বিরােধিতা করেছিল । জাতীয় আন্দোলনের মূলস্রোত থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে তারা উলটে ব্রিটিশের সহযােগিতা করে । মুসলিম লীগ , অনুন্নত সম্প্রদায় , লিবারেল গােষ্ঠী , হিন্দু মহাসভা , র্যাডিক্যাল ডেমােক্রেটিক পার্টি এই আন্দোলনে সহযােগিতা করেনি । হরিজন নেতা আম্বেদকর বলেন এই আন্দোলন ছিল অযৌক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন । ফলস্বরূপ আন্দোলন ব্যর্থ হয় ।
ব্রিটিশ এর তীব্র দমননীতি
ব্রিটিশ সরকার আগে থেকেই এই আন্দোলন দমনের জন্য নীল নকশা তৈরি করে রেখেছিল । দৈহিক নির্যাতন , গ্রেফতার , ঘর পুড়িয়ে দেওয়া , নারী ধর্ষণ , এমনকি গুলি চালিয়ে ব্রিটিশ এই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল । এ প্রসঙ্গে জওহরলাল নেহরু লিখেছেন — সৈন্যদল ও এরােপ্লেন এসে গ্রামে আক্রমণ চালিয়ে গ্রামগুলিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয় । তারপর তারা লাঙল চালিয়ে সেই গ্রামগুলির অস্তিত্ব সম্পূর্ণ ভাবে মুছে দেয় ।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ
১৯৪২ – এর অক্টোবরে বাংলায় দুর্গাপূজার সময় ঝড় ও বন্যা হয় । কিন্তু সেসময়কার ব্রিটিশ প্রশাসন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত মানুষদের জন্য কোনােরকম ত্রাণের ব্যবস্থা করেনি । ফলে হাজার হাজার লােক অনাহারে মারা যায় । প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য পূর্ব ভারতে ভারত ছাড়াে আন্দোলন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে ।
অসময়ে আন্দোলনের সূচনা
সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন এই আন্দোলনের সূচনা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু গান্ধী অনুগামীরা তখন তা করেননি । সেই আন্দোলন গান্ধীজি শুরু করেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে , যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রণাঙ্গনে ইংল্যান্ডসহ মিত্রপক্ষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে । ফলে এই বিলম্ব আন্দোলনকে ব্যর্থ করে ।