ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান
Contents
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মূলত তিনটি ধারায় পরিচালিত হয় । যথা ―
( i ) জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে অহিংস গণ আন্দোলনের ধারা ,
( ii ) সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ধারা এবং
( iii ) বিদেশি শক্তির সাহায্যে যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের প্রচেষ্টার ধারা । সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সংগ্রাম ছিল তৃতীয় ধারার স্বাধীনতা আন্দোলন ।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর উত্থান
কটক শহরে এক অভিজাত পরিবারে সুভাষের জন্ম হয় ( ১৮৯৭ খ্রি. ) । প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়নকালেই তাঁর ব্রিটিশ – বিরােধিতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে । এজন্য তাঁকে ওই কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয় । স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে সুভাষ সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন । আই. সি. এস. পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করা সত্ত্বেও তিনি ইংরেজের পদলেহন না করে কংগ্রেসের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন । কিন্তু ক্রমশ কংগ্রেসের ব্যর্থ আপসনীতি তাঁকে হতাশ করে তােলে । তিনি কংগ্রেসকে আবেদন নিবেদনের পরিবর্তে জঙ্গি নীতি গ্রহণের জন্য চাপ দিতে থাকেন । সুভাষচন্দ্র ছিলেন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আপসহীন সৈনিক এবং বামপন্থী মনােভাবাপন্ন । তিনি হরিপুরা অধিবেশনে ( ১৯৩৮ খ্রি. ) কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিত হন । কিন্তু গান্ধীজীর সঙ্গে তাঁর আদর্শগত সংঘাত শুরু হয় । বামপন্থীদের সহায়তায় ত্রিপুরি কংগ্রেসে ( ১৯৩৯ খ্রি. ) সুভাষচন্দ্র সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন এবং কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থীদের নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি শাখা গঠন করেন । শেষপর্যন্ত গান্ধীজীর বিরােধিতায় তিনি পদত্যাগ করলে ফরওয়ার্ড ব্লক একটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ।
সুভাষচন্দ্র বসুর ভারত ত্যাগ
সুভাষচন্দ্রের পরবর্তী কার্যক্রম ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযােগে ইংরেজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ভারতকে স্বাধীন করা । এ কথা জানতে পেরে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার তাঁকে বন্দি করে । কিছুদিন পরে অসুস্থতার জন্য তাঁকে স্বগৃহে অন্তরিন রাখা হয় । কিন্তু পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে সুভাষচন্দ্র গৃহত্যাগ করেন ( ১৭ জানুয়ারি , ১৯৪১ ) এবং কাবুলে পৌঁছােন । ড. অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে , রবীন্দ্রনাথ যাকে দেশনায়ক বলে গ্রহণ করেছিলেন , ভাগ্যের পরিহাসে তাঁকে দশত্যাগ করতে হল ।
জার্মানিতে সুভাষচন্দ্র
কাবুল থেকে মস্কো হয়ে সুভাষচন্দ্র বার্লিনে উপস্থিত হন । তিনি ভারতকে স্বাধীন করার জন্য জার্মানির সাহায্য প্রার্থনা করেন । বার্লিন বেতার থেকে তিনি ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য ভারতবাসীকে আহ্বান জানান । জার্মানির প্রবাসী ভারতীয়রা তাঁকে নেতাজি সম্বােধনে ভূষিত করেন ।
জাপানে সুভাষচন্দ্র
তিনি অনুভব করেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে কোনাে দেশ থেকে মুক্তি যুদ্ধ পরিচালনা করা সহজ হবে । তাই তিনি জাপানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন । পরিকল্পনা মতাে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে সুভাষচন্দ্র বসু জাপানে উপস্থিত হন । সেই সময়ে প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসু জাপানের হাতে বন্দি ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে একটি সেনাবাহিনী গঠন করে সুভাষচন্দ্রকে এর দায়িত্বভার গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান । দায়িত্ব গ্রহণ করে সুভাষচন্দ্র এই বাহিনীর নাম দেন আজাদ হিন্দ ফৌজ ।
সুভাষচন্দ্র নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ
সুভাষচন্দ্রের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব ও অনুপ্রেরণায় আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যগণ নতুন প্রেরণা লাভ করে ।
( i ) সিঙ্গাপুরে নেতাজি স্বাধীন আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন । ১৯৪৪ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি আজাদ হিন্দ সরকার ও ফৌজের প্রধান কর্মকেন্দ্র রেঙ্গুনে স্থানান্তরিত করেন ।
( ii ) তাঁর নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতে প্রবেশ করে এবং কোহিমা ও বিষেণপুর দখল করতে সমর্থ হয় । তাঁরা কোহিমাতে স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ।
( iii ) সুভাষচন্দ্রের পরিকল্পনা ছিল ইংরেজকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করা । তাঁর দিল্লি চলাে আহ্বান সমস্ত সৈনিক ও স্বাধীনতাকামী দেশবাসীর মনে অভূতপূর্ব উন্মাদনা সৃষ্টি করে । কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের ফলে সুভাষচন্দ্রও অস্ত্রত্যাগ করতে বাধ্য হন । ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ আগস্ট নেতাজি এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন বলে কেউ কেউ মনে করেন । কিন্তু ভারতবাসী আজও এ কথা বিশ্বাস করে না ।
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর অবদান
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্রের অবদানকে অস্বীকার করা যায় না ।
( i ) সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের মুক্তি সংগ্রাম ইংরেজ সরকারের ভীতির কারণ হয়ে উঠেছিল । বিদেশে তাঁর সাহসী লড়াই ভারতবাসীর স্বাধীনতা সংগ্রামকে উজ্জীবিত করেছিল নতুন শক্তিতে ।
( ii ) তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজে হিন্দু ও মুসলমান সৈনিকের অপূর্ব সমন্বয়সাধন করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ।
( iii ) সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রামের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভারতীয় নৌ বাহিনী ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে শামিল হয়েছিল । সেনাবাহিনীর এই অসন্তোষ ব্রিটিশ সরকারকে ভীষণভাবে আতঙ্কিত করে তােলে ।
মূল্যায়ন
সুভাষচন্দ্রের সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের আদর্শ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনকে সহজতর করে তােলে । মাইকেল এডওয়ার্ডস ‘ Last Years of the British Raj ‘ গ্রন্থে বলেছেন , হ্যামলেটের পিতার ন্যায় সুভাষ বসুর প্রেতাত্মা যেন লাল কেল্লার চত্বরে ঘুরছিল এবং তাঁর হঠাৎ বৃহদাকার প্রতিকৃতি সভাকক্ষে যে ত্রাস সঞ্চার করে তার ফলেই স্বাধীনতার পথে উত্তরণ সুগম হয় ।
Wow
Op
Good
Wow
Good…& thanks yaar..😇😇
NICE 👍
Awesom
Good