ইতিহাস

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর অবদান

Contents

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর অবদান

ভারতের জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে গান্ধীজীর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তাঁর নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় আন্দোলন নতুন মাত্রা ও গতিবেগ পায় । ভারতের জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন গান্ধীজী । জওহরলাল নেহরু  তাঁর ‘ Discovery of India ‘ গ্রন্থে ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজীর আবির্ভাব প্রসঙ্গে বলেছেন , তিনি ছিলেন টাটকা বাতাসের একটা প্রবল প্রবাহের মতাে , আমাদের তিনি জাগিয়ে দিলেন , গভীর শ্বাস নিলাম আমরা । 

জাতীয় আন্দোলনে গান্ধীজীর আবির্ভাব 

গান্ধীজী ব্যারিস্টারি পাস করে স্বদেশে ফিরে আসার অল্পকালের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় যান এবং সেখানে বর্ণ বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেন । দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে এসে তিনি ভারতের জাতীয় আন্দোলনে যােগদান করেন । আমেদাবাদের সবরমতী নদীতীরে একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করে ( ১৯১৫ খ্রি. ) তিনি ভারতীয়দের সত্যাগ্রহের আদর্শ ও পদ্ধতি সম্বন্ধে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেন ।

স্থানীয় সত্যাগ্রহ আন্দোলনে নেতৃত্বদান 

বৃহত্তর জাতীয় আন্দোলনে প্রত্যক্ষভাবে যােগ দানের আগে গান্ধীজী দক্ষতার সঙ্গে কয়েকটি আঞ্চলিক আন্দোলন গড়ে তােলেন । তিনি বিহারের চম্পারণে , আমেদাবাদে এবং গুজরাটের খেদায় সত্যাগ্রহ আন্দোলন করে সাফল্য পান । এরপর তিনি সর্বভারতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন । 

রাওলাট সত্যাগ্রহ 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে দমনমূলক রাওলাট আইন জারি করে ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকেও নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগী হয় । গান্ধীজী বড়ােলাটকে ‘ রাওলাট আইন ’ প্রত্যাহারের অনুরােধ জানান । কিন্তু বড়লাট তা মানতে অস্বীকার করেন । অতঃপর গান্ধীজী সত্যাগ্রহের ডাক দেন । তাঁর নির্দেশে ১৯১৯ -এর ৬ এপ্রিল সারাদেশে ধর্মঘট পালিত হয় । কোনাে কোনাে স্থানে রাওলাট আইন বিরােধী সত্যাগ্রহ আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠলে তিনি আন্দোলন স্থগিত রাখার আবেদন জানান । 

খিলাফৎ আন্দোলন 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর খিলাফৎ আন্দোলনের সূচনা হলে গান্ধীজী তাকে সমর্থন করেন । গান্ধীজীকে সর্বভারতীয় খিলাফৎ সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচন করা হয় । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে খিলাফৎ কমিটির পক্ষে একটি ইস্তাহার প্রকাশ করে তিনি অহিংস অসহযােগ ( Non-violent Non-co operation ) – এর তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেন । 

অসহযােগ আন্দোলন 

খিলাফৎ আন্দোলনের সঙ্গে কংগ্রেসের আন্দোলনকে যুক্ত করে তিনি অহিংস অসহযােগ আন্দোলনকে জোরদার করতে সচেষ্ট হন । কংগ্রেসের নাগপুর অধিবেশন ( ১৯২০ খ্রি. ) -এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট অসহযােগ আন্দোলনের সূচনা ঘটে । আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল সরকারি খেতাব প্রত্যাখ্যান , সরকারি অনুষ্ঠান বর্জন , স্কুল কলেজ বয়কট , অফিস আদালত বয়কট , বিদেশি দ্রব্য বর্জন ইত্যাদি । গান্ধীজীর নেতৃত্বে অসহযােগ আন্দোলন অতি দ্রুত ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে । কিন্তু উত্তরপ্রদেশের চৌরিচৌরায় আন্দোলনকারী জনতা একটি পুলিশ ফাঁড়িতে অগ্নিসংযােগ করলে গান্ধীজী অকস্মাৎ এই আন্দোলন স্থগিত করে দেন ।

আইন অমান্য আন্দোলন 

ইংরেজের বিমাতৃসুলভ আচরণ ও একগুঁয়েমির ফলে কংগ্রেস ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে লাহাের অধিবেশনে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনের প্রস্তাব গ্রহণ করে । স্থির হয় , আগামী এক বছরের মধ্যে ব্রিটিশ সরকার স্বায়ত্তশাসন অধিকার প্রদান করলে কংগ্রেস তাতেই সন্তুষ্ট থাকবে । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার এবারেও কংগ্রেসের দাবিকে নস্যাৎ করে দেয় । এমতাবস্থায় কংগ্রেস গান্ধীজীর নেতৃত্বে আইন অমান্য আন্দোলনের কর্মসূচি ঘােষণা করে । লবণ আইন ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে গান্ধীজী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ ৭৮ জন অনুগামীসহ ডান্ডি অভিযান করেন এবং লবণ আইন ভঙ্গ করে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করেন । সারা দেশে অভূতপূর্ব সাড়া পড়ে যায় । বাংলা , মহারাষ্ট্র , উত্তর – পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ প্রভৃতি স্থানে আইন অমান্য আন্দোলন ব্যাপক আকার লাভ করে । গ্রামীণ কৃষক ও শ্রমিকশ্রেণীর মধ্যে এই আন্দোলন যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে । 

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা বিরােধিতা

ধূর্ত ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন কে ভাঙার জন্য এই সময়ে ( আগস্ট , ১৯৩২ খ্রি. ) সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার সিদ্ধান্ত ঘােষণা করে । নিম্নবর্ণের হিন্দুদের পৃথক গােষ্ঠীভুক্ত করার এই ব্রিটিশ চক্রান্তের প্রতিবাদে গান্ধীজী যারবেদা জেলে অনশন শুরু করেন এবং শেষ পর্যন্ত আম্বেদকরের সঙ্গে পুনা চুক্তি স্বাক্ষর করে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে হিন্দু সমাজকে বিভাজন করার এই চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেন । 

ভারত ছাড়াে আন্দোলন 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন প্রাণস্পন্দন দেখা দেয় । ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর অনুমােদন ছাড়াই ভারতবর্ষকে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে ফেললে দেশবাসী ক্ষুদ্ধ হয় । এই সংকট মুহূর্তে গান্ধীজী আবার জাতীয় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন । ‘ হরিজন ’ পত্রিকায় এক প্রবন্ধ প্রকাশ করে তিনি বলেন যে , ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকার কারণেই এদেশে জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে । ইংরেজ ভারত ছেড়ে গেলে ভারতবর্ষে বিদেশি আক্রমণের আশঙ্কা থাকবে না । তাঁর এই বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে ১৯৪২ -এর ৮ আগস্ট গান্ধীজীর নেতৃত্বে কংগ্রেস ভারত ছাড়াে আন্দোলনের ডাক দেয় । তাঁর স্লোগান ছিল করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে । 

মূল্যায়ন 

ভারতের জাতীয় আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন গান্ধীজী । তিনিই প্রথম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে গণ – আন্দোলনের রূপ দেন । তাঁর সহজ সরল জীবনধারা সারা দেশের সমস্ত শ্রেণির মানুষকে আকৃষ্ট করে । তাঁর আহ্বানে শ্রমিক , কৃষক , বুদ্ধিজীবী , ছাত্র প্রভৃতি নানাস্তরের মানুষ জাতীয় আন্দোলনে শামিল হন । তাই জাতির জনক হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।

2 thoughts on “ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন মহাত্মা গান্ধীর অবদান

  • Prity malakar

    Thank you very much apke liye me essay complete Kar paye hu.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!