স্বদেশী ও স্বরাজ বলতে কী বােঝ
স্বদেশী ও স্বরাজ বলতে কী বােঝ
লর্ড কার্জন অন্যায়ভাবে বাংলাকে ভাগ করতে চাইলে সারা বাংলা প্রতিবাদে গর্জে ওঠে । শুরু হয় বঙ্গভঙ্গ বিরােধী আন্দোলন ( ১৯০৫ খ্রি. ) । এই আন্দোলনে স্বদেশী ও স্বরাজ — এই দুটি গঠনমূলক আদর্শকে ভিত্তি করে জাতীয়তাবােধ সম্প্রসারিত হয় ।
স্বদেশী
‘ স্বদেশী ’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল দেশীয় । বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় ‘ স্বদেশী ’ কথাটি বহুল প্রচারিত হয় ।
1. ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও প্রতিরােধ হিসেবে দেশে স্বদেশি আন্দোলনের জোয়ার আসে ।
2. অবশ্য ‘ স্বদেশী ’ আদর্শ ও চেতনা আমাদের দেশে আগে থেকেই ছিল । ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশীর কথা পুনাতে প্রথম বলেন গােপালহরি দেশমুখ । কলকাতায় মুখার্জিস ম্যাগাজিন এ ভােলানাথ চন্দ্র একাধিক প্রবন্ধ রচনা করে স্বদেশী আদর্শকে জনপ্রিয় করে তােলেন ।
3. ‘ স্বদেশী ’ হল দেশের ঐতিহ্য ও জীবনধারার প্রতি আস্থা ও শ্রদ্ধা ।
4. স্বদেশী সম্পর্কে লালা লাজপত রায় বলেন যে , স্বদেশী মানে দেশের মুক্তি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বদেশী অর্জনের জন্য আত্মশক্তি বিকাশের ওপর জোর দেন ।
স্বরাজ
ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় ‘ স্বরাজ ’ কথাটিও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ।
1. জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে ( ১৯০৬ খ্রি. ) সভাপতির ভাষণে দাদাভাই নওরােজি জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য হিসেবে ‘ স্বরাজ ’ অর্জনের কথা বলেন ।
2. পরবর্তীকালে নরমপন্থী ও চরমপন্থী নেতারা নিজ নিজ আদর্শ অনুযায়ী ‘ স্বরাজ ’ শব্দের ব্যাখ্যা করেন । নরমপন্থী নেতাদের কেউ কেউ স্বরাজ বলতে ব্রিটিশ শাসনের মধ্যে থেকে স্বাধিকার অর্জনের কথা বলেন । প্রখ্যাত বিপ্লবী সখারাম গণেশ দেউস্কর ( ১৮৬৯-১৯১২ খ্রি. ) ‘ স্বরাজ ’ শব্দটি স্বাধীনতার প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহার করেন । বিপিনচন্দ্র পালের ভাষায় স্বরাজ হল , ব্রিটিশ শাসন মুক্ত আত্মকর্তৃত্ব ।
3. বালগঙ্গাধর তিলক বলেন , ‘ স্বরাজ আমার জন্মগত অধিকার ’। তবে তিলকের কাছে ‘ স্বরাজ ’ এর অর্থ ছিল শাসন ব্যবস্থার ওপর ভারতীয় নিয়ন্ত্রণ স্থাপন ।
4. আবার অরবিন্দ ঘােষের বিচারে স্বরাজ ছিল ‘ নৈতিক ’ ও ‘ আধ্যাত্মিক ’ শক্তির প্রকাশ । জাতীয় আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রথমে ‘ স্বরাজ ’ বলতে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বােঝানাে হত । পরবর্তীকালে ‘ স্বরাজ ’ অর্থে ‘স্বাধীনতা ’কে বােঝানাে হয় ।