ইতিহাস

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণ

Contents

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ কারণ

কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের ( ১৪৯২ খ্রি. ) পর ইংরেজরাই প্রথম সেখানে উপনিবেশ গড়ে তােলে (১৬০৭ খ্রি. ) । সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে স্টুয়ার্ট রাজবংশের রাজত্বকালে অ্যাংলিকান স্টুয়ার্ট শাসকগণ পিউরিটানদের ওপর ধর্মীয় অত্যাচার শুরু করলে তারা ইংল্যান্ড ছেড়ে আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশে এসে বসবাস শুরু করে । ঔপনিবেশিক শক্তি হিসেবে ব্রিটিশ আমেরিকার ১৩টি উপনিবেশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কর চাপালে উপনিবেশবাসীরা ব্রিটিশের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় , যা আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম বা আমেরিকার বিপ্লব নামে পরিচিত ।

lossy page1 800px Boston Massacre 03 05 1770 NARA 518262.tif
স্বাধীনতা লড়াই

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পরোক্ষ কারণ

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পরোক্ষ কারণগুলি হল 一

ধর্মীয় বিদ্বেষ : 

বহুদিন থেকেই একদল আমেরিকান ঔপনিবেশিক ইংল্যান্ডের রাজার সার্বভৌমত্ব নানাভাবে অস্বীকার করে আসছিল । এদের অধিকাংশই ছিল পিউরিটান ধর্মাবলম্বী ইংরেজদের বংশধর । কাজেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটা স্বাভাবিক ক্রোধ বংশানুক্রমে তারা বহন করে আসছিল ।

সামাজিক বৈষম্য : 

যেখানে ব্রিটিশ – সমাজে ছিল অভিজাতদেরই প্রাধান্য , সেক্ষেত্রে ঔপনিবেশিকরা ছিল নিম্নশ্রেণির ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ভুক্ত । তাই ঐতিহাসিক ট্রাভেলিয়ান  বলেছেন — প্রাচীন ব্রিটিশ সমাজব্যবস্থার সঙ্গে তরুণ মার্কিন সমাজের সংঘাত ছিল একটি অনিবার্য ব্যাপার ।

স্বায়ত্তশাসন ভোগ : 

ইংল্যান্ড তার আমেরিকার উপনিবেশগুলির ক্ষেত্রে হিতকর উদাসীনতা নীতি অনুসরণ করায় ঔপনিবেশিকরা দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন ভােগ করে আসছিল । ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস , আত্মমর্যাদা ও একাত্মবােধ খুবই প্রখর হয়ে উঠেছিল ।

জাতীয়তাবোধের উন্মেষ :

নেভিগেশন আইন’ ( ১৬৬০ খ্রি. ) জারি করে ইংরেজের নগ্ন অর্থনৈতিক শােষন পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিকদের মনে এক গভীর জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তােলে ।

ফরাসি ভীতির অবসান : 

সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে ফরাসিদের পরাজয়ে কানাডা ইংরেজের হস্তগত হলে আমেরিকাবাসীদের মন থেকে ফারাসি আক্রমণের ভীতি দূর হয় এবং তাদের নিরাপত্তাবােধ বৃদ্ধি পায় ।

স্বাতন্ত্র্য বোধ : 

উপনিবেশবাসীরা ক্রমশ উপলদ্ধি করে যে ইংরেজ জাতি থেকে তারা সম্পূর্ণ পৃথক । ফলে , একটা বিচ্ছিন্নতা ও স্বাতন্ত্র্যবােধ তাদের মধ্যে জন্ম নেয় । হাজার হাজার কিলােমিটার দূরের একটা সরকারের শাসন বরদাস্ত করতে ঔপনিবেশিকরা আর রাজি ছিল না । মার্কিন চিন্তাবিদ টমাস পেইন লেখেন — ভাবতে অবাক লাগে যে , একটি ছােটো দ্বীপ ( ইংল্যান্ড ) কীভাবে একটি মহাদেশকে ( আমেরিকা ) অনন্তকাল ধরে শাসন করে যাবে ।

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণ 

আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রত্যক্ষ কারণগুলি হল —

ব্রিটিশের কর-নীতি : 

সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির জন্য ইংল্যান্ডের জাতীয় ঋণ বেড়ে গেলে তা থেকে মুক্তি পেতে আমেরিকার তেরােটি উপনিবেশে ব্রিটিশ বিভিন্ন সময়ে একাধিক কর চাপায় । আমেরিকার তেরােটি উপনিবেশ নেভিগেশন আইন ( ১৬৬০ খ্রি. ) , সহায়তার পরােয়ানা , সুগার অ্যাক্ট ( ১৭৬৪ খ্রি. ) , স্ট্যাম্প অ্যাক্ট ( ১৭৬৫ খ্রি. ) , ঘােষণার আইন ( ১৭৬৬ খ্রি. ) ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় । চা এর ওপর তিন পেনি কর বহাল রাখার জন্য ঘটে যায় বােস্টন হত্যাকাণ্ড , বােস্টন টি পার্টি ( ১৭৭৩ খ্রি. )-র মতাে ঘটনা । শুরু হয়  ঔপনিবেশিকদের সঙ্গে ব্রিটিশের লড়াই । এই প্রসঙ্গে লর্ড অ্যাকটন  বলেছেন — ওই তিন পেনির জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র : 

অবশেষে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে , তৃতীয় ফিলাডেলফিয়া কংগ্রেসে ঔপনিবেশিকরা স্বাধীনতার ঘােষণাপত্র জারি করে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!