ইতিহাস

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি

Contents

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি

শীর্ষ নেতৃবর্গের সঙ্গে আলোচনার সূত্রে 

ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন প্রায় দেড় মাসের মধ্যে ( ১৯৪৭ খ্রি. ৬ মের মধ্যে ) গান্ধীজি , জওহরলাল , বল্লভভাই প্যাটেল , জিন্না ও দেশীয় রাজাদের সঙ্গে প্রায় ১৩৩ বার বৈঠকে বসেন । কিন্তু তাঁর সদর্থক ইচ্ছার অভাবে ও জিন্নার একগুঁয়েমির জন্য সকল আলােচনাই ভেস্তে যায় । মাউন্টব্যাটেন সিদ্ধান্তে এলেন যে , ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন নির্ধারিত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে এক বিকল্প পরিকল্পনা রচনা করা দরকার । 

বলকান পরিকল্পনা রচনার মাধ্যমে 

বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে মাউন্টব্যাটেন বলকান পরিকল্পনা ( Plan Balkan ) অনুসরণ করেন । এই পরিকল্পনায় পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয় যেসকল প্রদেশ বা উপপ্রদেশ সাংবিধানিক সভায় যােগ দেবে তাদেরও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে । কিন্তু নেহরু ও জিন্না এই পরিকল্পনাকে গ্রহণ না করায় বলকান পরিকল্পনা তার কার্যকারিতা হারায় । ভারত বিভাজনের সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে । 

প্ল্যান পার্টিশানের রূপায়ণের দ্বারা 

মাউন্টব্যাটেন হতােদ্যম না হয়ে দেশভাগ ও ক্ষমতা হস্তান্তরের উপর আরও বেশি করে জোর দেন । তিনি ভারত বিভাজনের লক্ষ্যে প্ল্যান পার্টিশান নামক এক পরিকল্পনা পেশ করেন । নেহরু ও ভি.পি. মেননের সাহায্য নিয়ে তিনি এই পরিকল্পনা রচনা করেন । এই পরিকল্পনায় বলা হয় — ভারত ও পাকিস্তান দুপক্ষের ডােমিনিয়ন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে । মাউন্টব্যাটেনের এই কু-চাল বুঝেও নেহরু অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে একে মেনে নেন । জিন্নাও এই প্রস্তাব মেনে নিলে মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের তারিখ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাস থেকে এগিয়ে নিয়ে এসে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট নির্ধারণ করেন । 

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাশের মাধ্যমে 

মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব মেনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় স্বাধীনতা বিল রচনা করে । আইনসভায় পাশ হওয়ার ( ১৬ জুলাই ) পর সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ বিলটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন ( ১৮ জুলাই ) । বিলটি আইনে পরিণত হলে বড়ােলাট মাউন্টব্যাটেন তা কার্যকর করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ডােমিনিয়নের প্রতিষ্ঠা ঘটান । 

কংগ্রেস ও লিগের সাহায্য নিয়ে 

গান্ধীজি ও মৌলানা আজাদ দেশভাগের ঘাের বিরােধী হলেও নেহরু ও প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কার্যকরী সমিতি শেষ পর্যন্ত ভারত বিভাজনে সায় দিয়েছিল । কংগ্রেসের পাশাপাশি মুসলিম লিগও মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব মেনে নিলে ভারত বিভাজন সম্ভব হয় । আসলে পাঞ্জাব ও বাংলায় হাজার হাজার মুসলিম যেভাবে আলাদা রাষ্ট্রের দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠছিল তাকেই বৈধতা দিয়েছিলেন মাউন্টব্যাটেন । উইনস্টন চার্চিলের প্ররােচনায় প্ররােচিত হয়ে জিন্নার নেতৃত্বাধীন মুসলিম লিগ আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে অনড় থাকায় মাউন্টব্যাটেনের পক্ষে ভারত বিভাজন করা সহজ হয় ।

মন্তব্য 

ভারত বিভাজন তথা ভারত ও পাকিস্তান এই দুটি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টির জন্য মাউন্টব্যাটেন তাঁর দায় এড়াতে পারেন না । আসলে গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার অজুহাতে মাউন্টব্যাটেন সুচতুরভাবে ভারত বিভাজনের পরিকল্পনা রূপায়ণ করেন । এ প্রসঙ্গে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ  তাঁর ‘ India wins Freedom ‘ নামক আত্মজীবনীতে লিখেছেন — মাউন্টব্যাটেন প্রথম পাকিস্তান গঠনের অনুকূলে মত দেন এবং শাসন পরিষদের কংগ্রেস সদস্যদের মনে এই মতলবের বীজ বপন করেন । 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!