ইতিহাস

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা কী

Contents

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনা কী

ভাইসরয় লর্ড ওয়াভেলের পরিকল্পনা অনুসারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর নতুন ব্রিটিশ মন্ত্রীসভা ভারতীয় নেতৃবর্গের সঙ্গে আলাপ আলােচনার জন্য তার তিনজন সদস্যকে ভারতে পাঠাবার সিদ্ধান্ত নেয় ( ১৯৪৬ খ্রি. ২৪ মার্চ ) । ভারত সচিব লর্ড পেথিক লরেন্স , বাণিজ্য সচিব স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস্ এবং নৌ-সচিব মি. এ. ভি. আলেকজান্ডার — এই তিনজন মন্ত্রীকে নিয়ে গড়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন এই দলটি ভারতের ইতিহাসে ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন ( ১৯৪৬ খ্রি. ) নামে খ্যাত । 

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনার উদ্দেশ্য

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশনের উদ্দেশ্য ছিল দুটি — 

1. ভারতকে স্বাধীনতা দান এবং ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য যে গণপরিষদ তৈরি হবে তার গঠন , পদ্ধতি ও নীতি নির্ধারণ করা । 

2. ভারতের সকল রাজনৈতিক দলগুলির বৃহত্তর মতৈক্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তীকালের জন্য একটি জনপ্রতিনিধি ভিত্তিক সরকার গঠন করা । 

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনার প্রস্তাব

এই মিশনের প্রধান প্রস্তাবগুলি ছিল — 

1. ভারতে একটি দ্বিস্তর বিশিষ্ট যুক্তরাষ্ট্র গঠিত হবে । দেশীয় রাজ্যগুলি এই যুক্তরাষ্ট্রে যােগ দিতে পারবে । 

2. কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে । কেবলমাত্র পররাষ্ট্র , প্রতিরক্ষা ও যােগাযােগ বিষয়ক ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর । বাকি ক্ষমতা থাকবে প্রদেশের হাতে । 

3. প্রদেশগুলিকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করা হবে — মাদ্রাজ , বােম্বাই , উত্তরপ্রদেশ , বিহার , মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা নিয়ে গঠিত হিন্দু প্রধান বা ক বিভাগ , পাঞ্জাব , উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ , সিন্ধু নিয়ে গঠিত মুসলিম প্রধান বা খ বিভাগ এবং বাংলা ও আসাম নিয়ে একটি পৃথক বিভাগ বা গ বিভাগ । এই বিভাগগুলির নিজ নিজ আঞ্চলিক সংবিধান প্রণয়নের অধিকার থাকবে । 

3. ভারত যুক্তরাষ্ট্রে যােগদানে ইচ্ছুক দেশীয় রাজ্য ও প্রদেশগুলির নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান রচনার জন্য গণপরিষদ গঠিত হবে । 

4. নতুন সংবিধান চালু হলে যে কোনাে নির্বাচিত প্রাদেশিক আইনসভা ইচ্ছা করলে যে কোনাে বিভাগে যােগ দিতে কিংবা যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতেও পারবে । 

5. যতদিন না নতুন সংবিধান প্রণীত হয় , ততদিন ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধি নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার গঠন করা হবে । 

ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনার গুরুত্ব

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের মন্ত্রী মিশনের প্রস্তাবগুলি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ ছিল । 

ভারতকে অবিভক্ত রাখার শেষ প্রয়াস হিসেবে : 

মিশন স্পষ্টই বুঝে গিয়েছিল যে , ভারত ভেঙে পাকিস্তান সৃষ্টি এই উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক সমস্যা সমাধান এর সঠিক কোন পথ নয় তাই ভারতকে অবিভক্ত দেখে স্বাধীনতা দেওয়ার এটাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের শেষ আন্তরিক প্রয়াস । 

প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারদানে : 

এই প্রথম দেশীয় রাজ্যের জনগণকে প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয় । 

অসাম্প্রদায়িক শাসনতান্ত্রিক পদক্ষেপ হিসেবে : 

এতদিন শাসনতান্ত্রিক আলােচনার ক্ষেত্রে ভারতের বিভিন্ন গােষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকে কেন্দ্র করে নানা জটিলতার সৃষ্টি হত । মন্ত্রী মিশন তা থেকে মুক্তি পেতে হিন্দু , মুসলিম ও পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে শিখ ছাড়া অন্য কোনাে সম্প্রদায়কে সেক্ষেত্রে স্বীকৃতি না দিয়ে এক ইতিহাস সৃষ্টি করে । 

অ-ভারতীয় সদস্যগ্রহণের ক্ষেত্রে : 

গণপরিষদে কোনাে অ-ভারতীয় সদস্য গ্রহণের প্রস্তাব ছিল না । 

গণপরিষদের ক্ষমতায় : 

ভারতীয় শাসনতন্ত্র রচনার ক্ষেত্রে গণপরিষদকেই সার্বভৌম ক্ষমতা দেওয়া হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!