ইতিহাস

ওয়াভেল পরিকল্পনা কি

Contents

ওয়াভেল পরিকল্পনা কি

ভারতের ব্রিটিশ বাহিনীর ভূত পূর্ব সর্বাধিনায়ক লর্ড ওয়াভেল ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে এদেশের ভাইসরয় হয়ে আসেন । ভারতে রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িক সংকট মীমাংসায় গান্ধী – জিন্না আলােচনা ব্যর্থ হওয়ায় যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় তা দূর করার জন্য তিনি ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৪ জুন কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের কাছে একটি সূত্র উত্থাপন করেন । সেটিই ওয়াভেল পরিকল্পনা নামে খ্যাত । সেসময়কার ভারত সচিব এল. এস. আমেরি  এই পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন — আমরা ভারতীয়দের হাতেই তাৎক্ষণিক ভবিষ্যৎ তুলে দিতে চাই ।

ওয়াভেল পরিকল্পনা এর সুপারিশ

এই পরিকল্পনায় ওয়াভেল ভারতকে ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসন দানের ক্রিপস্ প্রস্তাবকে ( ১৯৪২ খ্রি. ) পূর্ণ সমর্থন জানান । এ ছাড়া ভারতীয়দের হাতে অধিকতর ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ করে কেন্দ্রীয় শাসন পরিষদ পুনর্গঠনের সুপারিশও করেন । তিনি বলেন — 

1. নতুন সংবিধান গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত ভারতীয় নেতাদের নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে । 

2. বড়ােলাটের শাসন পরিষদে বর্ণহিন্দু ও মুসলমান সদস্যের সংখ্যা সমান থাকবে । 

3. একমাত্র বড়ােলাট ও প্রধান সেনাপতি ছাড়া শাসন পরিষদের অন্য সমস্ত সদস্য হবে ভারতীয় । 

4. ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্ব পর্যন্ত ভারতের প্রতিরক্ষার দায়িত্ব ব্রিটিশের হাতেই থাকবে । 

5. সরকার যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তর করবে এবং সংবিধান রচনার কাজ আরম্ভ করবে । 

ওয়াভেল পরিকল্পনা এর পরিণতি

লর্ড ওয়াভেল তার পরিকল্পনাগুলি বাস্তবায়িত করার জন্য সিমলায় এক সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন ( ১৯৪৫ খ্রি. ২৫ জুন ) । কিন্তু জিন্নার একগুঁয়েমিতে মুসলিম লিগ বৈঠকে নেতিবাচক ভূমিকা নেয় । এই বৈঠক চলে ২৫ জুন থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত । স্বায়ত্তশাসন অর্জনে লিগের সঙ্গে ঐক্যমত গড়ে তােলার জন্য কংগ্রেস মুসলিমদের সমপ্রতিনিধিত্বের দাবি মেনে নিয়েছিল । কিন্তু জিন্না যখন বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতিতে লিগের দ্বারা মুসলিম সদস্য নিয়ােগের দাবি জানান তখন কংগ্রেস সে দাবি মেনে নিতে চায়নি । এ ছাড়া ব্রিটেনের রক্ষণশীল দলও ভারত ত্যাগ করতে রাজি ছিল না । ফলে সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয় । 

উপসংহার 

সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর বড়ােলাট কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভার প্রতিনিধি নির্ধারণের জন্য নির্বাচনের ঘােষণা করেন । ওয়াভেল  বলেন — ভারতের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংবিধান সভা ডাকা হবে । কিন্তু জিন্নার আপসহীন অনড় মনােভাব অখণ্ড ভারতের শেষ আশাটুকুও ব্যর্থ করে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!