ইতিহাস

পুন্নাপ্রা ভায়লার আন্দোলন

Contents

পুন্নাপ্রা ভায়লার আন্দোলন

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কেরলের একটি স্মরণীয় গণসংগ্রাম হল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের পুন্নাপ্রা ভায়লার আন্দোলন বা পুন্নাপ্রা ভায়লার গণসংগ্রাম । এর মূলে ছিল একটি অর্থনৈতিক ও একটি রাজনৈতিক সমস্যা । পুন্নাপ্রা ভায়লার গণসংগ্রাম যে রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল তা ছিল স্বৈরাচারী সামন্ত প্রভুদের সীমাহীন শােষণের বিরুদ্ধে নিম্নশ্রেণির কৃষক ও শ্রমিকদের এক সরব প্রতিবাদ । 

পুন্নাপ্রা ভায়লার আন্দোলন এর কারণ

অর্থনৈতিক মন্দা : 

দক্ষিণের একটি স্বাধীন দেশীয় রাজ্য ছিল ত্রিবাঙ্কুর । রাজার স্বৈরাচার , সামন্তদের শােষণ , দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর খাদ্যাভাব এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সেখানকার কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষকে দুর্গতির শেষ সীমায় ঠেলে দিয়েছিল । 

রাজনৈতিক সমস্যা : 

অর্থনৈতিক সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল একটি রাজনৈতিক সমস্যাও । সেটি হল — ব্রিটিশের ভারত ত্যাগের সময় যে আসন্ন তা বুঝে এই রাজ্যের দেওয়ান ত্রিবাঙ্কুরকে স্বাধীন ভারতের বাইরে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাজ্য হিসেবে রাখার পরিকল্পনা করেন । এই পরিকল্পনার কথা ত্রিবাঙ্কুরের দেওয়ান রামস্বামী আয়ার গান্ধীজিকে জানালে, গান্ধীজি এর তীব্র প্রতিক্রিয়া হিসেবে জানান “ কোনাে রাজা যদি বলে  সে চিরদিন স্বাধীন ছিল ও ভবিষ্যতে থাকবে , তবে সেটা অত্যন্ত ভুল হবে , অশােভন হবে । ” দেওয়ানের এই উদ্যোগ জনমনে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে । কারণ স্বাভাবিকভাবেই তারা স্বাধীন ভারতের নাগরিক হতে আগ্রহী ছিল । 

সংগ্রামের সূচনা 

এইরকম পরিস্থিতিতে এই দুই সমস্যাকে একীভূত করে বামপন্থী নেতা কে.সি. জর্জটি.ভি. টমাসস্বাধীন ত্রিবাঙ্কুর ’ বিরােধী একটি প্রবল গণ আন্দোলন সৃষ্টি করেন । ধ্বনি ওঠে — দেওয়ানের শাসন খতম করাে ; স্বাধীন ত্রিবাঙ্কুর ও মার্কিন মডেলকে আরব সাগরের জলে ছুঁড়ে ফেলে দাও ।

পুন্নাপ্রা যুদ্ধ :

এখানকার শ্রমিক – কৃষকদের ওপর ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর থেকেই পুলিশি নির্যাতন শুরু হয় । ২২ অক্টোবর থেকে আলেপ্পে – শেরতলৈ অঞ্চলে শুরু হয় রাজনৈতিক ধর্মঘট । শেষ পর্যন্ত নির্যাতন অসহ্য হয়ে উঠলে ক্ষুব্ধ শ্রমিক – কৃষক পুন্নার পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে বসে । এতে কিছু পুলিশকর্মীসহ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক নিহত হয় । জারি হয় সামরিক আইন । অত্যাচার ওঠে চরমে ।

ভায়লারের যুদ্ধ :

আলেপ্পে – শেরতলৈ অঞ্চলের রাজনৈতিক ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ অক্টোবর সমগ্র রাজ্যে সামরিক আইন জারি করা হয় । গ্রামে গ্রামে পুলিশ – মিলিটারির নির্মম অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নির্যাতিত সাধারণ মানুষ জলঘেরা দ্বীপ ভায়লারের শিবিরে আশ্রয় নেয় । ২৭ অক্টোবর সেনাদল শিবিরবাসীর প্রতি অতর্কিত আক্রমণ চালায় । সেনাবাহিনীর আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে কাঠের বর্শা , পাথরের টুকরাে , রামদা প্রভৃতি সাধারণ অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে নামে প্রতিবাদী মানুষ । এই ক্ষণস্থায়ী অসম লড়াইয়ে মারা যায় ৮০০ র বেশি সংগ্রামী কৃষক ও শ্রমিক । তাই পুন্নাপ্রা ভায়লার আজও সংগ্রামী মানুষদের কাছে পবিত্র তীর্থক্ষেত্র । 

পুন্নাপ্রা ভায়লার আন্দোলনের পরিণতি

পুন্নাপ্রা ভায়লারের এই কৃষক সংগ্রাম ও গণহত্যা সারা ভারতে প্রবল প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে । জাতীয় কংগ্রেস এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানায় । শেষ পর্যন্ত ত্রিবাঙ্কুরের দেওয়ান রামস্বামী আয়ার ভারত ভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করলে ত্রিবাঙ্কুর স্বাধীন ভারতের অঙ্গীভূত হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!