জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড
Contents
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড
১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কর্তৃক প্রবর্তিত রাওলাট আইনের চরম পরিণতি ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড । পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ উদ্যানে এই কুখ্যাত আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আহূত হয় , যেখানে জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে ব্রিটিশের ঘাতক পুলিশ বাহিনী গুলি চালিয়ে শান্তিপূর্ণ জমায়েতকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে পরিণত করে । এই কুখ্যাত ঘটনাটি ইতিহাসে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত । ঐতিহাসিক টমসন ও গ্যারাটের মতে — জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘটনা সিপাহী বিদ্রোহের মতাে গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী ।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রতিক্রিয়া :
বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এমনিতেই পাঞ্জাবে খাদ্য , বস্ত্র , কেরােসিনের দাম বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত , নিম্নবিত্তসহ সকলকেই সরকারের প্রতি ক্ষুদ্ধ করে । তার ওপর যুদ্ধকালীন কর , স্বদেশি ব্যাংকের অবলুপ্তি এবং ‘ কোমাগাতামারু ’ জাহাজে শিখদের ওপর গুলি চালানাের ঘটনা জনমানসে ব্রিটিশের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে । পাঞ্জাবের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মাইকেল ও ডায়ার – এর স্বৈরাচারী শাসনে পাঞ্জাববাসী অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ।
দুই শীর্ষ নেতৃবৃন্দের গ্রেপ্তার :
পাঞ্জাবের অমৃতসরে হরতালের শান্তিপূর্ণ মিছিলে নেতৃত্বদানকালে ব্রিটিশ দুই শীর্ষ নেতা ড. সত্যপাল ও সৈফুদ্দিন কিচলুকে রাওলাট আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার করে বিনা বিচারে আটকে রাখলে ( ১৯১৯ খ্রি. ১০ এপ্রিল ) সমগ্র পাঞ্জাবে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । ওই দিনই দুপুরে দিল্লির অদূরে পালওয়াল স্টেশনে গান্ধীজিকে গ্রেফতার করা হলে লাহােরে জনতা হরতাল করে । অমৃতসরে এক শান্তিপূর্ণ শােভাযাত্রায় পুলিশ গুলি চালায় । এতে ২০ জন নিরীহ লােক মারা যায় , ১৫০ জন আহত হয় ।
হত্যাকাণ্ড
পাঞ্জাবের শাসন কর্তা মাইকেল ও ডায়ার এক নিষেধাজ্ঞা জারি করে সর্বত্র সভা সমিতি নিষিদ্ধ ঘােষণা করেন । এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি নিরস্ত্র মানুষ ১৩ এপ্রিল ( ১৯১৯ খ্রি. ) বিকালে অমৃতসর শহরের পূর্ব প্রান্তে জালিয়ানওয়ালাবাগ নামে এক উদ্যানে শান্তিপূর্ণভাবে এক সভায় সমবেত হয় । সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিনা প্ররােচনায় অমৃতসরের ভারপ্রাপ্ত সামরিক অধ্যক্ষ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে ব্রিটিশ সৈন্য ৫০ টি রাইফেল থেকে ১০ মিনিট ধরে গুলিবর্ষণ করে । যদিও সরকারি মতে নিহতের সংখ্যা ৩৭৯ এবং আহতের সংখ্যা ১২০০ জন , কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এতে দু – হাজারেরও বেশি নরনারী হতাহত হয় । এর ওপর সান্ধ্য আইন জারি করা হয় যাতে আহতদের কাছে নিকটজনেরা পৌঁছােতে না পারে ।
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড বিভিন্ন ব্যক্তির প্রতিক্রিয়া
1. কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তাঁর রাজসম্মান নাইটহুড ঘৃণাভরে বর্জন করেন ।
2. ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মন্তব্য করেন — জালিয়ানওয়ালাবাগের শােচনীয় ঘটনার মতাে কোনাে ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে আর কখনও ঘটেছে বলে আমার মনে হয় না ।
3. রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে , জালিয়ানওয়ালাবাগ সমগ্র ভারতে মহাযুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করে ।
4. গান্ধীজি ‘ ইয়ং ইন্ডিয়া ’ পত্রিকায় লেখেন — এই শয়তান সরকারের সংশােধন অসম্ভব , একে ধ্বংস করতেই হবে ( ‘ This satanic government cannot be mended , it must be ended ‘ )।