রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া

Contents

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া

রাওলাট আইন ( ১৯১৯ খ্রি. ) ভারতের বিপ্লবী কার্যকলাপ ও রাজনৈতিক আন্দোলনগুলি দমন করার লক্ষ্যে ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট সিডিশন কমিটি ( রাওলাট কমিটি ) গঠিত হয় । বিচারপতি রাওলাটের নাম অনুসারে এই কমিটি রাওলাট কমিটি এবং এই কমিটির সুপারিশগুলি ‘ রাওলাট আইন ’ নামে পরিচিত হয় । রাওলাট আইনের আসল নাম ছিল ‘ দ্য অ্যানার্জিক্যাল অ্যান্ড রেভল্যুশনারি অ্যাক্ট ’ ( The Anarchical and Revolutionary Act ) । 

রাওলাট আইন প্রণয়নের কারণ 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার দ্বারা ব্রিটিশ সরকার জনগণের প্রতি তােষণ নীতি গ্রহণ করে । পাশাপাশি এই একই সময়ে ব্রিটিশ সরকার জনগণের প্রতি দমননীতিও গ্রহণ করে । রাওলাট আইন ছিল একটি দমনমূলক আইন এবং এর উদ্দেশ্য ছিল ভারতে সকল রাজনৈতিক আন্দোলন দমন করা । এই আইন প্রবর্তনের পশ্চাতে বেশ কয়েকটি কারণ ছিল । 

ভারত রক্ষা আইনের উদ্দেশ্যে : 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সরকার ‘ ভারত রক্ষা আইন ’ নামে এক প্রতিক্রিয়াশীল আইন প্রবর্তন করে । যুদ্ধের অবসানে এই আইনের মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় এ ধরনের একটি আইনের প্রয়ােজন হয় । 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি , অনাবৃষ্টি , বেকারত্ব , রােগ – মহামারির কারণে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে । 

মুসলিম সমাজের অসন্তোষ : 

তুরস্কের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের আচরণে মুসলিম সমাজ প্রবল ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে । এ ছাড়া , ব্রিটিশ ডােমিনিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের প্রতি শ্বেতাঙ্গ শাসকদের আচরণ ভারতীয়দের মধ্যে প্রবল অসন্তোষের সূচনা করে । 

বিপ্লববাদ দমনে : 

এ সময়েই আবার ভারতে বিপ্লববাদ মাথা চাড়া দেয় । পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ভারতে নতুন একটি প্রতিক্রিয়াশীল আইনের প্রয়ােজন হয় । 

রাওলাট আইনের প্রতিক্রিয়া

রাওলাট আইন জারি হওয়ার পর ভারতবাসী এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় । 

জাতীয় নেতৃবৃন্দের সমালােচনা :

দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ রাওলাট আইনের সমালােচনায় মুখর হন । গান্ধীজি  লিখলেন — যে সরকার শান্তির সময় এই ধরনের নির্মম আইনের আশ্রয় নিয়েছে সেই সরকার কখনােই নিজেকে ‘ সভ্য সরকার ’ বলে দাবি করতে পারে না । জিন্না থেকে শুরু করে সকল জাতীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এই আইনটির বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন । শ্রীনিবাস শাস্ত্রী  লিখেছেন — এই আইন ভালাে এবং মন্দকে সমান ভাবে আঘাত করবে ( ‘ It would hurt the good as well as the bad ‘ ) । 

জাতীয় আন্দোলনের মাধ্যমে : 

রাওলাট আইন ভারতবাসীকে ভীরুতার বদলে নতুন করে ব্রিটিশ বিরােধী জাতীয় আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে । এই আইনকে কেন্দ্র করেই সর্বভারতীয় প্রেক্ষাপটে শুরু হয় গান্ধীজির নেতৃত্বে একের পর এক অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলন । 

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড : 

এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ এপ্রিল পাঞ্জাবে ৩৭৯ জন নিহত হন জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডে । এই আইনের প্রতিবাদ করে ভারত সচিব মন্টেগু বড়োলাটকে লিখেছিলেন — পৃথিবীর প্যাটল্যান্ডদের বা ও’ডায়ারদের কোনাে লােককে বিনা বিচারে বন্দি করার সুযােগ করে দিতে আমি ঘৃণা করি । ঐতিহাসিক এইচ. এইচ. ডডওয়েলের  মতে — এক সংকটময় সময়ে কুখ্যাত রাওলাট আইন ভারতবর্ষে সর্বজনীন প্রতিরােধ গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল ( ‘ At this crisis there come the notorious Rawlatt Acts which evoked universal opposition in India ’ )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!