মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের উদ্দেশ্য ও ত্রুটি
Contents
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের উদ্দেশ্য ও ত্রুটি
মর্লে মিন্টো শাসন সংস্কার ( ১৯০৯ খ্রি. ) ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ আর একটি শাসন সংস্কার আইন প্রবর্তনের প্রয়ােজনীয়তা অনুভব করে । এই প্রয়ােজনের তাগিদেই ভারত সচিব এডুইন স্ট্যানলি মন্টেগু ও ভাইসরয় লর্ড চেমসফোর্ড মিলিতভাবে এক আইন পাস করান , যা মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ( ১৯১৯ খ্রি. ) নামে পরিচিত । অধ্যাপক জি. এন. সিং – এর মতে — মন্ট-ফোর্ড আইনে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার শর্ত গুলি ছিল স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার প্রথম ধাপ ( ‘ They constituted the first step on the road to self – government ‘ ) ।
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের উদ্দেশ্য
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে স্বায়ত্তশাসন জনিত ক্ষোভ যাতে বিস্ফোরক রূপ না নেয় তার দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় ভারতীয়দের নামমাত্র অংশগ্রহণ করিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে স্তব্ধ করা । এই আইনে ঘােষিত লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলি ছিল এইরকম —
1. ভারতীয় শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন বিভাগগুলিতে অর্থাৎ বিচার বিভাগ , আইন বিভাগ , শাসন বিভাগে ভারতীয়দের অন্তর্ভুক্ত করা ।
2. দায়িত্বশীল এক সরকার গঠনের লক্ষ্যে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসন মূলক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও শক্তিশালী করা ।
3. সরকারকে আরও দায়িত্ব সচেতন ও কর্তব্যপরায়ণ করে তােলার লক্ষ্যে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সেগুলি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে স্থির করা ।
4. প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে ভারতীয়দের আরও বেশি করে দায়িত্ব প্রদান করা , যাতে ভারতবাসী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় ।
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনের ত্রুটি
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতবাসীর আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয় । কারণ এই আইনে বহু ত্রুটি ছিল —
বড়লাটের স্বৈরাচারিতা :
এই আইনের মাধ্যমে বড়ােলাট ও তার কার্যনির্বাহক সভার হাতে সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করা হয় । বড়ােলাট তার কাজের জন্য ভারতীয় আইন সভার কাছে নয় ইংল্যান্ডের ভারত সচিবের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিলেন । তাই এই নতুন আইনে পূর্বেকার কেন্দ্রীভূত সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনই বহাল থাকে ।
সার্বজনীন ভোটাধিকারের অস্বীকৃতি :
এই আইনে সর্বসাধারণের ভােটাধিকার স্বীকৃতি পায়নি । মুষ্টিমেয় বিত্তবান ব্যক্তির মধ্যেই ভােটাধিকার সীমাবদ্ধ ছিল ।
পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি :
মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে মুসলিমদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদেরও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার অধিকার দান করা হয় ।