গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
Contents
গান্ধীজীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের গুরুত্ব বা তাৎপর্য
‘ সত্যাগ্রহ ‘ এই শব্দটি ‘ সত্য ’ এবং ‘ আগ্রহ ‘— দুটি শব্দের মিলিত রূপ । এর আসল ভিত্তি ‘ সত্য ’ ও ‘ অহিংসা ’ । এর লক্ষ্য হল আত্মনিগ্রহ সহ্য করে অহিংস পদ্ধতি মেনে প্রতিবাদ , বিদ্রোহ বা আন্দোলন করে বিপক্ষের চিত্ত জয় করা । মুনি ঋষিদের প্রদর্শিত পথেই গড়ে ওঠা এক আদর্শ হল সত্যাগ্রহ । গান্ধীজির মতে — শত্রুর প্রতি যে ব্যক্তি ঘৃণা বা বিদ্বেষ পােষণ করে না এবং কোনােভাবে শত্রুকে আঘাতও করে না , সেই ব্যক্তিকেই যথার্থ সত্যাগ্রহী বলা যায় । গান্ধীজি আরও বলেছেন ব্রিটিশ সরকার যে শক্তিশালী সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই । তবে সত্যাগ্রহ যে সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী তাতেও আমার সন্দেহ নেই ( ‘ I have no doubt that the British Government is powerful Government , but I have no doubt also that Satyagraha is a sovereign remedy ’ )।
গান্ধীজি 一 1. বিহারের চম্পারনে নীল চাষিদের পক্ষে ;
2. গুজরাতের আমেদাবাদে সুতাকল শ্রমিকদের পক্ষে এবং
3. গুজরাতের খেদা – য় কৃষকদের পক্ষে গড়ে তােলা সত্যাগ্রহ আন্দোলনগুলিতে নেতৃত্ব দেন । এইসব আন্দোলনগুলি ছিল নানা কারণে তাৎপর্য পূর্ণ ।
ব্রিটিশ শাসকদের সম্পর্কে ভীতি দূর
ইংরেজ শাসক ও তাঁদের সহযােগী নীলকর সাহেব ও জমিদার মহাজন শ্রেণি সম্পর্কে যে ভয় মিশ্রিত সমীহভাব ভারতীয় কৃষক – শ্রমিককে আবদ্ধ করে রেখেছিল , এই আন্দোলনগুলি তা থেকে মুক্ত হতে তাদের ভীষণভাবে সাহস জোগায় ।
রাজনৈতিক আন্দোলনের নতুন কৌশল
এই আঞ্চলিক আন্দোলনগুলির মাধ্যমেই ভারতীয় রাজনীতিতে আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নতুন ধরনের পদ্ধতি ও কৌশলের উদ্ভাবন হয় যা গান্ধীজির সত্যাগ্রহ নীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল ।
গান্ধীজি বিদ্রোহী ভারতের প্রতীক
ভারতের অসংখ্য হতদরিদ্র কৃষক – শ্রমিক – সাধারণ মানুষ গান্ধীজির মধ্যে যেন নিজেদের এক পরমাত্মীয়কেই খুঁজে পায় , যিনি তাদের দুঃখ লাঘবের জন্য জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে প্রস্তুত । এর পরিণতিতে অচিরেই গান্ধীজি দরিদ্র , জাতীয়তাবাদী ও বিদ্রোহী ভারতের প্রতীক হয়ে ওঠেন ।
সকলের কাছে গান্ধীজীর গ্রহণযোগ্যতা
ধনী – দরিদ্র , বিভিন্ন জাতি – বর্ণ – ধর্ম , আঞ্চলিকতা – প্রাদেশিকতা জাতীয়তা , শাসিত ও শাসক — সকলের সঙ্গেই সংযােগের বাহন হিসেবে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজির আবির্ভাব এই আন্দোলনগুলির মাধ্যমেই ঘােষিত হয় ।
মূল্যায়ন
গান্ধীজি মনে করতেন সত্য ও অহিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই সত্যাগ্রহের নীতি আসলে আত্মার শক্তি বা প্রেমের শক্তি । প্রথম তিন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে গান্ধীজি প্রেমের দ্বারা ঘৃণা , সত্যের দ্বারা অসত্যকে , কষ্টসহ্যের দ্বারা হিংসাকে জয় করার নীতি ঘােষণা করেন ( ‘ Conquer hate by love , untruth by truth , violence by suffering ‘ ) ।