খেদা সত্যাগ্রহ কী

Contents

খেদা সত্যাগ্রহ কী

ভারতে গান্ধীজির তৃতীয় অহিংস আন্দোলন ছিল গুজরাতের খেদা বা খেড়া বা কইরা জেলার খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলন । এই আন্দোলনে গান্ধীজি জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যতের শীর্ষ নেতা হওয়ার যােগ্যতা ও দক্ষতা প্রমাণ করেন । ড. জুডিথ ব্রাউনের  মতে — কোনাে রাজনৈতিক দল বা গােষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত না হয়েও খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে রাজনীতিবিদ রূপে গান্ধীজি তাঁর দক্ষতা প্রমাণ করেন । 

খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কারণ বা পটভূমি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ :

একাধিকবার দুর্ভিক্ষ ও প্লেগ রােগ দেখা দিলে এখানকার মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরমে পৌছােয় । কিন্তু সরকারি তরফে এই দুঃখ দুর্দশা মােচনের জন্য কোনােরকম সাহায্য না পাওয়ায় ব্রিটিশ বিরােধী ক্ষোভ চরমে পৌছােয় । 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব : 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে জামাকাপড় , ওষুধ , নুন , চিনি , কেরােসিন ইত্যাদি নিত্য প্রয়ােজনীয় জিনিসের দাম প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায় । তখন বাধ্য হয়ে কৃষকরা সরকারের কাছে খাজনা মকুবের দাবি জানায় । কিন্তু ব্রিটিশ সরকার খাজনা মকুব করার বদলে নানাভারে কৃষকদের উৎপীড়ন করতে শুরু করে । 

রাজস্ব আদায়ের কড়াকড়ি : 

১৯১৮ খ্রি. গুজরাতের খেদা জেলায় অজন্মাজনিত কারণে কৃষিজ উৎপাদন ব্যাহত হয় । তা সত্ত্বেও রাজস্ব আদায়ের জন্য ব্রিটিশ বিভিন্নভাবে খেদার কৃষকদের ওপর উৎপীড়ন চালালে তারা ক্ষুদ্ধ হয় । 

গান্ধীজীর ভূমিকা

গান্ধীজি খেদা জেলায় অসহায় কৃষকদের দুর্দশার কথা শুনে ইন্দুলাল যাজ্ঞিক ও বল্লভভাই প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান । তিনি বােম্বাই সরকারের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন । কিন্তু সরকার গান্ধীজির আবেদনে সাড়া না দিলে তিনি কৃষকদের কর দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেন । মােহনলাল পাণ্ডার মতাে স্থানীয় নেতৃত্বে খাজনা বন্ধ আন্দোলনের প্রসার ঘটে । গান্ধীজির ডাকে সাড়া দিয়ে সমস্ত কৃষক খাজনা না দেওয়ার শপথ নেয় । গুজরাতের জনজীবনে সত্যাগ্রহ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে । রমেশচন্দ্র মজুমদারের  মতে — খেদা আন্দোলন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের চরিত্রের রূপান্তর ঘটায় । 

খেদা সত্যাগ্রহ আন্দোলনের গুরুত্ব

ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে খেদা বা কইরা সত্যাগ্রহের গুরুত্ব অনস্বীকার্য । 

সত্যাগ্রহী গণ আন্দোলনের নিদর্শনে : 

নিরীহ , শান্ত গ্রামবাসীরা এই সত্যাগ্রহের পথে গণ আন্দোলন গড়ে তােলে । এই সত্যাগ্রহের সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে আপামর ভারতবাসী । 

নেতৃত্বের দক্ষতায় : 

রাজনীতিবিদ হিসেবে গান্ধীজি যে কতখানি দক্ষ তা এই সত্যাগ্রহের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় । 

যােগসূত্র রক্ষায় : 

শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ও গ্রামের নিরক্ষর কৃষকদের মধ্যে যােগসূত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে এই সত্যাগ্রহ যে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছিল সে বিষয়ে কোনাে সন্দেহ নেই । 

খাজনা আদায় রীতির সংশােধন : 

আন্দোলনের তীব্রতায় ব্রিটিশ বাধ্য হয়ে ঘােষণা করে যে এখন থেকে যারা খাজনা দিতে সক্ষম একমাত্র তাদের থেকেই খাজনা আদায় করা হবে । এ ছাড়াও ব্রিটিশ কৃষকদের স্থাবর , অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করা বন্ধ করে । 

মূল্যায়ন 

খেদা সত্যাগ্রহের মাধ্যমে গান্ধীজি কৃষক সমাজের সমস্যাকে ভারতীয় জাতীয় রাজনীতির প্রাঙ্গণে উত্থাপন করেন । আন্দোলনের তীব্রতায় ব্রিটিশ খাজনা আদায় রীতি সংশােধনে বাধ্য হয় । ড. সুমিত সরকারের  মতে — প্রকৃত গান্ধীবাদী কৃষক সত্যাগ্রহ প্রথম হয় গুজরাতের খেদায় ( ‘ Kheda , the first real Gandhian peasant satyagraha in India …..’ )।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!