ইতিহাস

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কী

Contents

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ কী

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গুজরাতের আমেদাবাদে গুজরাতি বস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সুতাকলের শ্রমিকদের যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল , তা আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলন ( ফেব্রুয়ারি , ১৯১৮ খ্রি. ) নামে পরিচিত । এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মধ্যে দিয়ে গান্ধীজি শ্রমিকশ্রেণীর সঙ্গে প্রথম সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তােলেন । এখানেই তিনি সর্বপ্রথম অনশন ধর্মঘটের হাতিয়ার প্রয়ােগ করেন । এ প্রসঙ্গে ‘ ইয়ং ইন্ডিয়া ’ পত্রিকায় তিনি লেখেন — চোখ যেমন বহির্দৃষ্টির জন্য , তেমনি ভাবে উপবাস অন্তর্দৃষ্টির জন্য ( ‘ What the eyes are for the outer world , fasts are for the inner ‘ ) ‌।

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কারণ

গুজরাতের আমেদাবাদ ‘ভারতের ম্যানচেস্টার ’ নামে পরিচিত ছিল । এখানে গুজরাতিরা বহু কাপড়ের কল গড়ে তুলে বস্ত্র শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছিল । মিল মালিকদের মুনাফা প্রচুর হলেও শ্রমিকদের উন্নতি প্রায় কিছুই হয়নি । 

বােনাস সমস্যা : 

১৯১৮ সাল নাগাদ আমেদাবাদে প্লেগ রােগ মহামারির আকার নিলে বহু শ্রমিক কাজ ছাড়তে উদ্যত হওয়ায় , ব্রিটিশ সরকার শ্রমিকদের কারখানার কাজে উৎসাহিত করার জন্য প্লেগ বােনাস চালু করে । কিন্তু প্লেগ মহামারির প্রকোপ ধীরে ধীরে কমে আসলে শ্রমিকদের প্রাপ্য এই বােনাস বন্ধ করে দিলে শ্রমিকরা বিক্ষুদ্ধ হয় । 

মজুরি সমস্যা : 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা শতকরা ৫০ ভাগ মজুরি বৃদ্ধির দাবি জানালে মালিকপক্ষ তা নস্যাৎ করে দেয় । এর ফলে শ্রমিকশ্রেণী আন্দোলন শুরু করে ।

গান্ধীজির ভূমিকা

আমেদাবাদ শ্রমিক আন্দোলনে গান্ধীজি নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন । মিল মালিকদের কাছে গান্ধীজি মজুরি বাড়ানাের দাবি করেন , কিন্তু এই দাবি ব্যর্থ হয় । মিল মালিকরা একজোট হয়ে লকআউট ঘােষণা করে । দু সপ্তাহ এভাবে চলার পর মিল মালিকদের পক্ষ থেকে মজুরদের জন্য সামান্য বেতন বৃদ্ধির কথা ঘােষণা করা হয় । কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে গান্ধীজি শ্রমিক মজুরদের নিয়ে উপযুক্ত বেতন বৃদ্ধির দাবি জানান এবং অবশেষে শুরু করেন ভারতে তাঁর প্রথম অনশন । 

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের পরিণতি 

গান্ধীজির অনশনের চতুর্থ দিনের মাথায় মালিক পক্ষ ৩৫ ভাগ মজুরি বৃদ্ধি করতে সম্মত হন । এর ফলে সফল হয় আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলন । 

আমেদাবাদ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের গুরুত্ব

শ্রমিক নেতা হিসেবে : 

আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে গান্ধীজি প্রথম শ্রমিকশ্রেণীর প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন । 

সার্বিক পরিচিতি : 

স্বল্প মেয়াদি এই আন্দোলনে গুজরাতে বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে গান্ধীজির পরিচয় ঘটে । গ্রামাঞ্চল ছাড়িয়ে এই প্রথম শহরাঞ্চলেও গান্ধীজির নিজস্ব রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে ওঠে । 

অনশন ধর্মঘটের নিদর্শন স্থাপন : 

অনশন ধর্মঘটকে দাবি আদায়ের হাতিয়ার করে যে নিদর্শন তিনি আমেদাবাদে তৈরি করেন তা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে এক অমােঘ রাজনৈতিক অস্ত্র হয়ে ওঠে । 

শ্রমিক ও মালিক শ্রেণির আস্থা অর্জন :

এই আন্দোলনের অহিংস নীতির মাধ্যমেই গান্ধীজি শ্রমিক – মালিক দু পক্ষেরই আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন । 

মূল্যায়ন 

আমেদাবাদের শ্রমিক আন্দোলন গান্ধীজির রাজনৈতিক তৎপরতার দ্বিতীয় সাফল্য । ড. অমলেশ ত্রিপাঠী  বলেছেন — গান্ধীজি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে শ্রমিকদের ব্যবহার করেননি বা মালিকপক্ষের কোনােরকম ক্ষতি করে শ্রমিকদের অন্যায় দাবিগুলিকে সমর্থন করেননি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!