চম্পারন সত্যাগ্রহ
Contents
চম্পারন সত্যাগ্রহ
উনিশ শতকের ছয়ের দশক থেকেই বিহারের চম্পারনে নীলচাষকে কেন্দ্র করে নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অসন্তোষ জমতে থাকে । এই পরিস্থিতিতে গান্ধীজির নেতৃত্বে ১৯১৭ সালে ভারতের প্রথম সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু হয় । এখানকার নীলকর সাহেবরা তিন কাঠিয়া ব্যবস্থার ( কৃষকের মােট জমির ৩/২০ অংশে অর্থাৎ প্রতি বিঘা বা ২০ কাঠা জমির ৩ কাঠায় নীলচাষ ) প্রয়ােগ ঘটিয়ে কৃষকদের শােষণ করতেন । তাদের ওপর জোর করে বিভিন্ন খাজনা ও কর চাপানাে হত । ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে কৃত্রিম নীলের প্রচলন ঘটলে নীলচাষ ক্ষতির সম্মুখীন হয় । ফলে চাষিরা আন্দোলনে নামে ।
গান্ধীজির নেতৃত্ব
গান্ধীজি তাঁর সত্যাগ্রহ অস্ত্র প্রথম প্রয়ােগ করার সুযােগ পেয়েছিলেন চম্পারনে । তিনি মজহরুল হক , বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ , ব্রজকিশাের , মহাদেব দেশাই , জে. বি. কৃপালনী প্রমুখ সহকর্মীকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন । নীলকরদের চরম অত্যাচারের হাত থেকে চাষিদের রক্ষা করার জন্য গান্ধীজি সরকারি হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন । শুধু তাই নয় তিনি কৃষকদের অত্যাচারিত হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেন । জেলায় শান্তি বিঘ্নিত হবে এই শঙ্কায় চম্পারনের কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গান্ধীজিকে জেলা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন । কিন্তু ওই আদেশ অমান্য করে গান্ধীজি মােতিহারি পর্যন্ত অগ্রসর হলে গ্রেফতার হন । গান্ধীজির ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রবীন্দ্রনাথ লেখেন , “ এতদিনে সত্য এসে দাঁড়াল , বই থেকে একটা উদ্ধৃতি মাত্র নয় । ”
চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের গুরুত্ব
চম্পারনে গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আন্দোলন বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে গান্ধীজির দিক থেকে 一
সত্যাগ্রহ আদর্শের সাফল্য :
গান্ধীজির সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রথম সফল রূপায়ণ চম্পারন কৃষক আন্দোলন । চম্পারনে নেতৃত্বদানের মধ্যে দিয়ে গান্ধীজি অনুভব করেছিলেন যে , ভারতবাসীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে একমাত্র সত্যাগ্রহ আদর্শ ।
কৃষক শ্রেণীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন :
নীল চাষিদের পাশে দাঁড়িয়ে গান্ধীজি সর্বপ্রথম কৃষক শ্রেণীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তােলেন ।
গ্রামীণ জীবন ও সমস্যার সমাধান :
চম্পারনের বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে তিনি গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করেন । গ্রামীণ সমস্যাগুলি সমাধানের লক্ষ্যে তিনি যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা , শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ।
ব্রিটিশের দিক থেকে :
গান্ধীজির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলনের তীব্রতার জেরে ব্রিটিশ বাধ্য হয়ে ‘ চম্পারন অনুসন্ধান কমিটি ’ ( ১৯১৭ খ্রি. ১০ জুন ) ( Champaran Agrarian Enquiry Committee ) গঠন করতে । এই কমিটির সুপারিশক্রমে ‘ চম্পারন কৃষি বিল ’ পাস করিয়ে ㅡ
( i ) ‘ তিন কাঠিয়া ’ প্রথার অবলুপ্তি ঘটানাে হয় ,
( ii ) কৃষকদের ওপর নির্ধারিত খাজনার হার ২০-২৬ শতাংশ কমানাে হয় ।
মূল্যায়ন
গান্ধীজির নেতৃত্বে চম্পারন কৃষক সত্যাগ্রহ আন্দোলন এক উল্লেখযােগ্য অধ্যায় । জুডিথ ব্রাউন বলেছেন — এই আন্দোলনের মাধ্যমেই ভারতীয় কৃষক সমাজের সঙ্গে গান্ধীজির প্রথম যােগসূত্র গড়ে ওঠে । ফ্রান্সের গান্ধী গবেষক জ্যা পুচপেডস বলেছেন — চম্পারন সত্যাগ্রহ আন্দোলন নেতারূপে গান্ধীজির গ্রহণযােগ্যতাকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছিল ।