মহাত্মা গান্ধী প্রবর্তিত সত্যাগ্রহের আদর্শ কী
Contents
মহাত্মা গান্ধী প্রবর্তিত সত্যাগ্রহের আদর্শ কী
গুজরাতের জৈনধর্মীয় পরিবেশে জন্ম এবং বৈষ্ণব পরিবারে বেড়ে ওঠায় গান্ধীজি সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রতি অনুরক্ত হন । এ ছাড়াও শ্রীমদ্ভাগবত গীতা , বাইবেল , এডউইন আর্নল্ড – এর ‘ Light of Asia ‘ ( বুদ্ধদেবের জীবনী ) , ব্রিটিশ লেখক রাসকিনের ‘ Unto the Last ‘ ( শেষ পর্যন্ত ) , রুশ লেখক লিও টলস্টয়ের ‘ The Kingdom of God ‘ ( ঈশ্বরের রাজ্য ) , থরাের ‘ Civil Disobedience ‘ ইত্যাদি রচনা ও গ্রন্থ পাঠ করে গান্ধীজির মনে সত্যাগ্রহ আদর্শ গড়ে ওঠে ।
সত্যাগ্রহ আদর্শের মূল ভিত্তি
‘ সত্য ’ ও ‘ আগ্রহ ‘ এই দুই শব্দ মিলিয়ে ‘ সত্যাগ্রহ ‘ শব্দটি গঠিত । সত্য ও অহিংসার ওপর প্রতিষ্ঠিত এই আদর্শ ছিল ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজি প্রবর্তিত এক অভিনব কৌশল । গান্ধীজি মনে করতেন বিরােধী পক্ষের সঙ্গে লড়াইয়ে অহিংস অসহযােগ ও আইন অমান্য হল সত্যাগ্রহ আদর্শের দুই মূল ধারা । গান্ধীজি বলেন— “ রােজ সকালে উঠে আমাদের এই বলে শপথ নিতে হবে যে , আমি বিশ্বে কাউকে ভয় করব । শুধু ভয় পাব ঈশ্বরকে । ”
সত্যাগ্রহ আদর্শের স্বরূপ
গান্ধীজির মতে , সত্যাগ্রহ হল ‘ আত্মার শক্তি ’ ( ‘ Soul force ‘ ) বা ‘ প্রেমের শক্তি ’ ( ‘ Love force ‘ ) । সত্যাগ্রহীর কষ্ট স্বীকার করার ক্ষমতার কোনাে সীমা নেই , তাই সত্যাগ্রহে পরাজয় বলেও কিছু থাকে না । শান্ত ও নিরস্ত্রভাবে পরিচালিত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামই ছিল সত্যাগ্রহ । গান্ধীজির মতে — সত্যাগ্রহ এক মহান মানব ধর্ম এবং এটি একান্তই সবলের ধর্ম । সত্যাগ্রহের স্বরূপ বর্ণনা করতে গিয়ে ‘ ইয়ং ইন্ডিয়া ‘ পত্রিকাতে গান্ধীজি লেখেন — সত্যাগ্রহ হল চূড়ান্ত আত্মবিলােপ , মহত্তম বিনয় , সর্বোত্তম ধৈর্য ও উজ্জ্বলতম বিশ্বাস । সত্যাগ্রহ নিজেই নিজের পুরস্কার ।
সত্যাগ্রহ আদর্শের উদ্দেশ্য
আত্মকষ্টের দ্বারা এবং অহিংস পদ্ধতিতে প্রতিপক্ষের মন জয় করা বা তার অন্তরের শুভবুদ্ধিকে জাগানােই হল সত্যাগ্রহের উদ্দেশ্য । ডােমিনিক ল্যাপিয়ের ‘ Freedom at Midnight ‘- এ লিখেছেন — গান্ধীজি জাতির সামনে সত্যাগ্রহের মূল দুটি লক্ষ্য তুলে ধরেন , যথা — স্বরাজ অর্জন এবং দেশের সকল শ্রেণির আর্থিক ও সামাজিক মুক্তি । সত্যাগ্রহীর লক্ষ্য অন্যায়কারীর মতকে পরিবর্তন করা , তাকে পীড়ন করা নয় ।
সত্যাগ্রহ এর বিধি ও যোগ্যতা
ভয়কে জয় করে প্রতিপক্ষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য বারবার চেষ্টা করাই সত্যাগ্রহের মূল বিধি । সত্যাগ্রহ আদর্শে বিশ্বাসকারীকে সদা মানসিক লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে ও শান্তিপ্রতিষ্ঠার জন্য সমানভাবেই উদগ্রীব থাকতে হবে । সত্যাগ্রহ আদর্শ অনুসরণকারীকে —
1. সত্য ও অহিংসা আদর্শ এবং ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখতে হবে ।
2. পবিত্রভাবে জীবনযাপন করতে হবে , এমনকি প্রয়ােজনে আদর্শ রক্ষার জন্য নিজের জীবন ও সম্পদও বিসর্জন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ও ইচ্ছুক থাকতে হবে ।
3. খাদিবস্ত্র পরিহিত হয়ে সকল নেশা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে ।
উপসংহার
গান্ধীজি সত্যাগ্রহের এই আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমেই ভারতের স্বাধীনতা আনতে চেয়েছিলেন । এ প্রসঙ্গে হরিজন পত্রিকায় তিনি লেখেন — আমার উপদেশ হল , প্রথমেও সত্যাগ্রহ , শেষেও সত্যাগ্রহ । স্বাধীনতার অন্য কোনাে ভালাে রাস্তা নেই ।