নেহেরু রিপোর্ট কাকে বলে
Contents
নেহেরু রিপোর্ট কাকে বলে

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি জন সাইমন বােম্বাইতে এলে ভারতবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে ভারতবাসীর এই বিক্ষোভ দেখে ভারত সচিব বার্কেনহেড ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন , সংবিধান রচনা করার যােগ্যতা ভারতীয়দের নেই । তাই ভারতীয়রা এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দেখাতে চেয়েছিলেন যে তাঁরা সংবিধান রচনা করার ক্ষমতা রাখেন । ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে এক সংবিধান প্রণয়ন কমিটি তৈরি করে । মতিলাল সংবিধানের খসড়া পেশ করেন জাতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্ণৌ অধিবেশনে ( ১৯২৮ খ্রি. আগস্ট ) , যা নেহেরু রিপোর্ট নামে পরিচিত । এই রিপাের্টের খসড়ায় ভারতের জন্য ডোমিনিয়ান স্ট্যাটাস বা স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানানাে হয় ।
সংবিধান কমিটি গঠন
দিল্লিতে ড. এম. এ. আনসারির সভাপতিত্বে এক সর্বদলীয় সম্মেলন ডাকা হয় , যেখানে ২৯ টি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতিনিধিবর্গ যােগ দেয় । ওই সম্মেলনে মতিলাল নেহরুর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটির ওপর ভারতের সংবিধান রচনার জন্য মূলনীতিগুলির খসড়া তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ।
কমিটির বিভিন্ন সদস্য
এই কমিটির সম্পাদক হন তরুণ নেতা জওহরলাল নেহরু । বিভিন্ন দল থেকে নির্বাচিত এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন কংগ্রেস থেকে সুভাষ চন্দ্র বসু , মুসলিম লীগ থেকে আলি ইমাম ও সাহেব কুরেশি , হিন্দু মহাসভা থেকে এম. এস. অ্যানে ও এম. আর. জয়াকার , শিখ সম্প্রদায়ের সর্দার মঙ্গল সিং প্রমুখ ।
নেহেরু রিপোর্ট এর শর্ত বা ধারা
সুদীর্ঘ ২৫ টি বৈঠক বসার পর সকল দলের গ্রহণযােগ্য এক সংবিধান তৈরি হয় । এর খসড়ার উল্লেখযােগ্য কয়েকটি ধারা ছিল —
1. ব্রিটেনের অন্যান্য ডােমিনিয়ানের মতােই ভারতেও এক সার্বভৌম পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে । কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট হতে হবে ।
2. ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্রের রূপ দিতে হবে যার প্রধান ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্রীয় আইনসভার হাতে ।
3. ভারতকে পূর্ণ ঔপনিবেশিক স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা দিতে হবে ।
4. সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্ম , ভাষা ও সংস্কৃতির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে হবে ।
5. ভারতবাসীর মৌলিক অধিকারগুলি সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব নিতে হবে ।
6. প্রদেশগুলিতে এক – কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গড়ে তুলতে হবে ।
7. ভাষাভিত্তিক প্রদেশ গঠন করতে হবে ।
8. প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে ( পাঞ্জাব ও বাংলা বাদে ) জনসংখ্যার ভিত্তিতে সংখ্যালঘুদের ১০ বছরের জন্য আসন সংরক্ষিত রাখতে হবে ।
9. কেন্দ্র ও প্রদেশগুলিতে দায়িত্বশীল সরকার গড়ে তুলতে হবে ।
10. সাম্প্রদায়িক ভােটাধিকারের নীতি ত্যাগ করতে হবে ।
নেহেরু রিপোর্ট এর প্রতিক্রিয়া
নেহরু রিপাের্ট পেশ হওয়ার পর মহম্মদ আলি জিন্না ওই রিপাের্টের কয়েকটি সংশােধনী দাবি করেন । হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ নেহরু রিপাের্টের তীব্র বিরােধিতা করে । কিন্তু উদারপন্থী নেতা তেজবাহাদুর সপু এবং হিন্দু মহাসভার নেতা এম. আর. জয়াকারের প্রতিবাদে সেই দাবি অগ্রাহ্য করা হয় । ঐতিহাসিক তারাচাঁদ নেহরু রিপাের্টের মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেছেন — নেহরু রিপাের্টটি ছিল জন্মলগ্নেই মৃত এবং একবছর অতিক্রান্ত না হতেই রাভী নদীর জলে তাকে বিসর্জন দেওয়া হয় ।